শাহ্ মুহাম্মদ আরিফুল কাদের: পাপ মোচনে মুক্তির পথ ‘তওবা’। ‘তওবা’ অর্থ আত্মগ্লানি, অনুশোচনা, ফিরে আসা, অসহায় বিব্রত হওয়া, পাপ কাজ ত্যাগ করা ইত্যাদি। অন্য কথায় কৃত অপকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, ভবিষ্যতে এমন অপকর্মে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে তা ছেড়ে দেওয়া এবং আন্তরিক একাগ্রতায় মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
পাপ পরিহার ও অনুতাপের তাৎপর্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ তা‘য়ালা ইরশাদ করেন “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর (অনুতপ্ত হয়ে ফিরে এসো)। তবেই তোমরা সফলকাম হবে”। [সূরা নূর : ৩১] মিথ্যা, মোহ, বিভ্রান্তি, অর্থ, বস্ত্র, মুক্তি সমর্থনের দাপটে মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হয়। আবার যখন নিজের ভুল বুঝে অনুতপ্ত হয়, তখন আল্লাহও ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনের ভাষায় “আল্লাহ অবশ্যই সেসব লোকদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত: মন্দ কাজে লিপ্ত হয়। এরাই তো তারা যাদের আল্লাহ ক্ষমা করবেন”। [সূরা নিসা : ১৮] মহান আল্লাহর নাম ‘গাফফার’ (ক্ষমাশীল)। এ জন্যই তিনি বান্দাকে ক্ষমা করতে ভালবাসেন। আর বান্দার জন্য ক্ষমা প্রাপ্তির শর্ত হলো ‘তওবা’। প্রিয়নবী সা. বলেন, আদম সন্তান সবাই পাপ করে থাকে, আর পাপীদের মধ্যে তারাই সবচেয়ে ভাল যারা বেশি বেশি তওবা করে। [সহিহ তিরমিযি]
তওবার এমনই সুফল যে, বান্দা হয় শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ মুক্ত মুগ্ধ। আল্লাহর হাবিব সা. ইরশাদ করেন, পাপ করে যে ব্যক্তি ‘তওবা’ করে সে যেন এমন হয়ে যায়, যেন তারা কোনো পাপই করেনি। [মেশকাত শরীফ] পাপহীন পবিত্র জীবনের প্রত্যাশা হল ‘তওবা’র মূল চেতনা। তাই পাপের কারণে মহান আল্লাহর রহমতের ব্যাপারে নিরাশ হতে নেই। মহান আল্লাহর বানী “হে রাসুল সা. বলুন! হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহ তা‘য়ালার রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ তা‘য়ালা মানুষের সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু”। [সূরা আয্ যুমার : ৫৩]
সে জন্যই পাপ যতই পুরাতন ও ভয়াবহ হোক না কেন, নিরাশ না হয়ে মহান প্রভূর দরবারে নিজেকে উৎসর্গ করে তওবা করলে তা দূরীভূত করার আশা করা যায়। মহানবী সা. ইরশাদ করেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে ব্যক্তি গোনাহের জন্য তওবা করবে, তার তওবা আল্লাহ পাক কবুল করবেন। [সহিহ মুসলিম]
মহান আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষ পাপের কারণে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক তা কাম্য নয়। এজন্যই নানান ইবাদতের উচ্চ মর্যাদা ও ক্ষমার মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দার জন্য তাঁর রহমতকে অবারিত করেন। তাই সে তওবার মাধ্যমে যেমন পাপ মোচন হয় ঠিক তেমনি মানুষের আধ্যাত্মিক মুক্তিরও সম্ভব হয়। তাই আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন “যারা অনুতাপ করে, উপাসনা করে, আল্লাহর প্রসংশা করে, সাওম পালন করে, রুকু ও সিজদা করে (সালাত আদায় করে), সৎকাজে আদেশ এবং অসৎকাজে নিষেধ করে এবং আল্লাহর বিধানের সীমারেখা সংরক্ষণ করে, হে মুহাম্মদ! আপনি এসব বিশ^াসীদের শুভ সংবাদ দিন”। [সূরা তাওবা : ১১২]