শিরোনাম
◈ মুগদায় ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় কিশোর নিহত ◈ বাংলাদেশ-চীন সামরিক মহড়া মে মাসে, নজর রাখবে ভারত ◈ দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু: চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, যান চলাচল শুরু ◈ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ভারত, চীন বা রাশিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত নয়: মার্কিন কর্মকর্তা ◈ সিলেটে ট্রাক-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২ ◈ থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ ◈ রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় ◈ শিক্ষক নিয়োগ: ১৪ লাখ টাকায় চুক্তি, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার ৫ ◈ বিদ্যুৎ-গ্যাস কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়া ঋণ মিলবে না ◈ নতুন করে আরও ৭২ ঘণ্টার তাপ প্রবাহের সতর্কতা জারি

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:২৭ সকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৬:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তরুণ ভোটাররা কী ভাবছেন

ড. ইকবাল হুসাইন: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া ক্রমশ বেগবান হচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বক্তব্য, চিন্তা-ভাবনা, নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনী জোট, সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে গণমাধ্যম সরগরম। নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং তাতে প্রধান দলগুলোর অংশগ্রহণ নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, যথাসময়ে নির্বাচন হবে এবং তাতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণও করবে। এ নির্বাচনে রাজনৈতিক মেরুকরণ বা জোট, উন্নয়ন, সুশাসন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি নতুন ভোটারদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকবে বলে অনেকে মনে করছেন। কেবল নির্বাচন নয়, যে কোনো সমাজের একটি বড় শক্তি এই তরুণ সমাজ। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির মূলেও তরুণ সমাজের ভূমিকা সর্বাধিক। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তরুণ। তারুণ্যের সম্মিলিত শক্তি একটি সমাজের আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারে। শাহবাগ আন্দোলন (২০১৩), কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে আমরা তারুণ্যের শক্তি প্রত্যক্ষ করেছি। আগামী নির্বাচনেও তরুণ সমাজের ভাবনা, পছন্দ-অপছন্দ, সমর্থন কিংবা বিরোধিতা ভোটের ফলাফল নির্ধারণ করে দিতে পারে।

অনেকের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তরুণ ভোটারদের একাংশ বর্তমান সরকারের প্রতি বিরাগভাজন। সংক্ষুব্ধ এ নবীন ভোটারদের অনেকে আওয়ামী পরিবারের সন্তান! কিন্তু পরিবারের রাজনৈতিক আদর্শের বাইরে তাদের একটি স্বাধীন ও স্বকীয় চিন্তা বিকশিত হয়েছে। সরকারের প্রতি সংক্ষুব্ধ হওয়ার কিছু কারণও তারা ব্যক্ত করেছেন। যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে তারা গিনিপিগের মতো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার হয়েছেন। সরকার স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সিলেবাস-কারিকুলাম, পরীক্ষা পদ্ধতি, নম্বর বণ্টন, মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় ঘন ঘন পরিবর্তন সাধন করেছে। প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে সরকার ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অনেক নেতাকে পুলিশের মামলা, নির্যাতন এবং ছাত্রলীগের হামলার শিকার হতে হয়েছে। তরুণদের এসব অভিযোগের সত্যতাকে পুরোপুরি অস্বীকার করার উপায় নেই। তাদের সংক্ষুব্ধ হওয়ার আরও হয়তো যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে।

আগামী নির্বাচনে যারা নতুন ভোটার, জীবনে প্রথম ভোট দেবেন তাদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছর। কারও কারও হয়তো আরও একটু বেশি। গত প্রায় দশ বছর ধরে তারা আওয়ামী লীগের শাসন দেখে আসছেন। আওয়ামী লীগের আগে দুই বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। অর্থাৎ আজ থেকে একযুগ আগে বিএনপির শাসনব্যবস্থা (২০০১-০৬) কেমন ছিল, তা তাদের জানার বা বোঝার কথা নয়। কারণ সে সময় তারা ছিল ৬ থেকে ৮ বছরের শিশু, সর্বোচ্চ ১০ বছরের বালক-বালিকা। ১২ বছর আগের ঘটনা আমাদের গণমাধ্যমেও তেমনভাবে আসে না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যতটুকু বলা হয়, তরুণ প্রজন্মের কাছে তা 'রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা' বলে মনে হয়। সুতরাং তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির, শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার, ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে তারেক রহমানের তুলনা করতে পারবে না। তারা কেবল বর্তমান সরকার এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের ত্রুটি দেখবে- এটাই স্বাভাবিক।

বিএনপি এখন অনেক ভালো ভালো কথা বলছে। তাদের নীতিবাগীশ নেতৃবৃন্দ জনগণকে 'সব ভালোর' এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। কিন্তু তাদের কথায় আস্থা রাখা কঠিন। ২০০১ সালে তারা আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো প্রচার এবং সুশাসনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু মানুষের মোহ কাটতে সময় লাগেনি। যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে সারাদেশকে তারা স্বা্‌ধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবিরের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সংখ্যালঘু নির্যাতন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে হত্যা, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, দেশব্যাপী জঙ্গিবাদের বিস্তার জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্ত ও দুর্বিষহ করে তুলেছিল। ছাত্রদলের সন্ত্রাসে কেবল ছাত্রলীগ বা নিজ দলের প্রতিপক্ষকে নয় বাবার কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশু, বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনির মতো অনেক সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে। দুর্নীতিতে ধারাবাহিকভাবে চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আন্তর্জাতিক লজ্জা অর্জিত হয়েছে বিএনপির সময়ে! খাম্বার ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা মুনাফা হাতিয়ে নিলেও বিদ্যুতের অভাবে মানুষকে হাহাকার করতে হয়েছে। বিএনপির আমলে সারের জন্য কৃষককে জীবন দিতে হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। আজ আমরা কোটা নিয়ে কথা বলছি। তখন একটাই কোটা ছিল, হাওয়া ভবন! একের পর এক শিল্প-কলকারখানা বন্ধ করার ফলে জীবন কত দুর্বিষহ হতে পারে, তা কেবল ভুক্তভোগী জানেন।

বিএনপির দুঃশাসনের তালিকা আরও অনেক দীর্ঘ। কিন্তু বিএনপি খারাপ ছিল বলে আওয়ামী লীগের সমালোচনা করা যাবে না, তা নয়। আওয়ামী লীগের কাছে জনগণের প্রত্যাশা বেশি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়. তখন অনেকের মনে হয়েছিল, সরকার যদি কেবল বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারে; তবে পরবর্তী দশ বছরে এ সরকারের কাছে মানুষের আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকবে না। বিদ্যুৎ সমস্যা এখন অনেকটাই সহনীয়। দেশ ক্রমশ উন্নত এবং প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হচ্ছে। সঙ্গত কারণে মানুষ এখন আইনের শাসন, সুশাসন, মানবাধিকার, পরিবেশ, দুর্নীতি, বাকস্বাধীনতা, মুক্ত গণমাধ্যম প্রভৃতি বিষয়ে সোচ্চার। এগুলো এখন সময়ের দাবি। এসব দাবির সঙ্গে তরুণরাও একাত্ম। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে, দাবি পূরণে কার ওপর বেশি আস্থা রাখা যায়, কে বেশি আন্তরিক?

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের বাড়াবাড়ি অনেককে আওয়ামী লীগবিদ্বেষী করে তুলেছে। ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগে অনুপ্রেবেশকারী (কাউয়া) একটি বহুল আলোচিত বিষয়। অপকর্মের মাধ্যমে সংগঠনকে কলুষিত করা অনেক নেতাকর্মীর ঠিকুজি খুঁজলে এর সত্যতা পাওয়া যায়। কেবল ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগে নয়, তরুণদের অরাজনৈতিক বিভিন্ন আন্দোলনেও অনুপ্রবেশকারীর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। আমাদের মনে রাখা দরকার, চারদলীয় জোট সরকারের সময় জামায়াত-শিবিরের লাখ লাখ নেতাকর্মী-সমর্থক সারাদেশে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেশে যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, তারা হঠাৎ কোথায় গেল? স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনি ও তাদের দোসররাও নিশ্চয় বসে নেই। তাছাড়া বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকেই আওয়ামী-বিদ্বেষী একটি পক্ষ রয়েছে। সবাই সম্মিলিতভাবে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর। তৎপরতার অংশ হিসেবে এদের অনেকে কখনও আওয়ামী লীগে, কখনও ছাত্রলীগে আবার কখনও নির্দলীয়-অরাজনৈতিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে। অনুপ্রবেশকারী না হলে কেবল সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সম্ভব হতো না। অনুপ্রবেশকারী না থাকলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠত না। তবে অনুপ্রবেশকারীর দোহাই দিয়ে নিজেদের দায়মুক্তির সুযোগ নেই। অনুপ্রবেশকারীর অপকর্মের দায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগকে যেমন বহন করতে হবে, তেমনি কোটাবিরোধী আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকেও।

সাম্প্রতিক কিছু আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম যে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে, তাতে তাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য ভালোভাবে যাচাই না করে বিভ্রান্ত হওয়া তাদের সমীচীন নয়। সিফাতউলল্গার মতো রুচিহীন উন্মাদকে নেট-দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছে কথিত 'স্মার্ট' তরুণদের একাংশ। প্রশ্ন ফাঁসের অনৈতিক সুবিধাও নিয়েছে এই তরুণদের কেউ কেউ। নৈতিকতার অবক্ষয় রোধেও তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষা এবং চর্চায়ও এগিয়ে আসতে হবে এই তরুণ সমাজকে। সর্বোপরি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অবিচল প্রত্যয় নিয়ে তারা আগামী নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে- এটিই প্রত্যাশিত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়