তরুণদের দেশ বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন মোতাবেক দেশের ৪৯ শতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে। মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তরুণ। গত ১০ বছরে দেশে তরুণ ভোটার বেড়েছে দুই কোটির ২৫ লাখের বেশি। নতুন তরুণ ভোটারের অধিকাংশের বয়স এখন ১৮-২৮ বছর। প্রতি বছর গড়ে ২৫ লাখ তরুণ ভোটার তালিকায় যোগ হচ্ছেন। তরুণ প্রজন্ম হচ্ছে একটি জাতির নিউক্লিয়াসস্বরূপ। যেকোনো জাতি গঠনের মূল কারিগর তরুণরা। তরুণ সমাজের শক্তি ও সম্ভাবনা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো গেলে উন্নয়ন দ্রুত ত্বরান্বিত হবে। মূলত রাজনীতিই দেশের যাবতীয় কর্মকা-ের কেন্দ্র থেকে দেশ পরিচালনা করে। কিন্তু বর্তমানে সেই গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্ম প্রবেশ করছে কি? নতুন নেতৃত্ব তৈরি কী? এ রকম প্রশ্ন প্রায়ই ঘুরপাক খায়। কিন্তু অপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের তেমন আগ্রহ নেই। এর নেপথ্য কারণও অনেক। ফলে দেশে যে হারে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা বাড়ছে, সেই তুলনায় রাজনীতি তাদের অংশগ্রহণ নিতান্তই কম। তরুণ নেতৃত্ব তেমন সৃষ্টি হচ্ছে না।
রাজনীতিতে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে বলে গত বছর মন্তব্য করেছেন সিপিএ স্মল ব্রাঞ্চ চেয়ারপার্সন ও মাল্টা সংসদের স্পিকার এঞ্জেলো ফারুগিয়া। তিনি মনে করেন, তাদেরকে আমরা রাজনীতিতে অংশ নেওয়া নিশ্চিত করতে পারছি না। তরুণ প্রজন্ম রাজনীতিতে আসলে আইন প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। এঞ্জেলো ফারুগিয়ার এমন বক্তব্য বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের তরুণরা নানা কারণে বিপথগামী ও পথভ্রষ্ট। সামাজিক অবক্ষয়ের মাঝে বেড়ে ওঠা আমাদের তরুণ সমাজকে নিয়ে ভাবতে হবে। দেশ গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে তরুণ সমাজকে সম্পৃক্ত করা দরকার। রাজনীতিতে তাদের সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মের অবিস্মরণীয় ভূমিকা ছিলো।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে আমাদের তরুণ সমাজ কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। সম্প্রতি নানা আন্দোলন-সংগ্রামেও তরুণ প্রজন্মে অবদান ছিলো। রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য দলগুলোকে যাবতীয় করণীয় ঠিক করা দরকার। মনে রাখতে হবে প্রবীণ নেতৃত্ব এক সময় থাকবে না, তখন তরুণ প্রজন্মকেই দেশ ও সমাজের হাল ধরতে হবে। সঠিক রাজনীতির জন্য চাই দক্ষ, প্রশিক্ষিত, শিক্ষিত, সৃজনশীল , বলিষ্ঠ ও স্বচ্ছ নেতৃত্ব। সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন প্রজন্মকে প্রাধান্য এবং অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাজনীতিতে তাদের মেধা, সময়োপযোগী ভাবনা, চিন্তা-চেতনার প্রতিফলন ঘটানো দরকার। তরুণরাই আমাদের ভরসা। কলুষিত রাজনীতি থেকে মুক্তির উপায় নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব।
তরুণদের আধুনিক চিন্তা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। তরুণদের শক্তিকে সঠিক কাজে লাগাতে না পারলে তারা বিপথগামী হবে। অনৈতিক, মাদক, সামাজিক অবক্ষয় যাতে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য দরকার তাদেরকে সঠিক পথ দেখানো। কর্মে নিয়োজিত করা। লেখক : শিক্ষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ।