শিরোনাম
◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ বিশ্ববাজারে সোনার সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ চেক প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিচার শুরু ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ প্রফেসর ইউনূসকে প্রদত্ত "ট্রি অব পিস" প্রধানমন্ত্রীকে প্রদত্ত একই ভাস্করের একই ভাস্কর্য: ইউনূস সেন্টার ◈ নির্বাচনী বন্ড কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি: অর্থমন্ত্রীর স্বামী ◈ কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে দেশে ফিরলেন ভুটানের রাজা ◈ জনগণকে সংগঠিত করে চূড়ান্তভাবে বিজয় অর্জন করতে হবে: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৬:২৯ সকাল
আপডেট : ১৯ জুলাই, ২০১৮, ০৬:২৯ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কোনো দেশের সঙ্গে মিলছে না বাংলাদেশের পদ্ধতি

ডেস্ক রিপোর্ট  : বিভিন্ন দেশে কোটা পদ্ধতি চালু আছে শুধু সমাজে পিছিয়ে পড়া বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য। তবে তাও এ দেশের মতো দীঘর্ মেয়াদে নয়।  বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা, নারী, জেলা, উপজাতি ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকলেও বিশে^র কোনো দেশেই এ ধরনের কোটা পদ্ধতি নেই। বিভিন্ন দেশে কোটা পদ্ধতি চালু হয়েছে শুধু সমাজে পিছিয়ে পড়া বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর জন্য। তবে তাও বাংলাদেশের মতো দীঘর্ মেয়াদে নয়। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেশী ভারতেও সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। কোটা চালুর পর ভারতের সুপ্রিমকোটর্ সুস্পষ্ট রায় দেয় যে, এই কোটা পদ্ধতি পঁাচ বছরের বেশি রাখা যাবে না। পরবতীের্ত ভারতের সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা ব্যবস্থার সময়সীমা বাড়ানো হয়। কিন্তু ভারতের সুপ্রিমকোটর্ পরবতীের্ত আবারও জানিয়ে দেয়, কোটা ৫০ শতাংশের নিচে রাখতে হবে। ভারতের সবর্ত্র সেটা কাযর্কর রয়েছে। এছাড়া ভারতে কোটার জন্য রয়েছে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা।

একটি পরিবারের মাত্র একজনই কোটা সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন। যদি কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য কোটা গ্রহণ করেন তবে তিনি চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবেন না। পাকিস্তানের কোটা পদ্ধতি নিধার্রণ করা হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংখ্যা ওপর নিভর্র করে সেই অনুপাতে কোটা সুবিধা প্রদান করা হয়। পাকিস্তানের কোটা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যৌক্তিক পরিমাণ মানুষ যেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। মালয়েশিয়াতে বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় ও চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। তাদের কোটা পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য হলোÑ সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমতা এবং পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে আনা। ফলে মালয় মুসলিমদের (ভূমি পুত্রা) সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা রয়েছে। অন্যদের যেমন চীনা, ভারতীয়, স্বদেশজাত ও বাকিদের জন্য রয়েছে ৪০ শতাংশ। তবে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে মোট জনসংখ্যার হিসাবে ভাগ করা হয়। মালয়েশিয়াতে সরকারি চাকরির চেয়ে বেসরকারি চাকরিতে বেতন-ভাতার সুবিধা বেশি হওয়ায় কোটা নিয়ে আগ্রহ নেই সেদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি ভিসা নামক কোটা চালু ছিল, কিন্তু বাঙালি জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়ার পর ডিভি তুলে দেয় সেই দেশের সরকার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে মোট ১০ বছর রেড ইন্ডিয়ানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা বিদ্যমান ছিল। কানাডায়ও রয়েছে কোটা। তবে সে কোটা প্রয়োগ হয় প্রকৃত অনগ্রসর জনগোষ্ঠীদের জন্য। তবে সেদেশে কখনই মেধার চেয়ে কোটা বেশি দেয়া হয় না।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে সরকারি চাকরি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিটি কোটা চিরস্থায়ীভাবে ফিক্সড হয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কোটা সংস্কারের কোনো পুনমূর্ল্যায়ন না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভতির্, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ ও পদোন্নতিসহ সবক্ষেত্রে চালু করা হয়েছে কোটা পদ্ধতি। এছাড়া কোটার পদ সংরক্ষণসহ পরবতীের্ত আরও বাড়ানো হয়েছে অনেক সুযোগ-সুবিধা। অথচ কোটা সংখ্যা কমানো নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছে বহুবার। কিন্তু কোনো সরকারই কোটা পদ্ধতির সংস্কার করেনি। বরং বিভিন্ন সময়ে এর পরিমাণ আরও বাড়িয়েছে। ফলে দীঘির্দনের দাবি থেকে সেটি এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষাথীর্রা আন্দোলন করে আসছেন। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটা এদেশে অসংখ্য সুবিধাভোগী ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ কোটা থাকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ দিয়ে ভতির্ হবার অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি সরকার বারবার গেজেট দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও পরিবতর্ন করেছে। অথচ পৃথিবীর অনেক দেশেই মুক্তিযোদ্ধা আছে, কিন্তু কোটা কোথাও নেই। জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সব জনগোষ্ঠীকে সমানভাবে সুযোগ-সুবিধা দেয়ার জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে একক জনগোষ্ঠী বাঙালি (উপজাতি ছাড়া) থাকা সত্তে¡ও কোটা বিভাজনের মাধ্যমে বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের সবের্শষ আদমশুমারি অনুযায়ী মুসলমান ৯০ দশমিক ৪ শতাংশ, হিন্দু ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, বৌদ্ধ শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, খ্রিস্টান শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ, অন্যান্য জনসংখ্যা শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পযাের্লাচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সরকারের গঠিত কমিটির সাচিবিক দায়িত্বে থাকা কমর্কতার্ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবুল কাশেম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন যায়যায়দিনকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের অনেককিছুই মিলবে না। কারণ, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট একরকম, অন্য দেশের প্রেক্ষাপট অন্যরকম। তবে কোটা পযাের্লাচনা কমিটি বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা ভালোভাবে পযাের্লাচনা করতে চায়।

এদিকে বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ (১) ধারায় বলা আছে, ‘প্রজাতন্ত্রের কমের্ নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে।’ তবে ২৯ (৩) (ক) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশকে প্রজাতন্ত্রের কমের্ উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভের উদ্দেশ্যে তাদের অনুক‚লে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারে। নাগরিকদের অনগ্রসর অংশকে অগ্রগতির মূল স্রোতধারায় আনয়নের জন্য ১৯৭২ সালে এক নিবার্হী আদেশের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। তৎকালীন সংস্থাপন বিভাগের সচিব এম এম জামান স্বাক্ষরিত আদেশের শুরুতেই বলা হয়, সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে এ কোটা পদ্ধতি নিধার্রণ করা হচ্ছে। তবে মুজিবনগর কমর্চারী ও পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত কমর্চারীদের ক্ষেত্রে এ আদেশ বলবৎ হবে না। এসবই হচ্ছে সাময়িক ব্যবস্থা। সময় এবং সাবির্ক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পুনবিের্বচনার সুযোগ রয়েছে। ওই আদেশটি সরকারি কমর্ কমিশনের জন্যও প্রয়োগযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক সাভির্স কমিশনে ২৫৮টি কোটা রয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই এমন উদ্ভট সিস্টেম নেই। বাংলাদেশের ক্যাডার নিয়োগে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোটা সিস্টেম। এর কারণে মেধাবীরা চাকরি পাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের সংবিধানে কোটা চালু হয়েছে দরিদ্রদের উপরে তুলে নিয়ে আসার জন্য; কাউকে পুরস্কৃত করার জন্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা সিস্টেম চালু হয়েছিল। কারণ, তাদের অবস্থা তখন খারাপ ছিল। কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধার নামে যে কোটা দেয়া হয় তা নিতান্তই অমূলক। আকবর আলি খান আরও বলেন, কোনো দেশেই অনিদির্ষ্ট সময়ের জন্য কোটা ব্যবস্থা চালু রাখার নিয়ম নেই। কোটার কারণে দেশের মেধাবীরা আজ বিপন্ন।

কোটা বন্ধ হলে অনেক মেধাবীই চাকরি পাবে। উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ১৯৭৬ সাল পযর্ন্ত সিভিল সাভিের্স ২০ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। পরবতীের্ত ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ২০ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। ১৯৮৫ সালে আবার একে ৪৫ শতাংশে উন্নীত করা হয়। তবে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে-সাভির্স কমিশনের একজন সদস্য বাদে সবাই সরকারি নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার বিরোধিতা করেন। তখন কোটার পক্ষে অবস্থা নেয়া এমএম জামান প্রচলিত কোটাগুলো প্রথম ১০ বছর বহাল রেখে ১৯৮৭ সাল থেকে পরবতীর্ ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে দশম বছরে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু পরবতীের্ত ১৯৯৭ সালেই এই কোটা ব্যবস্থাকে আরও সম্প্রসারিত করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করা হয়। যায়যায়দিন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়