শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:১০ দুপুর
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮, ১২:১০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাঠের লড়াই শুরু

সমকাল : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাঠের লড়াই শুরু হচ্ছে আজ সোমবার। সারাদেশের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক প্রচার। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রতীক বরাদ্দের আগ পর্যন্ত সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ। তবে এ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা সেই আচরণবিধি অনেকটাই মানেননি। ইসিও ছিল এ ক্ষেত্রে শিথিল। তবে আজ থেকেই নির্বাচনের মাঠে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে ইসির কার্যকর ভূমিকা চান বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করেন, তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী বাছাই ও জোট গঠন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও এ সময়ে অনেক আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ও সমর্থকরা এসব ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হলেও ইসি দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসির পক্ষ থেকে পোস্টার সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় ইসির শিথিল মনোভাব অব্যাহত থাকলে বাড়তে পারে নির্বাচনী সহিংসতা।

ইসি-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, আচরণবিধি মেনে চলতে দল ও প্রার্থীদের বাধ্য করার বিষয়ে ইসির বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। মাঠ পর্যায়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে রিটার্নিং কর্মকর্তার তৎপরতা ও তাৎক্ষণিক বিচারের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে গঠিত মোবাইল কোর্টের ওপরেই ভরসা করছেন তারা। পাশাপাশি ইসি গঠিত ১২২ ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটি অভিযোগ তদন্ত করে কমিশনের সুপারিশ পাঠানোর ব্যবস্থাও রয়েছে। কিন্তু ইনকোয়ারি কমিটি নিয়ে এরই মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কমিটির কার্যক্রম দৃশ্যমান না হওয়ার অভিযোগ তুলে জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার তাগিদ দিয়েছেন। তবে ইসি গঠিত ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির সদস্যরা সিইসির এ বক্তব্যে নাখোশ হয়েছেন।

তারা জানিয়েছেন, ২৬ নভেম্বর ওই কমিটি গঠন করা হলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত তাদের জন্য বরাদ্দের অর্থছাড় হয়নি। তারা কীভাবে দৃশ্যমান হবেন, তার কোনো দিকনির্দেশনাও ইসি থেকে পাওয়া যায়নি। এর আগের নির্বাচনগুলোতে তারা অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির সুপারিশ ইসিতে পাঠিয়েছেন। পাশাপাশি গাড়িতে করে নির্বাচনী এলাকায় টহলও দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত অর্থছাড় না পাওয়ায় তারা চরম বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছেন। ইসির বাজেট ও অর্থ শাখা জানিয়েছে, ১২২ কমিটির প্রতি কমিটিতে তিনটি খাতে ৬০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার এই অর্থছাড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯১(ক)(১) অনুযায়ী, অভিযোগের ভিত্তিতে অথবা নিজ উদ্যোগে এ কমিটি যে কোনো নির্বাচনী অপরাধ আমলে নিতে পারবে। ফৌজদারি অপরাধ বিচারের ক্ষমতা রয়েছে এমন আদালতের সমান ক্ষমতা এই কমিটিকে দেওয়া হলেও তারা নিজেরা শাস্তি দেবেন না। তদন্তকাজ শেষ করে এই কমিটি তিন দিনের মধ্যে কমিশনকে তার সুপারিশ জানাবে। এর বাইরে এই কমিটির অন্য কোনো ক্ষমতা নেই।

ইসির আইন শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি ভোটের আগের দিন আরও ৬৪০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নামানো হচ্ছে। তাৎক্ষণিক বিচারের ক্ষমতা থাকবে তাদের হাতে। তারা ভোটের দিন ও ভোটের পরের দু'দিন মিলিয়ে মোট চার দিন মাঠে অবস্থান করবেন। সব মিলিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার ওপরেই নির্ভর করছে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে ইসির সব তৎপরতা।

দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন রোধে নতুন কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা ইসির রয়েছে কি-না জানতে চাইলে কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনী পদ্ধতি নতুন, এটা ঠিক। গণমাধ্যম থেকে বলা হলেও এই নির্বাচন নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ রয়েছে, ইসি সেটা মনে করে না। ইসির ক্ষমতা সংবিধান ও আইন দ্বারা নির্ধারিত। এসব অনুযায়ী যেসব পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে। তার মতে, ইসির সব পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। রুটিন ওয়ার্ক বলতে যা বলা হচ্ছে তার একটি পদক্ষেপও অনুল্লেখযোগ্য নয়। দলীয় সরকারের অধীনে এই নির্বাচনে আইনি কাঠামো যেভাবে হওয়া উচিত, সেভাবেই করা আছে। কমিশন শুধু বিষয়গুলো ইমপ্লিমেন্ট করছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আইনি কাঠামোর বাইরে ইসির যাওয়ার কোনো উপায় নেই। যদিও একই সঙ্গে তিনি এটাও স্বীকার করছেন, আইনে উল্লেখ নেই এমন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ইসিকে সংবিধান দিয়েছে।

প্রচারে সহিংসতার আশঙ্কা :অতীতের নির্বাচনগুলোতে দেশের কোনো এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতা ঘটেছে এমন কোনো তথ্য ইসি কার্যালয়ে নেই। ইসির সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাধারণত গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসি নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। যদিও এ পরিকল্পনা নেওয়া হয় ভোটের দিন ও ভোট-পরবর্তী দু'দিনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি মাথায় রেখে। কিন্তু প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট গ্রহণ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগপর্যন্ত প্রচারের সময়ে ইসির কোনো নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সারাদেশে নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইসির অধীনে কাজ করছে। তাদের এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান কমিশনের অধীনে এর আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদের সবক'টি উপনির্বাচন বিএনপি বর্জন করে এলেও স্থানীয় সরকারের ভোটগুলোতে তারা অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনগুলোতে বিরোধী দলের প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ ছিল না বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ ওঠে। এবারের নির্বাচনে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ জোটের নেতারা কমিশনের কাছে অসংখ্য অভিযোগ দায়ের করেছেন। এমনকি এসব অভিযোগের তালিকায় ইসি সচিবসহ মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তিদের নামও এসেছে। কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের ঢালাও অভিযোগে ইসির পক্ষে বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান কমিশনের অধীনে নিকট অতীতের সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে প্রশাসন যেমন আচরণ করেছে, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। তবে ওই নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন না হলেও সংসদের ভোট নানা দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। বিরোধী জোট এ নির্বাচনে জয়ী হতে অনেক বেশি সক্রিয় হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে কমিশনের নিরপেক্ষ ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসির নেওয়া পদক্ষেপে প্রার্থী ও ভোটারদের আস্থা মোটেই বাড়েনি। তাই প্রচারকালে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সহিংস আচরণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমীন মুরশীদ বলেন, শুরুতেই নির্বাচনী আচরণবিধির মৌলিক জায়গায় লঙ্ঘন হয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই প্রচার শুরু হয়ে গেছে। সরকারি দলের অনেকে পদে থেকেও প্রচার চালিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের এটা আরও ভালোভাবে দেখা উচিত ছিল; কিন্তু তারা তা করেনি।

ইসি-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনী আইন অনুযায়ী আচরণবিধি শুধু প্রচারেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া জড়িত। ভোটের মাঠে প্রশাসনের ভূমিকা, সরকারের আচরণ, সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রচারে নামার সীমাবদ্ধতা, প্রার্থীদের আচরণ, দলগুলোর আচরণ, সংসদ সদস্য, মন্ত্রিসভার সদস্য- সবার ব্যাপারেই এ আচরণবিধি প্রযোজ্য। এ আইন লঙ্ঘনে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।

আচরণবিধিতে যা বলা আছে-

সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তি, অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও তাদের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না।

কোনো প্রার্থী তার এলাকায় সরকারি উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারবেন না এবং এ-সংক্রান্ত কোনো সভায় যোগ দিতে পারবেন না। সরকারি রেস্টহাউস, ডাকবাংলো, সার্কিট হাউস কোনো দল বা প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে প্রচারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না; সরকারি যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না এবং রাস্তাঘাট বন্ধ করে জনসভা বা প্রচারসভা করা যাবে না। সভার জন্য লিখিত অনুমতি নিতে হবে এবং আগে যে আবেদন করবে, তাকে আগেই অনুমতি দিতে হবে। সভা করতে হলে ২৪ ঘণ্টা আগে স্থান ও সময় পুলিশকে জানাতে হবে। কোনো প্রার্থী বা দলের বিরুদ্ধে কোনো প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ নির্বাচনের আগে ওই প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী কিংবা ওই এলাকা বা অন্যত্র অবস্থিত কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোনো চাঁদা বা অনুদান দেওয়া বা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারবেন না।

কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অথবা সদস্য হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সভায় অংশ নিতে পারবেন না। কোনো দল বা কোনো প্রার্থী কোনো নির্বাচনী এলাকায় মাইক ব্যবহার দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখবেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়