আসিফুজ্জামান পৃথিল : মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশমুখি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু স্রোত গোটা অঞ্চলের জন্য একটি অভিন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বলে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা মনে করেন। ভারতের আগরতলায় বার্তা সংস্থা আইএএনএস’র সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে তিনি এ কথা বলেছেন।
শ্রিংলা বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে দলে দলে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ শুধু বাংলাদেশ নয় বরং গোটা অঞ্চলের জন্য একটি গুরুতর ও অভিন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজেই এই সমস্যাটি তুলে ধরার চেষ্টা করছে। তারা সমস্যাটি জাতিসংঘের কাছে তুলে ধরেছে। মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকার সমস্যাটি নিরসনে বহুজাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও কাজ করে যাচ্ছে।
হাই কমিশনার আরো বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার চুক্তি করেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি অভিন্ন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করলেও তা একটি মানবিক সংকটও বটে।
বাংলাদেশে দক্ষিণঞ্চলে এখন পর্যন্ত ১.১৫ মিলিয়ন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছে। গতবছর আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ শুরু করলে রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে আশ্রয় নেয়।
বাংলাদেশে চরমপন্থীদের তৎপরতা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতীয় দূত বলেন যে সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করছেন।
শ্রিংলা বলেন, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে সক্রিয় রয়েছে। এরপর আর কোন বড় ঘটনা ঘটেনি। এই সমস্যা রাতারাতি সমাধান হবে না। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, গভর্নর তথাগত রায় এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার সেখানে যান হাই কমিশনার।
তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কানেকটিভি, দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, বাংলাদেশে ভারতীয়দের হয়রানিমুক্ত চলাচল, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকা- নিয়ে আলোচনা করেন।
ভারতীয় দূত বলেন, শুধু নিজ ভূখ-ে নয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা জোরদারের জন্য বাংলাদেশ কাজ করেছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ঢাকায় বিনিয়োগ সম্পর্কে দূত বলেন যে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্থায়ী ও টেকসই।
শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ও অংশীদারিত্ব সহযোগিতা, পারস্পরিক লাভ ও পরস্পরের প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।
তিনি জানান যে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিভিন্ন খাতে ১১১টি চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশকে ভারত ৮ বিলিয়ন ডলার ‘লাইন অব ক্রেডিট’ দিয়েছে।
২০১৬-১৭ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো ৭.৫ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ সরকারকে ৩.৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের কাছে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করা হচ্ছে বলেও হাই কমিশনার উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশ থেকে ১০ গিগাবাইট ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ আমদানি করতে ভারত তৃতীয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে নির্মাণ করছে। এজন্য আগরতলার অপরপাশে বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৯ সালে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন প্রসঙ্গে শ্রিংলা বলেন, এটা সেদেশের অভ্যন্তরিণ ব্যাপার। -সাউথ এশিয়ান মনিটর