শিরোনাম
◈ জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ মুক্ত করার বিষয়ে  সরকার অনেক দূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও ◈ পঞ্চম দিনের মতো কর্মবিরতিতে ট্রেইনি ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা ◈ অর্থাভাবে পার্লামেন্ট নির্বাচনে লড়বেন না ভারতের অর্থমন্ত্রী ◈ কখন কাকে ধরে নিয়ে যায় কোনো নিশ্চয়তা নেই: ফখরুল ◈ জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের কাছাকাছি বাইডেন ◈ আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নতুন তারিখ ৮ মে ◈ সেনা গোয়েন্দাসংস্থার বিরুদ্ধে ৬ পাক বিচারপতির ভয় দেখানোর অভিযোগ ◈ নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিরা সাদা পতাকা উড়াচ্ছিল, তাদের বূলডোজার দিয়ে মাটি চাপা দিল ইসরায়েলী সেনারা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত

প্রকাশিত : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:০২ সকাল
আপডেট : ১৫ নভেম্বর, ২০১৮, ০৪:০২ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মাটির কান্না কি শুনতে পাচ্ছি?

মারুফ ইসলাম : মা জন্ম দেয়, মাটি লালন করে। আমরা তাই মাটিকে নিয়ে গান বাঁধি, ‘যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা।’ এ মাটিকে আমরা বলি খাঁটি সোনার চেয়েও খাঁটি। যে মাটির খাঁটিত্ব নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই মাটি আজ কাঁদছে। আমরা কি তার কান্না শুনতে পাচ্ছি? বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল বলছে, মানসম্পন্ন মাটিতে ৩.৫ শতাংশের বেশি জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকার বেশির ভাগ ফসলি জমির জৈব পদার্থ কমে দাঁড়িয়েছে ১.৭ শতাংশের নিচে। এমনকি বহু জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ ১ শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ার কারণে ১০ লাখ হেক্টরেরও বেশি জমি বন্ধ্যা হওয়ার পথে। ১৯৭৩ সালের জরিপে যেখানে লবণাক্ত মৃত্তিকার পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে। লবণাক্ততা বাড়ার পরিমাণ ২৫.৫ শতাংশ। অপরদিকে যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরের কিছু জৈব মাটির বিল অঞ্চলে বর্তমানে ফসল উৎপাদন একেবারে সীমিত হয়ে পড়েছে।

শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই আবাদি জমির পরিমাণ কমছে, তা নয়। সারা দেশেই আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ১৯৮৪ সালে দেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিলো ২ কোটি ২ লাখ ৩৮ হাজার একর। ১৯৯৭ সালে কমে এসে তা ১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার একরে দাঁড়ায় এবং ২০১২ সালে দেশে আবাদি জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫৪ হাজার একরে।

মাটি দূষণের একটি অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ইটভাটা। ইটভাটায় কর্মরত ব্যক্তিদের ভাষ্যমতে, এক কোটি ইট তৈরি করতে কমপক্ষে আধা লাখ টন মাটির প্রয়োজন হয়। এ মাটির পুরোটাই আসে ফসলি জমির উপরিভাগ বা টপসয়েল থেকে। আর একটি জমির টপসয়েল তৈরি হতে সময় লাগে শত শত বছর। মাটি দূষণের আরও একটি কারণ জমিতে কীটনাশকের ব্যবহার। প্রতি বছর দেশে প্রায় ১৬-২০ হাজার টন কীটনাশক ব্যবহার হয়। এ কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় ভূমিক্ষয় ও জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মকভাবে হ্র্রাস পাচ্ছে বলে অভিমত কৃষিবিজ্ঞানীদের। এ ছাড়া শিল্প-কারখানার বর্জ্য, ই-বর্জ্য, মেডিকেল বর্জ্য, ইত্যাদির কারণে দূষণের মাত্রা বাড়ছে।

শুধু ঢাকাই নয়, মাটি দূষণের প্রভাবাক্রান্ত শহরের তালিকায় রয়েছে দেশের অন্য শহরগুলোও। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পরিচালিত একটি সমীক্ষামতে, বাংলাদেশে পরিবেশগতভাবে সর্বাধিক দূষিত ৬টি জেলা হল ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বগুড়া।

মাটির কান্না বাড়ছে সারা পৃথিবীতেই, বিশেষ করে শিল্পোন্নত দেশে এ কান্না আরো বেশি। চীনের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিনহুয়া জানিয়েছে, চীনের মোট জমির ১৬ শতাংশ এবং আবাদি জমির এক-পঞ্চমাংশ বিভিন্ন ভারি ধাতু দ্বারা দূষিত। দেশটির প্রায় ৩৩ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি দূষণের কারণে চাষযোগ্যতা হারিয়েছে।

ইতিমধ্যে টনক নড়েছে চীনা প্রশাসনের। দেশটি জমি দূষণমুক্ত করার লক্ষে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, দূষিত জমিগুলো ২০২০ সাল নাগাদ বাজেয়াপ্ত করা হবে। ওই সময়ের মধ্যে শিল্পবর্জ্যে নির্গত ধাতু ১০ শতাংশ হ্রাস করা হবে। একই সময়ের মধ্যে ১৩ লাখ হেক্টর অতিরিক্ত দূষিত কৃষি জমিকে বন বা তৃণভূমিতে ফিরিয়ে নেয়া হবে।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশের টনক নড়বে কবে? মাটি দূষণ নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই দেশের হর্তাকর্তা কিংবা সাধারণ নাগরিকদের। এক সেন্টিমিটার মাটি তৈরি হতে কত বছর সময় লাগে- এই প্রশ্ন নিয়ে হাজির হয়েছিলাম বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে। মোট ৭৩ জনকে প্রশ্ন করে উত্তর পাওয়া গেছে ৪ জনের কাছ থেকে। বাকি ৬৯ জনই বলেছেন, এ ব্যাপারে তাদের ধারণা নেই কিংবা ‘কত বছর ধরে এক সেন্টিমিটার মাটি তৈরি হয়, তা জেনে আমার কী লাভ?’

সবকিছুতে লাভ খোঁজা এসব মানুষকে তবু বিনা লাভেই জানিয়ে দিয়ে এসেছি, এক সেন্টিমিটার মাটি তৈরি হতে সময় লাগে ১ হাজার বছর! কাজেই ১ হাজার বছর ধরে যে ১ সেন্টিমিটার মাটি তৈরি হয়, তা দূষিত করতে যেন অন্তত ১ মিনিট সময় ভাবি। লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইমেইল : গধৎঁভ১৯০২@মসধরষ.পড়স। সম্পাদনা : সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়