শিরোনাম
◈ ওড়না কেড়ে নিয়ে পুরুষ কর্মকর্তাদের উল্লাস, নারী বন্দিদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ◈ রেকর্ড উৎপাদনের সুফল কোথায়? চালের বাজারের চালকের আসনে কারা? ◈ পবিত্র আশুরা আজ ◈ তরুণ ক্রিকেটার তানভীরের ফাইফারে সিরিজ সমতায় বাংলাদেশ ◈ 'শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দখল করেছে জামায়াত': গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ◈ ১৪ হাজার কোটি রুপি কেলেঙ্কারি, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার ভারতের নেহাল মোদি (ভিডিও) ◈ মোবাইল চুরির অভিযোগকে কেন্দ্র করে গ্রাম্য সালিস থেকে রক্তাক্ত ট্র্যাজেডি ◈ জাতীয় নির্বাচনে বাধা দেওয়ার শক্তি কারো নেই: কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমাবেশে সালাহ উদ্দিন আহমদের হুঁশিয়ারি ◈ তুর্কমেনিস্তানকে কাঁ‌পি‌য়ে দি‌লো বাংলা‌দেশ, এশিয়ান কাপে যাচ্ছে ঋতুপর্ণারা ◈ চী‌নে জু‌নিয়র হ‌কি‌তে একদিনে বাংলাদেশ পুরুষ ও নারী দ‌লের জয়

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০২:১১ রাত
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০২:১১ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

মৃত্যুহীন প্রাণ হুমায়ূন আহমেদ

নিউজ ডেস্ক: ২০১২ সালের প্রথম দিকের কথা অনেকেরই মনে থাকবে। বিভিন্ন ঘটনা ছাপিয়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ তো বটেই, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ উদ্বিগ্ন একজন ক্যান্সার আক্রান্ত লেখকের জন্য। সবার প্রার্থনা, তিনি যেন সেরে ওঠেন, লিখতে পারেন সেসব শব্দ, যা তাদের ভাসায় আনন্দে, দুঃখে, উদাসীনতায়। তার জন্য প্রার্থনা করেছিল লাখো কোটি মানুষ। কিন্তু সব প্রার্থনা তো কবুল হয় না। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। বিশ্বের ইতিহাসে খুব কম লেখক মানুষের এমন ভালোবাসা পেয়েছিলেন।

সম্ভবত ক্লাস সিক্সে থাকতে হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বই পড়ি বন্ধুর কাছ থেকে ধার করে। আগে শুধু সেবা প্রকাশনীর বই পড়েছি। লেখক সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। বইটি হিমুকে নিয়ে লেখা। কিন্তু যতই বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টেছি, ততই আনন্দ অনুভব করেছি,  প্রবেশ করেছি নতুন এক জগতে। কী অদ্ভুত সে জগৎ! এরপর শুধু হুমায়ূন আহমেদের বই খোঁজা। আমাদের মফস্বল শহরে দুটি লাইব্রেরি ছিল। তার মধ্যে একটি পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সাহিত্যের বইও রাখত। বই-খাতা-কলম কেনার কথা বলে, প্রাইভেটের টাকা মেরে, মায়ের কাছে আবদার করে হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতাম। প্রথমে হিমুকে নিয়ে লেখা বই খুঁজেছি। এরপর ধীরে ধীরে বাকিগুলোর দিকে নজর পড়ে। কিন্তু নতুন বইয়ের দাম বেশ, তাই সহজ ছিল না কেনা। পার্বতীপুরে পড়াশোনা করার সময় জানতে পারলাম, রংপুরে কম পয়সায় পুরনো বই কিনতে পাওয়া যায়। ট্রেনে চেপে ছাত্র পরিচয়ে বিনে পয়সায় রংপুর যেতাম বই কিনতে। হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতাম, সঙ্গে অন্যান্য। হাজারো পাঠকের অভিজ্ঞতা হয়তো এমনই।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা পড়েছে, আর বৃষ্টি কিংবা জ্যোত্স্নার জন্য মন কেমন করেনি কিংবা একবারও হিমুর মতো পাগলামি অথবা মিসির আলীর মতো রহস্যভেদ করতে ইচ্ছা করেনি, এমন পাঠক বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। হুমায়ূন আহমেদ শুধু মানুষের মনই জয় করেননি, গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে জীবনকে উপভোগ করার মন্ত্র শিখিয়ে গেছেন। তাই তো বর্ষায় আমাদের কদমফুলের কথা মনে পড়ে।

হুমায়ূন আহমেদ শুধু গল্প-উপন্যাসই লেখেননি। গান লিখেছেন, সুর করেছেন, নির্মাণ করেছেন নাটক-চলচ্চিত্র। তার লেখা যেমন বাংলা সাহিত্যের দিক পরিবর্তন করেছিল, তেমনি তার নাটক দেখে মানুষ হেসেছে-কেঁদেছে। আর বাকের ভাইয়ের ফাঁসির বিরুদ্ধে মিছিল বের হওয়ার ঘটনা সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে অদ্বিতীয়।

কেন তার সৃষ্টি মানুষকে এভাবে ছুঁয়েছিল, কেনইবা তাকে তারা এত ভালোবাসে? এর উত্তর হতে পারে, তিনি মানুষকে মানবতার নতুন রূপ দেখিয়েছিলেন। তার চরিত্রগুলো ভালো-মন্দ হতে পারে, তবে কেউ মানবিক অনুভবের বাইরে নয়। সহজ-সরল লেখনী আর হাস্যরসের মাধ্যমে নিজ লেখায় রূঢ় বাস্তবতাকে ধারণ করেছেন। তার সৃষ্টি মানুষকে বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়নি, বরং নতুন দৃষ্টিতে চিনতে শিখিয়েছে।

‘নন্দিত নরকে’র ভূমিকায় প্রখ্যাত গবেষক ড. আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, ‘পড়ে আমি অভিভূত হলাম। গল্পে সবিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করেছি একজন সূক্ষ্মদর্শী শিল্পীর, একজন কুশলী স্রষ্টার পাকা হাত। বাঙলা সাহিত্যক্ষেত্রে এক সুনিপুণ শিল্পীর, এক দক্ষ রূপকারের, এক প্রজ্ঞাবান দ্রষ্টার জন্মলগ্ন যেন অনুভব করলাম।... বিচিত্র বৈষয়িক ও বহুমুখী মানবিক সম্পর্কের মধ্যেই যে জীবনের সামগ্রিক স্বরূপ নিহিত, সে উপলব্ধিও লেখকের রয়েছে।’ আহমদ শরীফের এ অনুভব কতটুকু সঠিক ছিল, তা আমরা আজ জানি। হুমায়ূন আহমেদ তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে বেঁচে থাকবেন দীর্ঘদিন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়