লিহান লিমা: জাতীয় নির্বাচনের আগে দমনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে ক্ষুণœ করছে বলে মন্তব্য করেছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। শনিবার প্রকাশিত ‘আতঙ্ক সৃষ্টিকারী: বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিরোধী এবং সমালোচকদের নির্বাচনী ধর-পাকড়’ বিষয়ক ৩৭ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিতের জন্য প্রার্থীদের নিরাপত্তা বিধানের তাগিদ দেয়া হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ৫০জন রাজনৈতিক কর্মী, শিক্ষার্থী, সুশীল সমাজের সদস্য, আদালতের রেকর্ড, নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন, বিরোধী সমর্থকদের গ্রেপ্তার, আটক, সহিংসতা এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হামলার নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে। এইচআরডব্লিউ আরো জানায়, বিচারবিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং আইনিপ্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন, প্রার্থীতা এবং ফলাফলের মতো নির্বাচনী বিতর্ক স্বাধীন ও সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত সমর্থকদের নির্বাচনী সহিংসতা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, মুক্তমতের ওপর দমনপীড়ন ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের ওপর সহিংস হামলা চালানো হচ্ছে, যেখানে কর্তৃপক্ষ নিরপেক্ষভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের উচিত নির্বাচনী সহিংসতা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্তকার্য চালানো এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, পুলিশ বিরোধী সদস্যদের আটক ও গ্রেপ্তার করছে, কিন্তু বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
সংস্থাটির এশিয়া বিষয়ক নির্বাহী ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ‘নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক মান দেয়ার জন্য, পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তারের ভূমিকা পালনকারী হওয়া চলবে না। বিরোধীদের প্রচারণার সময় সহিংসতা অন্যায্য ব্যবস্থাপনারই ইঙ্গিত দেয়।’
তাদের প্রতিবেদনে আরো উঠে আসে, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সামাজিক মাধ্যমে ভিন্নমতকে দমন করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার লাগাম টেনে ধরেছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশিরা স্ব-প্রণোদনা প্রচারে বাধ্য হওয়া সহ গ্রেপ্তারের ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সহিংসতা আরাম্ভ হয়েছে। ১১ ডিসেম্বর দুইটি ভিন্ন ঘটনায় আওয়ামী লীগের দুই সদস্য নিহত হয় এবং ১৬ ডিসেম্বর দলের একটি অফিস ভাঙচুর করা হয়। তবে বেশিরভাগ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে বিরোধী দল বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণার ওপর। পুলিশ ক্ষমতাসীন দলের ওপর হামলার তদন্ত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তারে তৎপর হলেও বিরোধীদের অভিযোগ এড়িয়ে যাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, বাংলাদেশের উচিত আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অধিকারের মানদ- বজায় রেখে নির্বিচারে আটক ও ধরপাকড় বন্ধ করা এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা।