নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় অ্যাথলেটিকসে দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে রাজত্ব করছেন সুমি আক্তার। সবাই যখন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নজর রাখেন, তখন বাকি সব ইভেন্টে একাই রাজত্ব করেন মানিকগঞ্জের এই তরুণী। এই সুমি চার বছর ধরে টানা নির্দিষ্ট কিছু ইভেন্টের পদক নিজের ঘরে তুলছেন মনের আনন্দে। মাঝারিপাল্লাার দৌড়বিদ হিসেবে নিজেকে নিয়ে গেছেন ঈর্ষণীয় জায়গায়। গত পাঁচ বছরে মোট ২০টি পদক জিতেছেন সুমি।
জাতীয় মিটের ৪০০, ৮০০, ১৫০০ ও ৩ হাজার মিটার দৌড়ের শ্রেষ্ঠত্ব সুমির জন্যই যেন বরাদ্দ থাকে। গত শনিবার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শেষ হওয়া ৪২তম জাতীয় অ্যাথলেটিকসও রাঙিয়েছেন এই অ্যাথলেট। চার সোনার সঙ্গে রিলেতে রুপা।
ভৌগলিক কারনে বাংলাদেশের মেয়েরা শারিরীকভাবে দুর্বল। তাই দূরপাল্লার দৌড়ে সুবিধা করতে পারেন না। কিন্তু সুমি যেন একটু আলাদা। স্কুলে খেলতে খেলতেই জাতীয় স্তরে উঠে আসা। কোচ ‘সালাউদ্দিন স্যার’ তাকে জেলায় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিয়ে যান। এরপর বিজেএমসি হয়ে সেনাবাহিনী। বিজেএমসির কোচ গোপাল সাহা সুমিকে দেখে বলেছিলেন, ‘তোমার শরীর মাঝারি দৌড়ের সঙ্গে যায়। কাজেই তুমি এই ইভেন্টটা করো।’ কোচ কথাটা বলেছিলেন, ২০১৪ সালে বিজেএমসিতে নতুন আসা সুমির জাতীয় মিটে ১০০, ২০০ মিটার স্প্রিন্ট দেখে। এরপর শুরু পদক বিপ্লব।
সেনাবাহিনীর কোচ সাবেক দ্রুততম মানব মাসুদুল করিম ছাত্রীকে নিয়ে মুগ্ধ, ‘মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ওর আর আমার বাড়ি পাশাপাশি। ও আমাদের আর্মির গৌরব, রতœও। ওকে ট্রেনিং করিয়ে অনেক মজা। যখন যা বলি, চোখ বন্ধ করে শুরু করে দেয়। প্রচুর পরিশ্রম করে। কারও সঙ্গে কথাও বলে না। এই দিনে এত ভদ্র মেয়ে পাওয়াই কঠিন।’
কৃষক বাবা আব্দুল খালেক সুখী মেয়ের সাফল্য দেখে। দুই বোন, এক ভাইয়ের সংসারে এখন সুমিও আর্থিক সমর্থন দেন। খেলা নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন? ঝটপট উত্তর, ‘স্বপ্ন তো পূরণ হয়ে গেছে আমার।’ বলেন কী, এত তাড়াতাড়ি স্বপ্নপূরণ! সুমি বলতে থাকেন, ‘সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছি। সোনা জিতছি। এর চেয়ে আর বেশি কী চাওয়ার আছে!
কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনের যে অবস্থা তাতে অবসরের পর এই সুমির খোঁজ কতজন রাখবেন সেটাই দেখার বিষয়। গ্রাম্য সহজ-সরল মেয়েদের পরিণতি তো ক্রিকেটার চামেলীকে দিয়েই দেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। তবে অ্যাথলেটিকের এই সুমি যে ‘চামেলী’ হবেন না এটাই সবার চাওয়া।