আমিন মুনশি : আরবি 'তাকওয়া' শব্দের আভিধানিক অর্থ আল্লাহভীতি, পরহেজগারি, দ্বীনদারি, আত্মশুদ্ধি, নিজেকে কোনো বিপদ-আপদ বা অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা প্রভৃতি। শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর ভয়ে সব ধরনের অন্যায়-অনাচার ও পাপাচার বর্জন করে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশ অনুযায়ী মানবজীবন পরিচালনা করার নামই তাকওয়া।
ইসলামে তাকওয়ার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান কোনো কাজ নেই। দ্বীনের প্রাণশক্তিই তাকওয়া। বান্দার মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ঘোষণা করেন, ‘হে মুমিনগণ তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর; যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।’
প্রতিটি কাজের জন্য সর্বদ্রষ্টা ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে জবাবদিহির অনুভূতি তাকওয়ার দাবি। আর এটাই রোজার উদ্দেশ্য। বান্দা সারাদিন রোজা রাখে কেবল আল্লহকে ভয় করে বলেই। যে কেউ চাইলে গোপনে কিছু খেতে পারে কিন্তু আল্লাহর ভয়ে তা করে না। তাকওয়ার উত্তম শিক্ষা আমরা রোজার মাধ্যমেই পাই।
রাসুলুল্লাহ (সা.) যা করতে বলেছেন তাকওয়াবান ব্যক্তি তা করেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করেন। তাই কোনো রোজাদার মুমিন মুত্তাকি কখনও তিরস্কার, ব্যঙ্গোক্তি, অবজ্ঞা, দাম্ভিকতা, গর্ব-অহঙ্কার, কটূক্তি, দম্ভোক্তি, কুৎসা রটনা, হিংসা-বিদ্বেষ, ঘৃণা তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে না। সে কখনও দুরাচার, পাপিষ্ঠ, কদাচার, দুশ্চরিত্র, দুস্কর্ম ইত্যাদির সঙ্গে সংশ্নিষ্ট হতে পারে না।
পবিত্র কোরআনে সুরা হুজুরাতে আল্লাহ বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাকি।' আর মুত্তাকিদের সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সুরা বাকারার ১৭৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, 'যারা নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত প্রদান করে এবং যারা প্রতিশ্রুতি সম্পাদনকারী এবং অর্থ সংকটে, দুঃখ-কষ্টে ও সংগ্রাম-সংকটে ধৈর্য ধারণকারী, এরাই তারা যারা সত্যপরায়ণ এবং এরাই মুত্তাকি।
আর তাকওয়া সম্পন্ন ব্যক্তিকে বলা হয় মুত্তাকি। মুত্তাকিদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘যে ব্যক্তি শিরক, কবিরা গুনাহ, অশ্নীল কাজকর্ম এবং কথাবার্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখে তাকে মুত্তাকি বলা হয়। তাকওয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ছয়টি। যথা- ১. সত্যের সন্ধান, ২. সত্য গ্রহণ, ৩. সত্যের ওপর সুদৃঢ় ও সুপ্রতিষ্ঠিত থাকা, ৪. আল্লাহভীতি, ৫. দায়িত্ব সচেতনতা বা দায়িত্বানুভূতি ও ৬. আল্লাহর নির্দেশ পালন। সিয়ামের সঙ্গে রয়েছে তাকওয়ার নিবিড় যোগসূত্র। রোজা মানুষের মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলি সৃষ্টি করে। বছরের এক মাসব্যাপী সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য নিছক উপবাস থাকা নয়, এর মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা। ফলে সমাজজীবনে মানুষ যাবতীয় অন্যায় ও অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে এবং সৎ কাজ করার জন্য অগ্রসর হতে পারে। মাহে রমজানের সিয়ামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হচ্ছে তাকওয়া ও হৃদয়ের পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমিন।