মঞ্জুরে খোদা টরিক : ছাত্রদের লেখাপড়া, খাওয়া-দাওয়া, খরচপাতি নিয়ে প্রায়ই আমলা-এমপিদের খয়রাতি কথা শোনা যায়। সবাই অতীত ভুলে যায়। আর সেই অতীত যদি গৌরবের ও মর্যাদার না হয় তাহলে তো কথাই নেই। তাকে ভুলে যাওয়া ও মনে না করা ফরজ। কেন বলছি এমন কথা? সামান্য ইতিহাস জ্ঞান যার আছে, সেও জানে এই বঙ্গদেশের অতীত আর্থ-সামাজিক কাঠামো কেমন ছিলো। সেখানে কয়জন টাকাওয়ালা ছিলো? কয়জন পাকা বাড়িতে জন্ম নিয়েছে? ক’জন ভালো জামা পরেছে? জুতা পরে স্কুলে গেছে? ক’জনের বাসায় পাকা পায়খানা ছিলো? ক’জনের বাসায় বিদ্যুৎবাতি ছিলো?
আজ যারা ক্ষমতাবান-ধনবান তার কেউ কেউ হয়তো অতীতে কয়লা বা পোড়ামাটি দিয়ে দাঁত ঘষেছেন। এক ৫৭০ সাবানেই কাপড়, মাথা ও গা ধুয়েছেন। মাটিতে বসে সানকিতে খাবার খেয়েছেন। লুঙ্গি ও টায়ারের স্যান্ডেল পরে এক জামাতেই কয়েক মাইল হেঁটে স্কুল-কলেজ করেছেন। একটু ভালো যাদের অবস্থা ছিলো তারা না হয় সেন্ডেল, রবারওয়ালা প্যান্ট ও পায়জামা পরে স্কুল-কলেজে গেছেন। আপনারাই ভালো ছাত্রের সুবাদে অল্প পয়সা বা বিনা পয়সার সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে বড় চাকরি-ব্যবস্যা করে ফুলেফেঁপে বড় হয়ে আজ অঢেল টাকা-পয়সার মালিক হয়েছেন। ক্ষমতা ও স্ট্যাটাসে আজ বড় বড় কথা বলছেন। প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী করে, কিন্তু আপনারা প্রকৃত শিক্ষিত ও সভ্য হতে চাননি, চেয়েছেন অর্থ-সম্পদ ও ক্ষমতা যা আপনাদের দিয়েছে ঔদ্ধত্য ও অহঙ্কার।
শুনেছি, দুর্বল ও দরিদ্র্যের আধিপত্য হয় ভয়ঙ্কর, একবার ক্ষমতা ও সুযোগ পেলে, ধরাকে সরা জ্ঞান করে, চতুর্দিক শ্মশানও তারা করে ফেলে। বুঝতে পারছি তার সত্য ও নির্মমতা।
তখন উচ্চ শিক্ষা যদি এমন অল্প পয়সা বা বিনা পয়সায় না হতো তাহলে হয়তো আপনাদের বাপ-দাদার হালটাই ধরতে হতো, মুটে মজুর হতে হতো, মুদির দোকানদার হতো হতো, রাস্তায় থালা নিয়ে বসতে হতো। আজকে নিজের সন্তানদের ইংলিশ মিডিয়ামে ও বিদেশে পড়াচ্ছেন আর কথায় কথায় সাধারণ মানুষের লেখাপড়া তাদের খরচ নিয়ে খোটা দিচ্ছেন। শিক্ষার এই করুণ ও দৈন্যদশায় শাসক হিসেবে লজ্জিত না হয়ে, ব্যর্থতা না দেখে, ক্ষমা না চেয়ে, ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করছেন। ওরা কী আপনার-আপনাদের টাকায় লেখাপড়া করছে? আপনি কে? আপনাকে ক্ষমতায় রেখেছে কে? এই যে মন্ত্রী বাহাদুর আপনি যে ফুটানি করছেন কার টাকায়? প্লেনে চড়ছেন কার টাকায়? বিদেশে চোখের-নাকের চিকিৎসা করছেন কার টাকায়? দামি গাড়িতে ঘুরছেন কার টাকায়? আপনার বড় ছেলেমেয়ে-আত্মীয়রা ফুটানি করছে কার টাকায় ও ক্ষমতায়? দামি খাবার খাচ্ছেন, পার্টি করছেন কার টাকায়? আপনি-আপনারা কোন জামিদারের ছেলে? আপনি বার ভুঁইয়ার কোন ভুঁইয়ার নাতি? এতো বড়াই করছেন কিসের ওপর?
আঞ্চলিকতার টান এখনো মুখ থেকে থেকে যায়নি। চলনে-বলনে গেঁয়ো- গোঁয়াড় ভাব এখনো স্পষ্ট। স্মার্টনেস ও মোড়লিপোনা কী বোঝেন না? কথা বলার মুখোভঙ্গি ও হাত-পা ছোঁড়া এখনো শেখেননি, অন্যদের নসিহত করছেন। নিজেরা এখনো প্রমিত বা শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারেন না? এক জেনারেশন এখনো পার হয়নি, কিন্তু ক্ষমতা ও বিত্ত আপনাদের বাপের নাম ও অতীত ভুলিয়ে দিয়েছে। কাদা-পানি-প্যাঁক-আইল পাড়িয়ে মুড়ির টিনে করে ঢাকায় এসে এখন দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। ঈদ এলে এখনো ঢাকা শহর ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়, গ্রামে-মফস্বলেই চলে যেতে হয় আর তাদের সন্তানদের চিতকাত হলে থাকা নিয়ে, নদীর ঘোলা জলের চেয়ে পাতলা ডাল, ছা, ছপ, শিঙাড়া, সমুচা খাওয়া নিয়ে খোঁটা দিতে কথা বলতে আপনাদের লজ্জা লাগে না?
দেশটাকে কী নিজেদের জমিদারি ভাবেন? বাপ-দাদার সম্পত্তি মনে করেন? আর জনগণকে মনে করেন আপনাদের প্রজা ও কর্মচারী। কিন্তু বিষয়টা তো উল্টা আপনারই আমাদের কর্মচারী ও সেবক। কিন্তু শাসকের ফ্যাসিবাদী চরিত্র, শাসনের ভাষা ও সংজ্ঞা পাল্টে দেয়।
স্বার্থপর ও লোভী ইঁদুরের গল্পটা কী মনে আছে আপনাদের? একটা ইঁদুরকে বর দিয়ে বনের বিড়াল থেকে বাঘ করলে’ বনের কী অবস্থা করে ছেড়েছিলো...? মনে পড়ে কী গল্পটা...? আপনাদের অবস্থা হেয়েছে সেই বরপ্রাপ্ত বাঘের মতোই। কিন্তু ফের ইঁদুর হলে কী পরিণত হবে, সেটা ভুলে গিয়েছিলো সেই অকৃতজ্ঞ ও কা-জ্ঞানহীন ইঁদুর। আসলে, মূর্খ-অশিক্ষিত শাসকরা ইতিহাসের শিক্ষা ও উপদেশে চলে না। তারাই তাদের কর্মের মাধ্যমে নিয়তি ও পরিণতি তৈরি করে। মানুষ ও সময় হয় তার সহায়ক মাত্র। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :