আলফা আরজু
স্বামী-স্ত্রী, প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কে অনেক কারণেই ঘুণ ধরতে পারে। সেজন্য এ সম্পর্কগুলোর যে কেউই (নারী-পুরুষ) ‘দম বন্ধ’ করা সম্পর্ক থেকে বের হয়ে অন্য সম্পর্কে জড়াতে পারেন। বিবাহিত একটা সম্পর্কের মধ্য থেকে কেউ যদি গোপনে অন্য নারী-পুরুষের সাথে সম্পর্ক করেন, আপাতদৃষ্টিতে তাকেই পরকীয়া মনে করা হয়।
আমাদের দেশে এই পরকীয়া সবসময় অন্য পক্ষকে ‘প্রতারণা’ দিয়ে শুরু হয়। ধরেন আপনি স্বামী-স্ত্রী-পার্টনারের সাথে আপনার অনেক বড় অথবা তুচ্ছ কারণে বনিবনা হচ্ছে না। কিংবা যাকে আপনি বিবাহ করেছেন, পরিবার যার সাথে বিবাহ দিয়েছেন সেই পুরুষ বা নারীকে আপনার আর ভালো লাগছে না। এসব স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করে পার্টনারের সাথে কথা বলুন। ঠিক যেদিন আপনি বুঝতে পারবেন, সেদিনই আপনার পার্টনারের সাথে শেয়ার করুন। যেকোনো সামাজিক,পারিবারিক প্রেক্ষাপটে, ‘বিবাহ সফল না হলে’ - মানুষ কষ্ট পায়-পাবে। সাথে যদি সন্তান থাকে - সেই কষ্ট, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা একশো গুণ বেশি হবে। কিন্তু সেই কষ্ট সম্পর্কে ‘প্রতারণা’র শিকার হওয়া কষ্টের চেয়ে অনেক কম। যেই মানুষের সাথে আপনি বুঝে অথবা বাধ্য হয়ে দু’দিনও যদি একত্রে থাকেন একটা বন্ধুত্ব বা পারস্পরিক দায়-দায়িত্ব জন্ম নিবে। একটা সংসার মানে শুধুই এক ছাদের নিচে, একই বিছানা শেয়ার করা নয়। এর সাথে অনেক ‘কমিটমেন্ট’ থাকে। তাই, একটা সম্পর্কে থাকাকালীন অন্য সম্পর্কে জড়ানোর আগেই সেই সম্পর্ক শেষ করুন।
একটা সম্পর্ক শেষ করার জন্য কাউকে মানসিক রোগী বানাতে হবে না, কাউকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিতে হবে না। আপনার যেমন বেঁচে থাকার অধিকার আছে, তেমনি আপনার অপছন্দের পার্টনারেরও আছে। তাই প্রেম সত্যি মহান ও আনন্দদায়ক করতে প্রতারণা প্রেম, গোপন প্রেম, পরকীয়া প্রেম, প্লেটোনিক প্রেম যেই নাম ইচ্ছা দেন। কিন্তু সেই প্রেমকে সৎভাবে করতে শিখুন।
দাম্পত্য সম্পর্ক থেকে গোপন প্রেম (পরকীয়া) পরিবারের অনেকের মানসিক শান্তি বিনষ্ট করে। তাই সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের ‘বিবেক ও আত্মাকে’ মুক্ত করুন। সঙ্গীকে জানান, তার সাথে আর কোনো মানসিক সম্পর্ক-টান নেই। সন্তান থাকলে তাদের ব্যাপারে সুন্দর পারিবারিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। আপনার প্রাক্তনের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে সন্তানদের লালন-পালনে সহযোগিতা করুন। কারণ আপনার নতুন প্রেমিকা-প্রেমিক কিংবা স্বামী-স্ত্রী হতেই পারে। তাই বলে আপনার আত্মজাদের সাথে প্রতারণা করবেন না। শিশুদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য বাবা-মা লাগে।
আপনার প্রাক্তন স্ত্রীকে পছন্দ না হলেও সেটার জন্য শিশু সন্তানদের ভোগাবেন না। সহজ হিসেবে, রক্ত মাংসের মানুষ হিসেবে আপনার নতুন করে প্রেমে পড়ার অধিকার আছে (বিবাহিত-অবিবাহিত সকলের)। একাধিক বিবাহ-প্রেম করার অধিকার আছে, কিন্তু একজনকে ছেড়ে পরে আরেকজনকে প্রেম-বিবাহ করুন। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের মতো একসাথে চার স্ত্রী-প্রেমিক-প্রেমিকা না রেখে একসময় একজন রাখুন।
বাবা-মা সুস্থ সুন্দরভাবে একসাথে না থাকলেই সব চুকে যায় না। সন্তানদের দায়িত্ব নিতে হয়। তাদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হয়। সন্তান কোনোদিন আপনার প্রেমের অন্তরায় হবে না। আপনি যদি তাদের সাথে সম্পর্কের প্রতারণা না করেন। মানে আপনি তাদের বাবা-মা হিসেবে যতোটুকু দায়িত্ব- তা পালন করুন।
আপনার প্রেমিক-প্রেমিকার সাথে সন্তানের তুলনা হয় না। প্রেমিক-প্রেমিকাকে তার জায়গায় রাখুন। সন্তানকে তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যা ইচ্ছা করেন। কিন্তু কোনো সম্পর্কে প্রতারণা করবেন না।
পাদটীকা : ২০০৯ সালে আমি একবার মরার জন্য ডজনখানেক ঘুমের ওষুধ খাইছিলাম (হেঃ হেঃ হেঃ)... ভাগ্যিস, আমার আজমেরী (আমার গৃহের সহকর্মী টের পাইছিলো)...
প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় অনেকের দরজায় কড়া (সালিশ-দরবার-কান্নাকাটি-ঝগড়াঝাঁটি-ঝাড়ফুঁক-তাবিজ-কবজ-পানিপড়া) নেড়ে জেনেছি ‘নিজেকেই নিজে সহযোগিতা করতে হয়’... আমাকে আমি ভালোবাসি ও শ্রদ্ধা করি । ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :