শিরোনাম
◈ মালদ্বীপ থেকে সব সেনা সরিয়ে নিয়েছে ভারত ◈ গাজায় বোমা হামলা, চার ইসরায়েলি সেনা নিহত ◈ হায়দার আকবর খান রনো মারা গেছেন ◈ ডোনাল্ড লু’র ছয়দিনের সফর শুরু, ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ আসছেন ১৪ মে ◈ লোহাগড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের মৃত্যু ◈ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব পাস  ◈ জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টানা চার জয় বাংলাদেশের ◈ বন্দি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতনের তথ্য-ছবি ফাঁস ◈ গাজার রাফাহজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা ও বোমাবর্ষণ ◈ কোনো ভর্তুকি ছাড়াই নিজস্ব আয় থেকে উড়োজাহাজের মূল্য পরিশোধ করছে বিমান

প্রকাশিত : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১০:২৭ দুপুর
আপডেট : ২৮ জুলাই, ২০১৮, ১০:২৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বামপন্থিদের ভোটে টানতে উদ্যোগী আওয়ামী লীগ

ডেস্ক রিপোর্ট : জোটের পরিধি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোটে যুক্ত করতে প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তারা ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে। সম্প্রতি বেশ কিছু দল এই জোটে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অবশ্য বর্তমান শরিক দলগুলো বিপরীত আদর্শের এসব দলকে জোটে নেওয়ার বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। তবে এসব দল নির্বাচনী মেরুকরণে মহাজোট বা আওয়ামী লীগের অন্য কোনো ধরনের জোটে যুক্ত হলে তাতে 'আপত্তি নেই' বলেও জানিয়ে দিয়েছে শরিকরা।

একই সঙ্গে জোট-মহাজোটের বাইরের বামপন্থি দলগুলোকে নির্বাচনের মাঠে পাশে পেতে উদ্যোগী হয়েছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে বাম দলগুলো আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোটের বাইরে 'বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প' জোট গঠনের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছে। তাছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে এখনই তারা চূড়ান্ত কিছু বলতেও চাইছে না। বিষয়টি নির্বাচনকালীন পরিস্থিতির ওপরই ছেড়ে দিচ্ছে তারা।

ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও তার মিত্ররা আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতার সংকট হতে পারে। কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ আরও কিছু দাবিকে দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের চলমান আন্দোলনে যুক্ত করায় তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে কি-না, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলেও এক ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় যত বেশি সম্ভব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনতে চান নীতিনির্ধারকরা। এর অংশ হিসেবেই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার দেশের অন্যতম প্রধান বামপন্থি দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। টেলিফোনে কথা বলেছেন অন্য কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গেও।

সূত্রমতে, সম্প্র্রতি ক্ষমতাসীন জোটটির সঙ্গে বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৃণমূল বিএনপিসহ নয়টি রাজনৈতিক দলের মতবিনিময় হয়েছে। সভায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে হারাতে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে 'কাজ করার আগ্রহ' ব্যক্ত করেন নাজমুল হুদা।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অশুভ শক্তিকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করতে ৯টি দল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

তৃণমূল বিএনপি ছাড়া ১৪ দলে যুক্ত হতে আগ্রহী দলগুলো হলো- বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একামত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট এবং গণতান্ত্রিক জোট। তবে এসব দলের ১৪ দলীয় জোটে অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নে আপত্তি রয়েছে ১৪ দলের বর্তমান শরিকদের। তারা বলছেন, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ২৩ দফার ভিত্তিতে গঠিত ১৪ দলের নীতি-আদর্শের সঙ্গে এসব দলের কোনো মিল নেই। ফলে তাদের ১৪ দলে নেওয়া হলে জোটের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

নির্বাচন সামনে রেখে অন্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও আলোচনা শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের সচিবালয়ে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন।

জোটের পরিধি বাড়ানো প্রসঙ্গে মঙ্গলবার দলীয় ফোরামের বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাজনৈতিক জোট থাকলে তার পরিধি বাড়া স্বাভাবিক। আগামী নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, ততই দৃশ্যপটে কিছু কিছু পরিবর্তন আসবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে রাজনৈতিক মেরুকরণও হবে স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে তা কীভাবে হবে- সেটা দেখার জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বামপন্থিদের নির্বাচনে আনতে তৎপরতা :বামপন্থিদের আগামী নির্বাচনে আনার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার অনেকটা আকস্মিকভাবেই সিপিবি কার্যালয়ে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সেখানে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমের সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, কোটা সংস্কার আন্দোলন ও আগামী নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা হয় তার। এ সময় সিপিবিসহ আটটি দলের সমন্বয়ে সম্প্রতি গঠিত 'গণতান্ত্রিক বাম জোট' নিয়েও তাদের মধ্যে কথাবার্তা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তবে সিপিবির সঙ্গে ওই আলোচনায় ক্ষমতাসীন জোটে আসা কিংবা নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে কোনো আলোচনা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছেন দু'দলের নেতারাই। তাদের ভাষায় এটি ছিল 'সৌজন্য সাক্ষাৎ'।

ওবায়দুল কাদের মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, এটা 'আনুষ্ঠানিক আলাপ নয়', সৌজন্য সাক্ষাৎ। সিপিবির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলমও বলেছেন, এটি আসলে সৌজন্য সাক্ষাৎ। সিপিবি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দলের সঙ্গেও আলোচনা করবেন ওবায়দুল কাদের। দু-একদিনের মধ্যে গণতান্ত্রিক বাম জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন তিনি। অবশ্য ইতিমধ্যে বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন তিনি।

প্রায় এক বছর ধরে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার পর গত ১৮ জুলাই বামপন্থি দলগুলোর পৃথক দুই জোট সিপিবি-বাসদ এবং গণতান্ত্রিক বাম মোর্চাভুক্ত অন্য ছয়টি দলের সমন্বয়ে 'গণতান্ত্রিক বাম জোট' নামের নতুন জোট গঠিত হয়। সিপিবি ও বাসদ ছাড়া এই জোটের অন্য দলগুলো হচ্ছে- বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাসদ (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। জোট গঠনের পরপরই সিপিবি নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে সিপিবি, বাসদসহ ১৪ দলের বাইরের বাম দলগুলো অংশ না নেওয়ায় এবার তাদের নির্বাচনে আনতে আগ্রহ রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের।

আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে বামপন্থি দলগুলোর বেশ কিছু শর্তও রয়েছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে 'নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তদারকি সরকার' গঠন এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করে নির্বাচন দিলেই তারা ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। অবশ্য ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ভেতরে ভেতরে নির্বাচনের 'প্রাথমিক প্রস্তুতি' চলছে এসব বাম দলে।

জানতে চাইলে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সমকালকে বলেন, তারা এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপির দ্বিদলীয় ধারার বাইরে জনগণের বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থায় দেখা করার নামে বাম দলগুলো ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতায় যাচ্ছে- এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে সকলের বিরত থাকা উচিত। তবে বামপন্থিদের অবস্থান খুবই পরিস্কার। তারা ক্ষমতাসীন কিংবা কোনো বুর্জোয়া দলের সঙ্গে এ ধরনের সমঝোতায় যাবে না।
সূত্র : সমকাল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়