রাশিদ রিয়াজ : ফেসবুক স্ট্যাটাসে এক কঠিন প্রশ্ন তুলেছেন ইনডেপেনডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব ডিজিটাল মিডিয়া কাজী মহুয়া। তিনি তার স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ রোকেয়া হলে থাকার পর দ্বিতীয় বর্ষে ক্যান্টনমেন্টে আমার বড় বোনের কাছে চলে আসি। ক্যাম্পাসের বাসে উঠতে হলে রিক্সা ভাড়া ২০ টাকা দিয়ে আগে কচুক্ষেতে যেতে হতো। তাই সিএমএইচের সামনে থেকে ৪ নাম্বার লোকাল বাসে ৫ টাকা দিয়ে শাহবাগ, সেখান থেকে আরও ৫ টাকা দিয়ে রিক্সায় কলাভবন যেতাম! রোজ বাসে উঠেই খেয়াল করতাম জাহাঙ্গীর গেট পার হওয়ার পরপরই বাসচালক থেকে শুরু করে এতোক্ষণ ভদ্র হয়ে পাশে দাডিয়ে থাকা লোকগুলোর আচরণে কি ভয়ংকর পরিবর্তন! বেপরোয়া গাড়ি চালানো, গুতা ধাক্কা আর অশালীন আচরণ যেন শুধু ক্যান্টনমেন্টেই নিষেধ করা ছিল!!
আমরা যাত্রী থেকে চালক, সবাই নিয়ম মানি শুধু ক্যান্টনমেন্টে। আইন মানার জন্য শক্তি প্রয়োগই কি তাহলে আমাদের দুর্গতির একমাত্র সমাধান??
এই স্ট্যাটাসের ওপর মন্তব্যে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন মন্তব্য করেছেন, ‘ অবশ্যই। সারা পৃথিবীতেই তো কড়া ট্রাফিক আইন আর সিসি ক্যামেরা মানুষরে সভ্য বানাইছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস এগুলো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।’
কিন্তু ক্যান্টমেন্টও চলে তো রাষ্ট্রের আইনেই। রাষ্ট্রের আইন অন্য জায়গায় কেন সচল হয়ে ওঠে না। কাজী মহুয়ার প্রশ্নের ভেতরে এ প্রশ্নও জড়িয়ে আছে। আছে সামাজিক শিক্ষা, সাংস্কৃতিক অবস্থান, ধর্মীয় বিধি নিষেধ, পারিবারিক শিক্ষার বলয়গুলোর যার ভেতর দিয়ে মানুষ বড় হয়েও ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া অন্যত্র কেন অসংযত ও পশুর মত আচরণ করে।
হাসান শাহরিয়ার কল্লোল মন্তব্য করেছেন, ‘অনেকদিন আগে যখন জানছিলাম আইএসও সনদ পণ্যের মান দেখে দেয়া হয় না, দেয়া হয় ঐ পণ্য যে কোম্পানিতে বানানো হয় তার দক্ষতা দেখে, তখন বেশ অবাক হইছিলাম। কিন্তু পরে আস্তে আস্তে বুঝছি, যে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ভালো না তারা কখনো ভাল মাল বানাতে পারে না। আমাদের সব সমস্যার ব্যবস্থাপনার গলদ ও দুর্নীতি থেকে।
হাসান শাহরিয়ার কল্লোলের হয়ত মনে আছে এদেশের ছাত্র জনতা স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে ৯ বছর আন্দোলন করেছিল গণতন্ত্র মুক্তির জন্যে। এরপর গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি কতটা মজবুত হয়েছে, জবাবদিহীতা ও স্বচ্ছতা উপর থেকে নীচ পর্যন্ত কতটুকু নিশ্চিত হয়েছে তা দেখার জন্যে ক্যান্টমেন্ট যেতে হয় না অবশ্যই। আমাদের চারপাশই যথেষ্ট। তবু জানতে ইচ্ছা হয়, ক্যান্টমেন্টে সন্ধ্যার পর রিকশায় এখনো বাতি জালানো হয় কি না? ঢাকাসহ সারাদেশে তা কি হয়?
শাহালাহান শাহ মন্তব্য করেছেন, ‘আপু আমি যেদিন প্রথম ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতর দিয়ে যাই এই অবস্থা দেখে পাশের ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বন্ধু চিত্র তো পুরা চেঞ্জ, কোন ওভারটেক নেই, চিৎকার চেঁচামেচি নেই, সবায় সুশৃঙ্খল হয়ে চলছে। তো সেই ফ্রেন্ড হেসে বলেছিল, বন্দুকের নলই সকল ক্ষমতার উৎস- বাঙ্গালীর জন্য অনলি ডা-া ইজ রিয়াল। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হবার পর চিত্র সেকেন্ডের মধ্যে আপনি যেভাবে বললেন যেইকার সেই।
কিংবা যেই লোক বাইরের দেশে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে হলেও ডাস্টবিনে ময়লা ফেলে আসে সেই একই লোক দেশে যেখানে সেখানে চালিয়ে ফেলে। প্রায় ক্ষেত্র মিলিয়েই সারমর্ম এই, আমাদের জন্য অনলি দা-া ইজ রিয়াল।’
আপনার মতামত লিখুন :