নাঈমা জাবীন : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারতের নদী বিধ্বংসী উন্নয়ন যাত্রা গত চার দশকে বাংলাদেশের বৃহৎ নদী পদ্মা ও এ সম্পর্কিত অসংখ্য ছোট নদী, খাল-বিলকে ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত করেছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদীর উল্লেখযোগ্য অংশ এখন শুকিয়ে গেছে। ভারসাম্যহীন পানি প্রবাহে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরবঙ্গের বিশাল অঞ্চলের কৃষি। সেচের জন্য চাপ বাড়ছে ভ‚গর্ভস্থ পানির ওপর, যা দীর্ঘমেয়াদে আরো জটিল প্রতিবেশগত সংকট তৈরি করছে। সূত্র : সমকাল
শুধু তাই নয়, পদ্মা নদীর এই ক্ষয় তার সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোকে দুর্বল করেছে, যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে সুন্দরবন পর্যন্ত। সুন্দরবনের কাছে নদীর প্রবাহ দুর্বল হয়ে যাওয়ায় লবণাক্ততা বেড়েছে আর তাতে ক্রমাগত ক্ষয়ের শিকার হচ্ছে পানিনির্ভর বনের জীবন। ফারাক্কার বিষক্রিয়া শুধু বাংলাদেশ নয়, পশ্চিমবঙ্গ ও তার আশপাশেও পড়েছে। একদিকে পানিশূন্যতা, অন্যদিকে অসময়ের বন্যা এবং অতিরিক্ত পলি। সম্প্রতি বিহারের মানুষ শাবল নিয়ে মিছিল করেছেন ফারাক্কা বাঁধ ভেঙে দেয়ার দাবিতে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীও এই বাঁধ ভেঙে ফেলার দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এসব অভিজ্ঞতাও ভারতের বাঁধকেন্দ্রিক উন্নয়ন ব্যবসায়ী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক বিশ্বব্যাংক গোষ্ঠীকে থামাতে পারেনি।
তাছাড়া ভারতের শাসকদের চিন্তা পদ্ধতিতে ভাটির দেশ বাংলাদেশের অধিকার বিষয় একেবারেই অনুপস্থিত। মণিপুরে টিপাইমুখ বাঁধের প্রস্তুতি পুরোটাই চলেছে একতরফাভাবে। এখনো এর হুমকি চলে যায়নি। এই বাঁধ বাংলাদেশের আরেক বৃহৎ নদী মেঘনার জন্য যে বড় হুমকি হবে, তা বাংলাদেশ ও ভারতের স্বাধীন বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন।
আনু মুহাম্মদ বলেন, শুধু নদী বা খাল-বিল নয়, অপরিকল্পিত প্রকল্প ও দুর্নীতিযুক্ত উন্নয়ন তৎপরতায় ভ‚গর্ভস্থ পানির ক্ষেত্রেও বিপজ্জনক প্রভাব পড়ছে। ২০০৬ ও ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক পরিচালিত বাংলাদেশ পরিবেশ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভ‚গর্ভস্থ পানির স্তর এই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে নিচে নেমে গেছে। ঢাকার বেশ কয়েকটি নদীতে অক্সিজেন নেই। সরকারের কেন্দ্রে নদী বিষাক্ত হলে বা লেক দখল হয়ে গেলেও কোনো প্রতিকার দেখা যায় না। কারণ দখলদাররা ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সবসময় সম্পর্কিত।
আপনার মতামত লিখুন :