মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ: মাহে রমজান মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে তার বান্দাদের জন্য একটি বিশেষ উপহার, একটি বিশেষ সুযোগ। যেমনিভাবে ব্যবসায়ীদের বিশেষ সময়ে বিশেষ দ্রব্যের ব্যবসা অধিক লাভজনক হয়, তেমনি রমজানে ইবাদতে একজন মুমিন বান্দার জন্য অধিক লাভজনক। মুসলমান প্রাপ্ত বয়স্ক নর-নারীর জন্য রোজা রাখা ফরজে আইন। অস্বীকার করলে কাফের ও না রাখলে ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, রোজা মুমিনের জন্য ঢাল স্বরূপ। (বুখারী: ১৯০৪)। ঢাল যেমন একজন যুদ্ধাকে তীর, গুলী বা যে কোনো রকম নিক্ষেপণ অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমন রোজাও একজন মুমিন ব্যক্তিকে সবধরনের গুনাহ থেকে হেফাজত করে। মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে রোজাদারের মর্যাদা এত বেশী যে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের দিন রোজাদারের জন্য রাইয়ান নামক দরজা থাকবে, যার ভেতর দিয়ে কেবল রোজাদাররা বেহেশত প্রবেশ করবে। এ ছাড়া অন্যকেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। (বুখারী :৩৪০৪)। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে যখন বান্দা যখন ইফতার সামনে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করে, সেই দৃশ্য দেখে আল্লাহ পরম আনন্দ লাভ করেন। আর ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করতে থাকেন। সংযম এবং আত্মশুদ্ধির প্রশিক্ষণ হিসেবে রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
কুরআন অবতীর্ণের মাস রমজানুল মুবারকে আল কুরআনের আদেশ নিষেধ জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে পানাহার, ব্যভিচার, কামাচার, পাপাচার তথা মহান আল্লাহ তায়ালার মর্জির বিপরীত সকল নিষিদ্ধ কর্ম হতে ব্যক্তি জীবনে বিরত থাকা। নিজের পরিবারের সকল সদস্যকে আল্লাহর তরফ হতে অবতীর্ণ আল কুরআন ও আল কুরআনের জীবন বিধানের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠাতা কুরআনের জীবন্ত প্রতীক রাসুল (সা.) কর্তৃক নিন্দনীয় ও বর্জনীয় সকল ক্রিয়াকা- থেকে বিরত রাখা। আর মুসলিম বৃহত্তম জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত সমাজ ও রাষ্ট্রকে আল্লাহ ও রাসুল কর্তৃক অশ্লীল ও নিষিদ্ধ সকল কর্মতৎপরতা মানব রচিত আইন ও অপসংস্কৃতি হতে বিরত করার লক্ষ্যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, হে ইমানদারগণ ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিল। যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। আর তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে পারো; কেননা তিনি তোমাদের হেদায়েত দান করেছেন, যেন তোমরা আল্লাহর শুকর আদায় করতে পারো।(সূরা বাকারা: ১৮৩ ও ১৮৫ )
এ রোজা অর্থাৎ সারাদিন অনাহারে থাকাসহ সংযমী জীবন-যাপনের মাধ্যমে তার মাঝে খারাপ দোষগুলো নিস্তেজ হয়ে ফেরেশতা সুলভ উত্তম গুনাবলী বিকশিত হয়। মানুষের মধ্যে এ উত্তম চরিত্রের গুণাবলি যত বেশি বিকশিত হবে,সমাজে তত বেশি শান্তি-শৃংখলা ও সপ্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে। রোজার মাধ্যমে মানুষের মাঝে উত্তম গুণাবলী সৃষ্টি ও সমাজে তার প্রতিপালন সম্পর্কে সায়্যিদ আবুল হাসান আলী নদভী বলেছেন, 'দেহ ও আত্মায় মিলিত ও ভারসাম্যপূর্ণ শক্তি ব্যতীত খিলাফতের এ গুরুদায়িত্ব পালন করা মানুষের পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। তাই মহা প্রজ্ঞার অধিকারী,বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক মানব জাতির আধ্যাতিক প্রশিক্ষণের জন্য নাজিল করেছেন সিয়ামের বিধান।’ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ তার ভেতরের পাশবিক শক্তি ও ভোগবাদী মানসিকতা কিছু পরিমাণে দমন করতে সক্ষম হয়। নফস ও প্রবৃত্তির সকল প্রলোভন ও প্ররোচনায় সব মুকাবিলা ও কার্যকর প্রতিরোধ সৃষ্টি করা অতি সহজ হয়। রোজার মাধ্যমে তার ইমান ও আধ্যাত্মিকতার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি অর্জন করে এবং ঝিমিয়ে পড়া আত্মা পুনরুদ্ধার করে তার হৃদয়ে উষ্ণতা একটু সজিবতা ছড়িয়ে দিতে পারে।
লেখক: শিক্ষাসচিব, বাইতুন নূর মাদ্রাসা ঢাকা।