অর্পিতা শামস মিজান : জাতীয় নির্বাচন শুরুর আর কিছুদিন বাকি এবং তা নিয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহের শেষ নেই। এই সব হৈচৈ এর মধ্যে সবসময়ই এড়িয়ে যাওয়া হয় নারীদের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি।
নারী ও নির্বাচন নিয়ে দুটি বিষয় অত্যন্ত জরুরি। একটি হল জাতীয় নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ ও ভোটদান এবং দ্বিতীয়টি হল নির্বাচনের পরবর্তী প্রভাব যা নারী নির্যাতনের সাথেই জড়িত।
নারী এবং নির্বাচন অবশ্যই পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বিষয়। কেননা, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। অথচ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কিন্তু এই অনুপাতটি বজায় থাকে না। আমাদের সমাজে বহু উপায়ে নারীদেরকে রাজনৈতিক ও নির্বাচন জাতীয় বিষয়গুলো থেকে দূরে ঠেলে রাখা হয়। সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবই নারীদেরকে তাদের এই মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। প্রায়ই বলা হয় যে, নারীরা নাকি রাজনৈতিক বিষয় সামলাতে অক্ষম এবং বেশির ভাগ পরিবারেই ছোট থেকেই মেয়েদের এভাবেই বড় করা হয়। যার ফলে বড় হওয়ার পর সে রাজনীতি কিংবা নির্বাচন সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে আগ্রহ খুঁজে পায় না। এই অবস্থা থেকে সবাইকে বের করে আনা প্রয়োজন।
এমপি হিসেবে নারীদের ভূমিকা তেমন কিছুই হবে না – এটি একটি ভুল ধারণা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থার দিকে দেখলে বুঝা যাবে কত বড় একটি বৈষম্য এখানে দানা বেধে আছে। বর্তমান সংসদে আমাদের ৭১ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছে, যাদের মধ্যে ৫০ টি আসন সংরক্ষিত। এর অর্থ হল, ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২১ টি আসন নারীদের। যখন নারীদের জন্য সুযোগই কম তখন কিভাবে সম্ভব তাদের দ্বারা কোন উন্নতির? পুরুষ এবং নারী এমপির সংখ্যায় সমতা আনা প্রয়োজন।
নারীদের জন্য সংসদে যেই সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছে সেটি একটি বৈষম্যের প্রতীক। সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে কখনই প্রয়োজন হবে না এই আসন সংরক্ষণের।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যে তিনজন নারী রাজনীতির উঁচু স্থানে আছেন, তারপরও এটি নারীর নির্বাচনে সমঅধিকারের বিষয়টি নিশ্চিত করে না।
নির্বাচনের আগে যেমন নারীদের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, নির্বাচনের পরেও অবস্থাটা ঠিক এমনকি, তুলনা করলে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। পুরো ইতিহাস জুড়েই দেখা গিয়েছে যে, রাজনৈতিক কোন কারণে দাঙ্গা হলে, যুদ্ধ হলে ছেলেদের চেয়ে বেশি নৃশংসতায় পরতে হয় নারীদেরকেই। সেটি কেন হবে? যখন নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণই এত সীমিত? এছাড়াও পরিবার বা পরিচিত কেউ রাজনৈতিক ভাবে পরাজিত হলেও পরে যেয়ে সেখানের নারীদেরকেই টার্গেট করা হয় সামাজিক লাঞ্চনার।
পরিশেষে জনসংখ্যার অর্ধেকের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন নির্বাচন বৃহত্তর পরিসরে কার্যকর হয়না। আসুন আমরা নিশ্চিত হই যে আমাদের নারীদের অধিকার যেন সংরক্ষিত হয় এবং নির্বাচনে তাদের প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
লেখক : সামাজিক-আইন বিশ্লেষক, শিক্ষক- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। (মূল ইংরেজী লেখা থেকে অনূদিত ও সংক্ষেপিত) সম্পাদনা : ইকবাল খান