শিরোনাম
◈ বেনাপোল বন্দরে ২০টি বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ ভারতীয় ট্রাকচালক আটক ◈ ভারত- ইংল‌্যান্ড টেস্ট সি‌রি‌জে বাংলা‌দে‌শের  সৈকতের আম্পায়ারিং বিতর্ক ◈ প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, অ্যাসিড নিক্ষেপে শিশুসহ দগ্ধ ৩ ◈ বাংলাসহ বিশ্বের ৩৫ ভাষায় শোনা যাবে মক্কার জুমার খুতবা ◈ শাজাহানপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ কনষ্টেবলকে গণধোলাই  ◈ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন হুমকির মুখে: শিল্প, বিষ, পর্যটন ও জলবায়ুর প্রভাবে বিপন্ন জীববৈচিত্র্য ◈ উচ্ছেদের ৪৫ দিনের মাথায় ফের গজিয়ে উঠছে অবৈধ স্থাপনা: বাগেরহাটে সড়কপথে আবারও বিশৃঙ্খলা ◈ যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লাইটে ধস্তাধস্তির ভিডিও ভাইরাল, ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুবক গ্রেপ্তার ◈ মুরাদনগরে নিখোঁজের একদিন পর বড় ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার, মাটিচাপা অবস্থায় মিলল ছোট ভাইয়ের ঘরে ◈ ইরান কেন আমেরিকার কাছে নতিস্বীকার করে না: তাস‌নিম নিউজ এজ‌ন্সির প্রতি‌বেদন

প্রকাশিত : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ০৩:৪৮ রাত
আপডেট : ২৪ জুলাই, ২০১৮, ০৩:৪৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সত্য-মিথ্যার হিন্দু বৃদ্ধি

মাসুদ কামাল: বাংলাদেশে হিন্দু কমছে এমন কথা বহু বছর ধরে শুনে আসছি। কিছু হিন্দু যে দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যাচ্ছেন না, এমন দাবি করা যাবে না। আমার বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। জনসংখ্যার বিবেচনায় এটি একটি হিন্দু প্রবণ এলাকা। একসময় এখানে হিন্দু জমিদাররা ছিলেন। এখানকার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট বা বাজারের নাম দেখলেই অতীত ওই ঐতিহ্যের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এখান থেকে অনেক হিন্দুকে সপরিবারে আমি ভারতে চলে যেতে দেখেছি। আমার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যেও অনেকে তাদের পরিবারের সঙ্গে গেছে। অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, অন্তত আমাদের এলাকা থেকে কেউ বিতাড়িত হয়ে যাননি। যারা গেছেন- কিছুটা লোভে পড়েই গেছেন, ‘স্বজনদের’ মাঝে নতুন জীবনের আশায় ‘ওপার’ গেছেন।

তারপরও মুক্তগাছা পৌরসভা এলাকায় এখনো প্রচুর সংখ্যক হিন্দু আছেন। কেবল আছেন না, রীতিমতো দাপটের সঙ্গেই আছেন। তবে কিছু কিছু জায়গায় হয়তো এর উল্টা চিত্রও রয়েছে। সে রকম কথা মাঝে মধ্যে শুনি। নানা অত্যাচারের কারণে তারা নাকি ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এই চিত্রটি ব্যক্তিগতভাবে আমার অচেনা হলেও, অস্বীকারই-বা করি কি করে? কারণ, এই বক্তব্যের সমর্থনে নানা সময়ে বেশকিছু পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়। বলা হয়ে থাকে, দেশ বিভাগের পরপর, ১৯৫১ সালে এই ভূখ-ে মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশের মতো হিন্দু ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেটা দাঁড়ায় ১৪ শতাংশ। গত চার দশকে কমতে কমতে ২০১০ সালে সেটা ৮ শতাংশে নেমে যায়। এই সময়েই এমন কথা উচ্চারিত হতে থাকে যে, এখানকার মুসলমানদের অত্যাচারেই নাকি সব হিন্দুরা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাচ্ছে।

এমন সব চিত্রের বিপরীতে গেল সপ্তাহে পাওয়া গেল নতুন এক তথ্য- বাংলাদেশে নাকি হিন্দুর সংখ্যা বাড়ছে। কেবল সংখ্যাই নয়, শতাংশের হিসাবেই বাড়ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ তাদের রাজ্যসভায় গত বৃহস্পতিবার দিয়েছেন এই তথ্য। বলেছেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশে হিন্দু ছিল ৮ দশমিক ৪ শতাংশ, আর ২০১৭ সালে বেড়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ। শতাংশের হিসাবটা ঠিক বুঝতে পারছি না। যদি কেবল সংখ্যায় বাড়ত তাহলে বুঝতাম নতুন করে আর কেউ এ দেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে না, এবং পাশাপাশি যারা আছে তাদের ছেলেপুলে হচ্ছে, তাই সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শতাংশের হিসাবে বাড়ল কি করে? তাহলে কি এই কয় বছরে হিন্দুদের বংশবৃদ্ধি মুসলমানদের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়েছে? তা কি করে হয়! নাকি বিপুল সংখ্যাক হিন্দু বাইরে থেকে এখানে এসেছে?

সুষমা স্বরাজ এই হিসাবটা দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে পাওয়া তথ্য থেকে। তাহলে আমাদের পরিসংখ্যান বিভাগ কি ভুল তথ্য দিল? ভারতকে খুশি করতে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা ফিগার জানাল? সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগ এরকম করে নাকি? তাহলে সরকার যে কদিন পরপর অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিস্ময়কর সব তথ্য দেন, যেগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থাই সন্দেহ প্রকাশ করে, সেগুলোও কি ওই পরিসংখ্যান বিভাগেরই সরবরাহকৃত?

শত বছর আগে মার্কিন সাহিত্যিক মার্ক টোয়েন পরিসংখ্যান নিয়ে একটা মজার কথা বলেছিলেন। তার ভাষায় মিথ্যা তিন ধরনের- মিথ্যা, সর্বৈব মিথ্যা এবং পরিসংখ্যান। (There are three kinds of lies: lies, damned lies, and statistics) . হিন্দু বৃদ্ধির বিষয়টি কি সত্য, নাকি মিথ্যা? সত্য হলে, কিভাবে? আর মিথ্যা হলে তিন ধরনের মধ্যে কোনটি?
লেখক : সিনিয়র নিউজ এডিটর, বাংলাভিশন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়