সাম্য শরিফ : গুগলে সার্চ করে 'দ্য টেন বিগেস্ট রবারিস অব দ্য ওর্য়াল্ড’ কিংবা অন্য কোনো তালিকায় ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাকাতির উল্লেখ পাওয়া যাবে না। আবার এ যাবৎকাল পৃথিবীতে যত বড় বড় ডাকাতি সংঘঠিত হয়েছে সেসব ডাকাতির সমস্ত সম্পদ এক করেও এই বড় ডাকাতির সম্পদের সমান হবে না। এমনকি একটি ব্যাংক-এর সব শাখার সব অর্থ ডাকাতি করলেও এই ডাকাতির সমান হবে না। তবে মজার ব্যাপার, এই ডাকাতির প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি এমন যে এই ডাকাতরা সফলভাবে ডাকাতির পর অন্যান্য ডাকাতের মত রাতারাতি শুধু ব্যাপক অর্থকড়িরই মালিক হন না, সাথে সাথে সামাজিক সন্মান, রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও সর্বময় ক্ষমতা ভোগ করেন এবং দেশের সর্বত্র একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হন। আবার এই ডাকাতরা সমাজে কুখ্যাত ডাকাত হিসাবে চিহ্নিত না হয়ে বরং একটা এলিট ভাব নিয়ে রাষ্ট্রের সবচেয়ে উপর তলার মানুষে পরিণত হন।
এটা নিঃসন্দেহে ভোট ডাকাতি। যেদিন থেকে ভোটের মাধ্যমে জনগণই রাষ্ট্রের ক্ষমতার উৎসে পরিণত হয়েছে সেদিন থেকেই রাষ্ট্র দখলের জন্য ভোট একটি ডাকাতির বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এই ডাকাতি পৃথিবীব্যাপী দেশে দেশে সংঘটিত হয়েছে, এখনও অব্যাহত আছে। ভোট ডাকাতি বিভিন্ন প্রকারের। কখনো সামরিক শক্তির আবরণে, কখনো সমাজতন্ত্রের নামে, কখনো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অবৈধ প্রয়োগের মাধ্যমে আবার কখনো আন্তর্জাতিক রাজনীতির ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এরুপ ডাকাতি সংঘটিত হয়ে থাকে। তবে যে প্রকারেরই হোক না কেন কোনোটাই ডাকাততন্ত্রের নিয়ম বহির্ভুত নয়। ডাকাতির সূত্র একটাই। গায়ের জোরে ও অস্ত্রের মাধ্যমে অন্যের সম্পদ লুট করা। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ডাকাতরাও এই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই ডাকাতির একমাত্র লক্ষ্যবস্ত হচ্ছে জনগণের ভোট। পৈত্রিক সম্পদের মতই গণতান্ত্রিক দেশে ভোট জনগণের সাংবিধানিক সম্পদ ও অধিকার। জনগণের এই সম্পদ ভোগ করা যায় দুই ভাবে: বৈধভাবে অর্জন অথবা অবৈধভাবে ডাকাতি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কেউ এটা অর্জন করেন অবার কেউ ডাকাতি করার চেষ্টা করেন। এই ডাকাতির মাত্রায় ও পদ্ধতিতে প্রকারভেদ রয়েছে। একটা হচ্ছে বিভিন্ন অজুহাতে ভোট না করা অথবা নিয়ন্ত্রিত ভোট করা। সাধারণত সামরিক শাসকেরা এ দুটো করে থাকেন। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্র দখল করা, জোর করে সিল মারা, ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে না আসতে দেয়া, সঠিকভাবে গণনা না করা, ভোটকে আকার্যকর করে রাখা, সঠিক ফলাফল ঘোষনা না করা ইত্যাদি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভোটডাকাতরা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী একেক রকম পদ্ধতি প্রয়োগ করে।
মধ্যযূগে ভোট ছিল না। এমন কি দেশও ছিল না। চেঙ্গিস খান, হালাকু খানেরা তখন ডাকাতি করত একেক অঞ্চল। এখন আধুনিক সময়ে রাষ্ট্রব্যবস্থা ও রাষ্ট্রশাসন পদ্ধতি চালু হওয়ার পর এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্রের মালিক হওয়ার পর ভোটডাকাতির মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে ডাকাতি হয় নিজ দেশের রাষ্ট্রশাসন ক্ষমতা।
ব্যক্তিত্ব ও প্রবৃত্তির দিক থেকেও পৃথিবীর ’বিখ্যাত’ ভোটডাকাত ও ’কুখ্যাত’ অর্থডাকাতের ভিতর যথেষ্ট মিল আছে। দুজনেই অস্ত্রে ও গায়ের জোরে বিশ্বাসী। আবার নীতিবোধ, প্রবৃত্তি ও ব্যক্তিত্বও একই স্তরের। যা নিজের প্রাপ্য নয় এবং যে জিনিসে নিজের অধিকার নেই তা জোর করে ভোগ করা একমাত্র চোর-ডাকাতের মত নিম্ন প্রবৃত্তির মানব সন্তানের পক্ষেই সম্ভব।
পৃথিবীর যেসব দেশে ভোটডাকাতরা রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে বা থাকতে চায় তাঁরা প্রকৃতপক্ষে মধ্য যূগের দখলি মানসিকতা পোষন করেন। তাঁরা মধ্যযূগের দখলদার হিংস্র শাসকদের মতই আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তাশুন্য ও গণতন্ত্রবোধরহিত। এই ডাকাতরাই সভ্য পৃথিবীর অন্তরায়।
আপনার মতামত লিখুন :