শিরোনাম
◈ চট্টগ্রামে জুতার কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৮ ইউনিট ◈ জিয়াও কখনো স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেনি, বিএনপি নেতারা যেভাবে করছে: ড. হাছান মাহমুদ ◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৫৪ সকাল
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০১৮, ০৮:৫৪ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

বিএনপিতে ‘আতঙ্ক’

ডেস্ক রিপোর্ট : বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি-দাওয়া আদায় ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে বিএনপি যতই অগ্রসর হচ্ছে, গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামি হওয়ার আতঙ্ক নেতাকর্মীদের ততই ঘিরে ধরছে।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকার দলটিকে কৌশলে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে দেশব্যাপী আবার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে। রাজপথে আন্দোলন না থাকলেও তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের ‘টার্গেট’ করে কখনো নতুন মামলা, আবার কখনো পুরনো মামলায় ‘অজ্ঞাতনামা আসামি’ হিসেবে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে। নেতাকর্মীরা মামলায় জামিন নিতে আদালতে হাজির হলেই তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কিছু কিছু মামলার অভিযোগপত্রও দ্রুতগতিতে দেওয়া হচ্ছে।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ‘নির্ঘুম রাত’ কাটছে দলের নেতাকর্মীদের। সমানতালে বেড়েই চলছে পুলিশি হয়রানি। হয়রানিমূলক মামলায় আইনি মোকাবিলায় আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। তারেক রহমানের নাগরিকত্ব ইস্যু, খালেদা জিয়ার অসুস্থতায় সরকারের অবস্থান ও সমালোচনাসহ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গুম, খুন ও গ্রেফতারের আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে নেতাকর্মীদের।

বিএনপির তথ্য সেল সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে ৭২ হাজার ৭৪৩ মামলায় ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩৩ জন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থককে আসামি করা হয়। একই সময়ের মধ্যে ৭৮২ জন খুন ও ১০৪ জন গুম হয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলায় অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা আরও ২৬ লাখ। পরিস্থিতি এমন যে, বিএনপির নেতাকর্মীদের এসব মামলায় সহায়তা করতে দলের আইনজীবীদেরও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

বিএনপির কিছু সূত্র জানিয়েছে, রাজপথে সক্রিয় বেশ কিছু নেতাকর্মী গ্রেফতার ও হয়রানি আতঙ্কে বাড়ি ছাড়া, কেউ কেউ আত্মগোপন করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু প্রিয়.কমকে বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে এক ধরনের অস্থিরতায় ভুগছে। কারণ তারা উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে জনগণের গ্যাঁড়াকলে পড়ে গিয়েছেন। সেখান থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে ব্যর্থতার মূল ইস্যু ধামাচাপা দিতে মিথ্যা মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। যদিও এইসব করে সরকার কখনো নিজের দায় এড়াতে পারবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘সরকারের নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্যই নেতাকর্মীরা কিছুটা জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন, আত্মগোপন নয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে ধরে নিয়ে রিমান্ড দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য, ইচ্ছেমতো অত্যাচার করা। তবে রাজনীতিতে জামিন নামঞ্জুর নতুন ঘটনা নয়। ইদানীংকালে যেহেতু সরকার জনবিছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই জনদৃষ্টি সরাতে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পুরনো মামলায় আটকে রাখতে চাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দুজন কর্মচারী প্রিয়.কমকে জানান, গ্রেফতার হতে পারেন এমন আশঙ্কা থেকেই নেতাকর্মীদের মধ্যে কার্যালয়ে অবস্থানে অনীহা সৃষ্টি হচ্ছে। সিনিয়র, জুনিয়র কিংবা অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। সবসময় উৎসবমুখর কার্যালয় ঘিরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে এখন বিরাজ করছে গ্রেফতার-আতঙ্ক। নেতাকর্মীরা হয়তো সে জন্যই সহজে কার্যালয়মুখী হতে চাচ্ছেন না। এলেও খুব অল্প সময়ের জন্য।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রিয়.কমকে বলেন, ‘বিএনপির একটাই লক্ষ্য, যেকোনো মূল্যে কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসা। সরকার সহজে মুক্তি দেবে না জানি, এর জন্য আমাদের আরও প্রস্তুতি নিতে হবে। তারপর হয়তো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। কারণ আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে বিশেষত শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। আর সেটা আন্দাজ করতে পেরেই সরকার নানান ধরণের অপপ্রচারের আশ্রয় নিয়েছে। তাদের প্রতি জনগণের আস্থা নড়বড়ে অবস্থায় চলে আসায় নিজেদের বাঁচাতে বিরোধী দল দমনে আদালতকে ব্যবহার করতেও পিছপা হচ্ছে না।’

ওই নেতা বলেন, ‘রাজনীতি শব্দটাই তো এক ধরনের আতঙ্ক। সেখানে মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখানো আজকালের জামানায় অচল। মূলত ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করছে। তাদের জনপ্রিয়তা এতটাই তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে যে, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি ক্ষমতায় চলে আসবে। এমন আশঙ্কা থেকে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অন্যায়-অবিচার ও নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। তারপরও বলব, বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হওয়ার আতঙ্কে নয়, বরং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় বিএনপি নামক একটি রাজনৈতিক দলের আতঙ্কে রয়েছে।’

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদীন ফারুক মনে করেন, সরকার বিএনপিকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতেই জামিন নামঞ্জুর, ‘অজ্ঞাতনামা’ করে মামলায় গ্রেফতার ষড়যন্ত্র করছে।

জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, ‘যেখানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে একটি অহেতুক মিথ্যা মামলায় কারাগারে থাকতে হচ্ছে, সেখানে লক্ষ বিএনপি নেতাকর্মীকে জেলে নিলেও কিছুই যায় আসে না। আমরা চাই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। তাকে জেলে নিয়ে কাজ হবে না। কারণ দেশের জন্য খালেদা জিয়া এবং খালেদা জিয়ার জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ শুধুমাত্র জেলে যেতেই নয়, জীবন দিতেও প্রস্তুত।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কৌশল পরিবর্তন করায় রাজনৈতিক পরিস্থিতিও পাল্টাতে শুরু করেছে বলেই ক্ষমতা হারানোর শঙ্কায় আওয়ামী লীগ বিরোধী দল ও বিরোধী মতকে মানতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘সারা দেশেই চলছে গ্রেফতার অভিযান। টার্গেট করে মামলা দিচ্ছে। কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেওয়া হচ্ছে মামলা। মূলত বিএনপি যাতে ফের সংগঠিত হতে না পারে, সে জন্য নতুন করে মামলা ও গ্রেফতারের কৌশল নিয়েছে সরকার।’ সূত্র : প্রিয়.কম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়