আমিন মুনশি: আব্বাস ইবনে ফিরনাস ছিলেন একজন মুসলিম বিজ্ঞানী। বার্বার বংশদ্ভূত আন্দালুসিয় মুসলিম পলিমেথ (বহুশাস্ত্রবিশারদ)। তার আসল নাম আব্বাস আবু আলকাসিম ইবনে ফিরনাস ইবনে ইরদাস আল তাকুরিনি। তিনি ৮১০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
মানুষের আকাশে উড়ার চেষ্টা অনেক আগের কথা। ইতিহাসের বিভিন্নকালে অনেক ব্যক্তিই এ চেষ্টা করেছে। তবে মানব ইতিহাসে প্রথম সফলভাবে আকাশে উড়ার স্বীকৃতি রাইট ভাতৃদ্বয়ের- যারা ১৯০৩ সালে প্রথম তাদের উদ্ভাবিত উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড়েন এবং সফলভাবে অবতরণ করেন। কিন্তু তাদের বহুপূর্বেই একজন মুসলিম বিজ্ঞানী প্রথম সফলভাবে আকাশে ওড়েন, যদিও তার অবতরণ সফল হয়নি।
তিনি ছিলেন একাধারে একজন আবিষ্কারক, প্রকৌশলী, উড্ডয়ন বিশারদ, চিকিৎসক, আরবি সাহিত্যের কবি এবং আন্দালুসিয় সুরকার। তিনি আন্দালুসিয়ার কর্ডোভায় বসবাস করতেন। এই বিজ্ঞানী ৮১০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাসে ইবনে ফিরনাস প্রথম ব্যক্তি যিনি সফলভাবে তার আবিস্কৃত যন্ত্রের সাহায্যে আকাশে উড়েছিলেন। তার আবিস্কৃত যন্ত্র নিয়ে তিনি স্পেনের কর্ডোভার উঁচু পাহাড় ‘জাবাল আল-আরুস’র চূড়া থেকে ঝাঁপ দেন। যেসব নির্ভরযোগ্য লেখক এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন তাদের মতে তিনি প্রায় পাখির মতই গ্রহণীয় মাত্রার দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তিনি প্রায় ১০ মিনিট আকাশে উড্ডয়ন করেন। তবে অবতরণের সময় তিনি পিঠে মারাত্মকভাবে আঘাত পান। এর কারণ, পাখিরা অবতরণের সময় লেজের ব্যবহার করে যার ব্যবস্থা তিনি তার যন্ত্রে রাখেননি।
আব্বাস ইবনে ফিরনাস তার আবিস্কৃত ঘড়ি ‘আল-মাকাতা’র জন্যও পরিচিত। তিনি স্ফটিক ও বালির সংমিশ্রনে উচ্চমানের স্বচ্ছ গ্লাস তৈরির প্রচেষ্টা চালান এবং চোখে দেখার অসুবিধা দূর করার জন্য লেন্স তৈরি করেন। জ্যোর্তিবিজ্ঞান চর্চার আগ্রহ থেকে তিনি একটি যান্ত্রিক সৌরজগতের মডেল তৈরি করেন যেখানে সকল গ্রহ-উপগ্রহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘূর্ণায়মান ছিলো। এছাড়া তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য বই রচনা করেছেন এবং জিরআব প্রতিষ্ঠিত কর্ডোভার সঙ্গীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবেও নিযুক্ত ছিলেন।
বিজ্ঞানজগতে তার অবদান ও সাফল্য তাকে পৃথিবীর জ্ঞানের ইতিহাসে একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তির মর্যাদায় ভূষিত করেছে। তার সম্মানে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের বিমানবন্দর সংলগ্ন সড়ক এবং স্পেনের কর্ডোভার একটি সেতু তার নামে ‘ইবনে ফিরনাস’ নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদের একটি জ্বালামুখের নামও তার নামে নামকরণ করা হয়েছে।