শিরোনাম
◈ ঝালকাঠিতে ট্রাকচাপায় নিহতদের ৬ জন একই পরিবারের ◈ গাজীপুরের টঙ্গি বাজারে আলুর গুদামে আগুন ◈ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনোয়ারুল হক মারা গেছেন ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শনিবার ঢাকা আসছেন ◈ দুই এক পশলা বৃষ্টি হলেও তাপদাহ আরো তীব্র হতে পারে  ◈ এথেন্স সম্মেলন: দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনায় সম্মিলিত প্রয়াসের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ◈ কেএনএফ চাইলে আবারও আলোচনায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে: র‌্যাবের ডিজি ◈ ওবায়দুল কাদেরের হৃদয় দুর্বল, তাই বেশি অবান্তর কথা বলেন: রিজভী ◈ মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী ◈ বাংলাদেশ সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে: অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৮:১০ সকাল
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮, ০৮:১০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘জামায়াতেই আছি, শুধু মার্কা ধানের শীষ

কালের কন্ঠ :  বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে এবার ভোটে লড়ছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। একই প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়া গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও। জামায়াতে ইসলামীকে ধানের শীষ প্রতীক দিয়ে নির্বাচনে রাখা নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাত্র এক দিন আগেই দাবি করেছেন, ধানের শীষ নিয়ে যারা নির্বাচন করছে তারা সবাই বিএনপির, জামায়াতের কেউ নেই। ওই দাবির পর জামায়াতের যেসব নেতা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে লড়ছেন তাঁদের অবস্থান নিয়ে মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক কৌতূহল।

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া জামায়াত নেতারা কি তবে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন? কারো আবার প্রশ্ন, ওই নেতাদের কি জামায়াত থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে? তাঁরা বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে। গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠ’র পক্ষ থেকে এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয় জামায়াত নেতাদের আসনগুলোতে। জানা যায়, ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হওয়া জামায়াতের নেতারা এখনো জামায়াতের বিভিন্ন পদে বহাল আছেন। ওই প্রার্থীদের মধ্যে যাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে তাঁদের অনেকেই জোর গলায় বলেছেন যে তাঁরা জামায়াতেই আছেন। শুধু নীলফামারীর দুটি আসনের দুই প্রার্থী দাবি করেছেন, তাঁরা জামায়াত থেকে পদত্যাগ করে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন।

এদিকে জামায়াতের নেতাদের ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন ওঠার পর দলটির নিজস্ব ওয়েবসাইটটিও এখন আর খোলা যাচ্ছে না। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন কমিটির তালিকা সংগ্রহ করে দেখা গেছে, দলটির কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল, দুজন নায়েবে আমির, তিনজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কয়েকজন জেলা আমির ও বাকিরা সদস্য রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান নির্বাচন করছেন ঢাকা-১৫ আসনে। দলের নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার খুলনা-৫ এবং অন্য নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম চট্টগ্রাম-১৫ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলদের মধ্যে ডা. আব্দুল্লাহ মো. তাহের কুমিল্লা-১১ আসনে এবং রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে লড়ছেন। এ ছাড়া জামায়াতের আরো কমপক্ষে সাতজন জেলা আমির রয়েছেন প্রার্থী। বাকি প্রার্থীরা জেলা জামায়াতের কোনো না কোনো পদে আছেন। শুধু পিরোজপুর-১ আসনের প্রার্থী শামীম বিন সাঈদী জামায়াতের সাংগঠনিক কোনো পদে নেই। তাঁর বাবা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মোহাম্মদ হানিফ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্তে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি। আমি এখনো দিনাজপুর জেলা জামায়াতে ইসলামীর ইউনিট সদস্য। এর আগে আমি বীরগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির ও দিনাজপুর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য ছিলাম।’ দল থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থী নেই বলে বিএনপি যে বক্তব্য দিয়েছে, এটা তাদের ব্যাপার। আমার দল জামায়াতেই আছি, মার্কা শুধু ধানের শীষ।’

দিনাজপুর-৬ (বিরামপুর-হাকিমপুর-নবাবগঞ্জ-ঘোড়াঘাট) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর একাধিক মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে দিনাজপুর-১ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ও জামায়াত নেতা মোহাম্মদ হানিফ কালের কণ্ঠকে জানান, মো. আনোয়ারুল ইমলাম দিনাজপুর জেলা জামায়াতের আমির এবং তিনি তাঁর পদ ত্যাগ করেননি, জামায়াতে থেকেই ধানের শীষে ভোট করছেন।

সাতক্ষীরা-২ আসনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করছেন ১৯ মামলার আসামি কেন্দ্রীয় জামায়াতের শুরা সদস্য কারাবন্দি মাওলানা আব্দুল খালেক। তাঁর পক্ষে তাঁর স্ত্রী সাবিহা খাতুন ও ছেলে হাফিজুর নির্বাচনী কাজ করছেন। সাবিহা খাতুন জানান, মাওলানা আব্দুল খালেক কখনো বিএনপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ছিলেন না। তিনি এখনো জামায়াতেই আছেন এবং দলের স্বার্থেই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি নির্বাচন করছেন।

সাতক্ষীরা-৪ আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তিনিও অনেক মামলায় কারাগারে আছেন। জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা-২ সদর আসনে আব্দুল খালেক এবং শ্যামনগর কালীগঞ্জ নিয়ে সাতক্ষীরা-৩ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম এখনো জামায়াতের নেতাই আছেন, বিএনপিতে যাননি। সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সভাপতি রহমাতুল্যা পলাশ বলেন, সাতক্ষীরার চারটি আসনের দুটি বিএনপি ও দুটি জামায়াতকে দেওয়া হয়েছে। জামায়াত নেতা আব্দুল খালেক সাতক্ষীরা-২ এবং গাজী নজরুল সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে নির্বাচন করছেন।

ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মতিয়ার রহমান জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারেই এখানে জামায়াত নেতার পক্ষে আমরা কাজ করছি। ভোট দেওয়ার পরিবেশ যদি সৃষ্টি হয়, তো প্রার্থী বড় কথা নয়, ধানের শীষ প্রতীকেই ভোট দেবে বিএনপির নেতাকর্মী-সমর্থকরা।’

বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) আসনের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ আবদুল ওয়াদুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জোটগতভাবে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে বাগেরহাট-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসন দেওয়া হয়েছে। নিজেদের প্রতীক দাঁড়িপাল্লা এবং দলের নিবন্ধন না থাকায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে আমরা এখানে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’ বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে শেখ আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘না, আমরা বিএনপিতে যোগ দিইনি। বিএনপির মহাসচিবের স্বাক্ষরিত বিএনপির দলীয় মনোনয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বাগেরহাট-৩ ও বাগেরহাট-৪ আসনে আমরা দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি।’ শেখ আবদুল ওয়াদুদ জানান, বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থী আব্দুল আলীম বাগেরহাট জেলা জামায়াতের সদস্য।

নীলফামারী-২ (সদর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মনিরুজ্জামান মন্টু। নীলফামারী-৩ (জলঢাকা) আসনে রয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য আজিজুল ইসলাম। ওই দুই প্রার্থীর প্রচারেও দেখা গেছে জামায়াতের নেতাকর্মীর আধিক্য। তবে মনিরুজ্জামান মন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার দল এখন বিএনপি। সদস্য হয়েছি, কোনো পদে নেই। আর সদস্য না হলে দলের মনোনয়ন কিভাবে পেলাম?’ কবে সদস্য হয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলীয় মনোনয়নের আগে সদস্য হয়েছি।’ জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদত্যাগ করে সদস্য হয়েছি।’ তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. সামসুজ্জামান বলেন, জোটগত নির্বাচনে মনোনয়ন পান জামায়াতের মনিরুজ্জামান মন্টু। জেলা বিএনপির সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘উনি (মনিরুজ্জামান মন্টু) বিএনপির প্রার্থী। দল হিসেবে জামায়াত যেহেতু নির্বাচনে নেই, বিএনপির মহাসচিব তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি নির্বাচন করছেন। জামায়াত থেকে পদত্যাগ করেছেন কি না সে বিষয়ে উনিই বলতে পারবেন।’

নীলফামারী-৩ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘দলে যোগ দিয়েছি, না হলে কি আমাকে ধানের শীষ মার্কা দেওয়া হয়।’ কবে যোগ দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দিন তারিখ এ মুহূর্তে আমার জানা নেই।’ এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির নেতা খুরশীদ আলম বলেন, ‘জোটের শরিক হিসেবে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানি। দলে যোগ দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।

জামায়াতের নায়েবে আমির ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম-বিন-সাঈদী জামায়াতের একজন সমর্থক। পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শামীম-বিন-সাঈদী ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী। জেলা বিএনপির কোনো পদপদবিতে তিনি নেই। তবে জামায়াতের কোনো পদপদবি আছে কি না জানা নেই।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়