নিগার সুলতানা
একজন শিক্ষক মানে একজন গুরু। আর একজন গুরুর সম্মান সবার আগে। শিক্ষকগণ মানুষ গড়ার কারিগর। তাদের অসম্মান করে কেউ ভালো মানুষ হতে পারে না। একজন শিক্ষক যেমন শাসন করেন, তেমনি আদরও করেন। ‘শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে’Ñ বড় সত্য বয়ে বেড়ায় এই প্রচলিত প্রবাদ বাক্যটি।
ভালো-মন্দ দুই নিয়েই এই জগৎ। প্রতিযোগিতাময় এই পৃথিবী নামক কারাগার বড় ভয়ঙ্কর। সাপ, বিচ্ছু, গরু ভেড়াÑ অপকারী উপকারী কতো না প্রাণীর আবাস এই পৃথিবী, সেখানে মানুষ যদিও সর্বশ্রেষ্ঠ তবু তারাই যে বারবার নিচে নামে! তার মানে এই নয় যে এখানে বড় হয়ে উপরে ওঠার মানুষ নেই। হ্যাঁ, তারা হয়তো সংখ্যায় কম তাই বলে পৃথিবী নামক গ্রহটি বাস করার অনুপযোগী নয়। সূর্য তো একটাই প্রতিদিনই উদয় হয় সমান আলো নিয়েÑ যে আলো থেকে পাপী-তাপি বাদ যায় না। মহৎ মানুষরাও তাই চরম ভুলেও পরম ক্ষমাশীল।
শ্রদ্ধার পাত্র শিক্ষক যদি নির্যাতনকারী হয়ে উঠেন তখন মানবিক বিপর্যয়ের আর কিছুই বাকি থাকে না । শিক্ষার্থী ভুল করবে, ভুলের শাস্তিও পাবে, সেটা নিশ্চয় একটি সুন্দর এবং সহনীয় পদ্ধতিতে। শাস্তি যখন অপরাধের চেয়ে বড় হয় তখনই তো জঘন্য ও হৃদয় বিদারক ঘটনাগুলো ঘটে। এই শিক্ষকদের হাত ধরেই জগতের সকল মানুষের মানুষ হওয়া। শিক্ষকের দায়িত্ব এবং অবস্থান দু-ই বিরাট। আদর্শ আছে বলেই তারা শিক্ষক, নয়তো কেন? তবে জগতের যতো বড় বড় নামি-দামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে সবখানেই মগজের খেলা। দুঃখজনক, কোনো স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় আত্মার জ্ঞানগুলো শেখাতে পারে না। হৃদয় দিয়ে সবকিছুই জয় করা যায়। আর প্রতিযোগিতা দিয়ে কেবলই প্রতিহিংসা। কার আগে কে বড় হবো! কাকে ল্যাং মেরে ফেলে আমি আগে দৌড়াবো! কার জীবনটাকে কতো দুর্বিষহ করতে পারবোÑ এগুলোই যেন শিখে! অদ্ভুত ও আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমরা কেউ কারো জন্য জায়গা ছাড়তে প্রস্তুত নই। কে কতোটা দামি তা যেন দাড়ি পাল্লায় তুলে নিজে নিজেই মেপে নিই। বাঁধার দেয়াল ভেঙে বলতে শিখি না-ভালোবাসি! বিশ্বাস করতে পারি না কাউকেই অথচ অবিশ্বাসই সবচেয়ে বড় পাপ।
আদরে শাসনেই জীবন। কেউই তার বাইরে নয়। এই দেশের আনাচে কানাচে বহু গুণী শিক্ষক আছেন তারা যেমন আদর্শ তেমনিই সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র। কোনো এক বা একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকা ভুল করেছেন অন্যায় করেছেন তাই বলে সকল শিক্ষক খারাপ হয়ে গেলেন? না, কখনোই না। সবাইকে এক পাল্লায় মাপা গ- মূর্খের কাজ ছাড়া আর কী?
লেখক : কবি
আপনার মতামত লিখুন :