শিরোনাম
◈ সাভারে শো-রুমের স্টোররুমে বিস্ফোরণ, দগ্ধ ২ ◈ ইরানের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নতুন নিষেধাজ্ঞা ◈ আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম  ◈ চলচ্চিত্র ও টিভি খাতে ভারতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী ◈ উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলেই ব্যবস্থা: ইসি আলমগীর  ◈ ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত ◈ বিএনপি নেতাকর্মীদের জামিন না দেওয়াকে কর্মসূচিতে পরিণত করেছে সরকার: মির্জা ফখরুল ◈ ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠক ◈ মিয়ানমার সেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না: সেনা প্রধান ◈ উপজেলা নির্বাচন: মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়দের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ আওয়ামী লীগের

প্রকাশিত : ০১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৫:৩০ সকাল
আপডেট : ০১ অক্টোবর, ২০১৮, ০৫:৩০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সনদের প্রশ্নটি ছাড়াও অন্য যে বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে

ফিরোজ আহমেদ

 

১. বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও বামপন্থী দলগুলোর সাথে আমরা জোটবদ্ধ আছি। বাম গণতান্ত্রিক জোট। কিন্তু বলে রাখি, এ যাবত কখনো কোন জোটে আমরা যাইনি, যেখানকার শর্ত ও মানদ- আমরা নির্ধারণ করিনি। এই শক্তি আমরা কোথায় পেয়েছি, আমাদের তুলনামূলক নবীন সংগঠন ও নেতৃত্ব সত্ত্বেও?

বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রচারপত্রে আপনারা দেখবেন, বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশে এমন বাম ভাবধারা আছে, যারা এই সরকারকে একদা ফ্যাসিবাদী বলতে আগ্রহী ছিল না, পরবর্তীতে সরকারকে বড়জোর ‘ফ্যাসিবাদী প্রবণতা’ বিশিষ্ট বলতো। কিন্তু এই জোট গঠনের অন্যতম শর্ত, সরকারের ফ্যাসিবাদী ভিত্তি চিহ্নিত করা এবং সেইভাবে তাকে অভিহিত করা। আমাদের শর্তেই।

আরও গুরুত্বপূর্ণ, নির্বাচনের সময়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, অনির্বাচিত এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে, এই বক্তব্যেও কোন কোন শরিক একমত ছিলেন না। গণসংহতি আন্দোলনের সামর্থ্য সীমিত হতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক বিকাশের পথে আমরা আমাদের অবস্থান কখনো কোন দিন পরিত্যাগ করিনি, বরং অন্যরা আমাদের দাবির যাথার্থ গ্রহণ করেছেন। এর ভিত্তিতেই কার্যকরভাবে গড়ে উঠেছে এই জোট। আমরা এই জোটের অন্যতম শরিক।

২. আমরা নিশ্চয়ই গণপ্রতিনিধি হতে আগ্রহী, আগ্রহী ক্ষমতায় যেতে। যত দ্রুত আমরা সেই কাজটা করতে পারবো, সেটা আমাদের দেশটার জন্য মঙ্গল বলেই আমরা বিশ্বাস করি। সেই কারণেই আমরা রক্ত-শ্রমে-ঘামে রাজনীতি করি। কেবল শহীদ মিনারে সশ্রদ্ধ অভিবাদনের জানাযা আমাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু সেই ক্ষমতায় যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এবং ক্ষমতা পরিচালনারও মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রুপান্তর করাই আমাদের লক্ষ্য। মনে রাখবেন, অতীতের মত ভবিষ্যতেও আমরাই যে কোন ঐক্য কিংবা বৃহত্তর জোটে যাবার শর্ত নির্ধারণ করে দেবো।

কেউ কেউ কামাল হোসেনের কথা বলছেন! ড. কামাল হোসেনের আজীবনের অর্জন বাংলাদেশের সংবিধান, ৭২ এর যে সংবিধানকে বহু বামপন্থী প্রায় ধর্মগ্রন্থজ্ঞান করেন। গণসংহতি আন্দোলনের পক্ষে থেকে প্রথম থেকে আমাদের কার্যকর সমালোচনা ছিল লক্ষ্য এই সংবিধানের একেকন্দ্রীক, ব্যক্তির হাতে সকল ক্ষমতা তুলে দেয়া স্বৈরাচারী ক্ষমতাকাঠামো। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের বিদ্যমান সংকটের, সংঘাতের, পরিবারতন্ত্রের অন্যতম উৎস এই সংবিধান।

খেয়াল করে দেখুন, আমরা ৭২ এর সংবিধানের কাঠামোর মাঝে ঢুকে পড়িনি। বরং ড. কামাল হোসেনের মত ব্যক্তিরাও সংবিধান বিষয়ে আমাদের সমালোচনাগুলোতেই ইতিবাচক অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি অন্য বহু বামপন্থীর মাঝেও এই বিষয়ে ইতিবাচক মনোভঙ্গি দেখা যাচ্ছে।

জোনায়েদ সাকি তার সেদিনের বক্তৃতায় পরিস্কার করে বলেছেন, তা আরও স্পষ্ট করে, আবারও পুনর্ব্যক্ত করে বলি: নতুন সামাজিক সনদ হতে হবে মুক্তিযুদ্ধে জনগণের আকাঙ্খাকে মানদ- ধরে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে নারী বিরোধী কোন আইন থাকতে পারবে না। আদিবাসী, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী সহ সকল সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, তা করতে হবে সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই।

এই কাজগুলো করার জন্য আমাদের অবশ্যই ক্ষমতায় যেতে হবে।

৩. আমাদের কর্মীদের আমরা যে শিক্ষাটা দেই, সেটা হলো, যথাসাধ্য বামপন্থী সংকীর্ণতায় অভ্যস্ত না হতে। তাদের আবেদন যেন হয় বৃহত্তর গণমানুষের কাছে। জনগণের প্রয়োজন দাবি এবং চাহিদার ভাষা দেয়াই যথাযথ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের কাজ। বিগত মেয়র নির্বাচনেও আমরা কখনোই কাল্পনিক ‘সমাজতান্ত্রিক ঢাকা’ বানাবার কর্মসূচি দেইনি। বরং বাস্তবে কী কী অর্জিত হতে পারে, সেই বিশ্বাসযোগ্য কর্মসূচি হাজির করেছি। মানুষ কম কিংবা বেশি যেটুকু ভালোবাসা আমাদের দেখিয়েছে, সেটা এই বাস্তবায়নযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য কর্মসূচি হাজির করার, তাকে নিয়ে মাঠে হাজির থাকারই ফল। কোন বামপন্থী দলকে আমরা আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু বানাইনি। ফলে আমাদের কোন ব্যক্তিগত আক্রমণে যেতে হয়নি। কেননা আমাদের লক্ষ্য আরও বড় কিছু।

আমাদের কর্মীরা যেন বর্তমানের এই ক্রান্তিদশাতেও এই বিষয়টা স্মরণে রাখেন, গণসংহতির কোন নেতা কিংবা কর্মী কিংবা সদস্য অপর কারও ব্যক্তিগত আক্রমণের ফাঁদে পা দেবেন না। বরং এই আক্রমণ করে আপনার বক্তব্যটাকেই যে সমাজে আরও বেশি প্রচারের সুযোগ তারা করে দিয়েছেন, এ জন্য শুভেচ্ছাই তাদের পাওনা। সবচে বড় কথা হলো, সুনির্দিষ্ট কোন প্রশ্নের উত্তর ছাড়া সাধারণ আক্রমণাত্মক তর্কবিতর্কে বিপুল সময় ও শ্রম অচপয় না করে কর্মসূচিটাই বারংবার নানান ভাবে নানান উপলক্ষে জনগণের সামনে বোধগম্য ভাষায় উপস্থাপন করাটাই জরুরি।

৪. তাই বলে সমালোচনাকে আমরা এড়িয়ে যাই না। খুব মন দিয়েই আমরা সেগুলো পাঠ করার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি বিরূপতম সমালোচনার মাঝেও কোন সারবস্তু থাকলে তাকে গ্রহণ করার। সমালোচকদের আমরা ধন্যবাদ দেই আমাদের গুরুত্ব দেয়ার জন্য। আমাদের বার্তা, আমাদের উপস্থিতি এবং আমাদের কার্যকরত্ব মানুষের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য।

বহু সমালোচনা আছে আন্তরিক। ‘বামপন্থা’ নামের বিশুদ্ধতাবাদী ধর্মের মোহের আচ্ছন্ন এই মানুষদের ভালোবাসা আমাদের মুগ্ধ করে, তাদের উদ্বেগে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায় এগুলো বড়জোর গোষ্ঠীচর্চার নামান্তর হয়। বৃহত্তর জনগণের সাথে এর কোন সম্পর্ক থাকে না। রাষ্ট্রের সংকটে, জনগনের দুর্বিপাকে আফসোস এবং হাহাকার কিংবা রূঢ় তাচ্ছিল্য ছাড়াসমাজে এদের কোন অবিঘাত নেই, এটাও প্রায়ই দেখা যায়।

বহু সমালোচনা আছে, শঠতাপূর্ণ। আদতে আওয়ামী লিগ, কিন্তু কোন না কোন বামপন্থী দলের শুভানুধ্যায়ী সেজে চেষ্টা করে যাবে প্রগতিশীলদের কর্মসূচিকে অকার্যকর, পোষমানা এবং সরকারের মাপমতো করে রাখতে। কিন্তু তারাও ধন্যবাদ পাবেন, কেননা আমরা যে আওয়ামী লীগের পোষা বাম নই, যদিও আমরা তাদেরও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে চাই সেই আস্থাটা জনগণের সামনে পরিস্কার করাটা আজকের এই ক্রান্তিলগ্নে খুব জরুরি। এই কাজটা তারা করে দিচ্ছেন। ধন্যবাদ তাদের পাওনা।

আরও বহু প্রশ্ন জমা হয়েছে ডাকের ঝোলায়। আশা করি সেগুলো নিয়েও আলাপ করা যাবে।

পরিচিতি : সদস্য, রাজনৈতিক পরিষদ, গণসংহতি আন্দোলন/সম্পাদনা : ফাহিম আহমাদ বিজয়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়