ডেস্ক রিপোর্ট : বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের লাশের জন্য প্রতীক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা। নিহতদের প্রতি সম্মান জানাতে উন্মুখ দেশের মানুষও। তবে কাঠমান্ডুতে অবস্থানরত বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি কবে লাশ আনা হবে। নিহতদের মধ্যে আটজনের মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অন্যদের চেহারা আগুনে পুড়ে এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে, দেখে সেগুলো চেনা যাচ্ছে না। মন্ত্রী বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শেষ করতে অন্তত তিন দিন লাগবে। যাদের সনাক্ত করা যাবে, তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার একটি বিমান সোমবার স্থানীয় সময় বেলা ২টা ২০ মিনিটে বিধ্বস্ত হয়। এতে চারজন ক্রু ও ৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। এদের মধ্যে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। বাংলাদেশি মারা গেছেন ২৬ জন। বিমানটিতে ৩৬ জন বাংলাদেশি ছিলেন।
লাশের জন্য দেশে স্বজনদের প্রতীক্ষা : ঢাকার শুক্রাবাদের বাসিন্দা রফিক জামান রিমু, তার স্ত্রী সানজিদা হক বিপাশা, তাদের শিশু সন্তান অনিরুদ্ধ জামান তিনজনই বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তাদের পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। রফিক জামানের বন্ধু সুমন জাহিদ জানান, রিমু পরিবার নিয়ে অনেকদিন বাইরে যায়নি। অনেকটা জোর করেই রিক্রিয়েশনের জন্য নেপাল ট্রিপের ব্যবস্থা করে তাদের পরিবার। শুক্রবারেই তাদের ফিরে আসার কথা ছিল। অথচ পরিবারের সবাই এখন লাশের জন্য অপেক্ষা করছে। কবে ফিরবে প্রিয় স্বজনের লাশ সেই প্রতীক্ষার প্রহর যেন কোনোভাবেই শেষ হচ্ছে না।
গাজীপুরের ফারুক আহমেদ প্রিয়ক, তার মেয়ে প্রিয়য়ী তামারা (শিশু) নিহত হয়েছে। ফারুকের স্ত্রী সাঈদা কামরুন্নাহার স্বর্ণা বেঁচে আছেন। ফারুকের চাচাতো ভাই লুত্ফর রহমান জানান, কখন স্বজনের লাশ পাব সেই প্রতীক্ষায় আছি। দ্রুত লাশগুলো দেশে আনার দাবি তার। বৈশাখী টেলিভিশনের সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদও বেঁচে নেই। তার মামা বাহদুর বেপারী জানিয়েছেন, পুরো পরিবার ও স্বজনরা ফয়সালের মুখ শেষবারের মতো দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
পাসপোর্ট নেই তাই নেপাল যেতে পারছেন না পিয়াসের বাবা : গোপালগঞ্জের সায়রা মেডিক্যাল থেকে এমবিবিএস পাস করা পিয়াসও নিহত হয়েছেন। তার বাবা বরিশালের চন্দ্রগন্ধ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকেন্দু বিকাশ রায়ের পাসপোর্ট না থাকায় জটিলতায় পড়েছেন। ইউএস বাংলা জানিয়েছে, পিয়াসের বাবার পাসপোর্ট দুই একদিনের মধ্যে প্রস্তুত করে তাকে নেপালে পাঠানো হবে।
লাশের ময়নাতদন্তে অন্তত তিন দিন লাগবে : নিহত ২৬ বাংলাদেশির লাশ হিমঘরে রাখা আছে। বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শেষ করতে অন্তত তিন দিন লাগবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় লাশ ঢাকায় নেওয়া হবে। যাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে না, তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। গতকাল বুধবার নেপালের একটি হোটেলে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা জানান। তিনি আরো বলেন, কেউ যদি তাদের আহত আত্মীয়-স্বজনকে চিকিত্সার জন্য বিদেশে বা দেশে নিতে চান, নিতে পারবেন; তবে চিকিত্সার খরচ নিজেদের বহন করতে হবে। আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে কাঠমান্ডু মেডিক্যাল কলেজে (কেএমসি) আছেন আটজন। ওম হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে আছেন একজন। নরভিক হাসপাতালে আছেন একজন। কেএমসির আটজনের মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর বলে চিকিত্সকেরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে ইমরানা কবীর হাসির অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীরের ৭০ ভাগ পুড়ে গেছে। সূত্র : ইত্তেফাক
আপনার মতামত লিখুন :