এসএম আরিফুল কাদের : হিজামা শব্দটি আরবি ‘আল-হাজম’ শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ চুষা বা টেনে নেওয়া। এর বাংলা প্রতিশব্দ হলো শিঙ্গা লাগানো। এটি একটি নববি চিকিৎসা ব্যবস্থা। আধুনিকভাবে বলা হয় কাপিং। পরিভাষায় বলা যায়, এটি এমন এক প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থার নাম, যার দ্বারা মানুষের সকল শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক সুস্থতা বিদ্যমান। হিজামা অতি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে আরব বিশ্বে জনপ্রিয়। যার দ্বারা নির্দিষ্ট স্থান থেকে সূঁচের মাধ্যমে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে (টেনে বা চুষে) নিস্বেজ প্রবাহহীন দূষিত রক্ত বের করে আনা হয়। এতে শরীরের মাংসপেশী সমূহের রক্ত প্রবাহ দ্রæততর হয়। পেশী, চামড়া, ত্বক ও শরীরের ভিতরের ইন্দ্রিয় সমূহের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শরীর সতেজ ও শক্তিশালী হয়।
এ হিজামা থেরাপী ৩০০০ বৎসরেরও পুরাতন চিকিৎসা পদ্ধতি। মধ্যপ্রাচ্য থেকে উৎপত্তি হলেও চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে চীন, ভারত ও আমেরিকায় বহু পূর্বে থেকেই এটি প্রচলিত ছিল। আঠারো শতক থেকে ইউরোপেও এর প্রচলন রয়েছে।
হিজামা শুধুমাত্র প্রাচীন চিকিৎসাই নয়, বরং ইসলামেও এর গুরুত্ব এবং ফজিলত রয়েছে। হজরত জাবির (রা.) হতে বর্ণিত। নবি করিম (সা.)-এর পায়ে যে ব্যথা ছিল, তার জন্য তিনি ইহরাম অবস্থায় হিজামা ব্যবহার করেছেন। (সহিহ নাসাঈ : ২৮৫২) অন্যত্র বর্ণিত আছে, হজরত জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই হিজামায় শেফা রয়েছে। (সহিহ মুসলিম : ২২০৫)
তাই এত গুরুত্ব ও ফজিলত থাকায় রাসুল (সা.) নিজে ব্যবহার করে মানবজাতিকে উৎসাহিতও করেছেন। হিজামা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজামার উপকারিতা সম্পর্কে অবহিত করেছেন। হিজামার ব্যবহার রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। যার প্রমাণ পাওয়া যায় নিম্নের হাদিসগুলোতে। আমর বিন আমির (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস (রা.)-কে বলতে শুনেছি যে, নবি করিম (সা.) হিজামা লাগাতেন এবং কোন লোকের পারিশ্রমিক কম দিতেন না। (সহিহ বোখারি : ২২৮০)
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মিরাজে যাওয়ার সময় তিনি ফিরিশতাদের যে দলের নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তারা বলেন, ‘হে আল্লাহর হাবিব (সা.)! আপনি অবশ্যই হিজামা করাবেন।' (সহিহ তিরমিজি : ৩৪৬২)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জিবরাঈল (আ.) আমাকে জানিয়েছেন যে, মানুষ চিকিৎসার জন্য যতসব উপায় অবলম্বন করে, তম্মধ্যে হিজামাই হল সর্বোত্তম। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৭৪৭০) হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, গরম বৃদ্ধি পেলে হিজামার সাহায্য নাও। কারণ, কারো রক্তচাপ বৃদ্ধি পেলে তার মৃত্যু হতে পারে। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৭৪৮২)
হিজামার পদ্ধতি : হিজামার পূর্বে গোসল করে নেওয়া উত্তম। যদি গোসল না করেন, তবে হিজামার পূর্বে ঘণ্টা খানেক বিশ্রাম নেওয়া ভালো। খালি পেটে হিজামা করা বা শিঙ্গা লাগানো ভাল। হজরত ইবনে ওমর (রা.) হতে
বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বাসি মুখে শিঙ্গা লাগালে তাতে নিরাময় ও বরকত লাভ হয় এবং জ্ঞান ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়।' (ইবনে মাজাহ : ৩৪৮৭-৩৪৮৮)
আপনার মতামত লিখুন :