শিরোনাম
◈ আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বড় ভারতীয় পণ্য: গয়েশ্বর ◈ সন্ত্রাসীদের ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে সরকার: রিজভী ◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত

প্রকাশিত : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:১৩ সকাল
আপডেট : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ০৯:১৩ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

থানায় মাদকের হাট

ডেস্ক রিপোর্ট : গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে ডানপাশ দিয়ে কিছুদূর গেলেই থানার মূল ভবনের পেছনে মালখানা। সেখানে বস্তাভর্তি গাঁজা। পাশে সাজানো ফেনসিডিলের বোতলও। সেখান থেকেই এ প্রতিবেদকের কাছে গাঁজা বিক্রি করলেন সালাউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। সঙ্গে ফ্রি হিসেবে দিলেন এক বোতল ফেনসিডিল। এমন চিত্র কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার ভেতরে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রধানের কঠোর হুশিয়ারির মধ্যেই আমাদের সময়ের অনুসন্ধানে থানার ভেতরে মাদক বিক্রির এমন চিত্র উঠে এসেছে। থানা কম্পাউন্ডের ভেতরে পুলিশের এমন ভূমিকাকে দুঃখজনক বলছেন অপরাধ বিশ্লেষকরা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোতোয়ালি থানার ওসির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে চলছে মাদকের এমন বিকিকিনি। এই টাকার ভাগ জেলা পুলিশের ওপরের কর্তারাও পাচ্ছেন। সালাউদ্দিন নিজেকে পুলিশ সদস্য পরিচয় দিলেও তিনি পুলিশের কেউ নন। তবে অলিখিতভাবে থানার অনেক কাজেরই হর্তাকর্তা তিনি। মাদক বিক্রি থেকে শুরু করে অনেক অবৈধ কাজেই তার হাত রয়েছে। পুলিশের আটক করা মাদক থানার ভেতরে বিক্রির অলিখিত দায়িত্বও সালাউদ্দিনের ওপর ন্যস্ত।

প্রতিবেদকের কাছে আগেই তথ্য ছিল সীমান্তবর্তী জেলা কুমিল্লার কয়েকটি থানার ভেতরে মাদক বিক্রি হচ্ছে। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অবৈধ চালান আটকের পর তার একটি বড় অংশই পুলিশ বিক্রি করে দিচ্ছে। তবে শোনা কথা কান না দিয়ে প্রতিবেদক নিজেই সরেজমিন দেখতে চাইলেন থানায় মাদক বিক্রির চিত্র। স্থানীয় কয়েকজন সোর্সের সহায়তায় সালাউদ্দিনের সঙ্গে মাদক কেনার চুক্তি হল। কথা অনুযায়ী থানার গেটে পৌঁছলে প্রতিবেদককে ভেতরে নিয়ে যান সেই সালাউদ্দিন।

গাঁজা ‘পাতা’ ও ফেনসিডিল ‘মিষ্টি’ ছদ্মনামে পরিচিত কুমিল্লায়। থানার মালখানার ভেতরেই কথা হয় সালাউদ্দিনের সঙ্গে। কত কেজি গাঁজা দিতে পারবেনÑ জানতে চাইলে সালাউদ্দিন উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনার কত কেজি লাগবে? ৫০ কেজি পর্যন্ত দিতে পারব। প্রতি কেজির দাম পড়বে তিন হাজার টাকা। থানার বাইরে এনে ডেলিভারি দিতে পারবেন বলে জানালেন তিনি। পরে প্রমাণ রাখতে সালাউদ্দিনের কাছ থেকে নমুনা হিসেবে এক হাজার টাকার গাঁজা কেনেন এই প্রতিবেদক। এ সময় কয়েকদিন পর ইয়াবাও দিতে পারবেন বলে জানান সালাউদ্দিন।

নমুনা গাঁজা নিয়ে এই প্রতিবেদক চলে আসেন থানা থেকে। পরদিন সালাউদ্দিন গাঁজার বড় চালান কখন নিতে চাই তা জানতে আবারও ফোন করেন এই প্রতিবেদককে। কিছু সময় পর জানানোর কথা বলে আপাতত তাকে আশ্বস্ত করেন প্রতিবেদক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোতোয়ালি থানায় মাদক বিক্রি চলে নিয়মিত। বেশ কয়েকটি চক্র নিয়মিত সেখান থেকে মাদক কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করছে। খুচরা ক্রেতার কাছেও বিক্রি করা হচ্ছে এসব মাদকদ্রব্য। এ ছাড়া নীরিহ লোকজন ধরে এনে নিয়মিত টাকা আদায়ও এ থানার নিয়মিত চিত্র।

তবে থানার ভেতরে মাদক বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ আবু সালাম মিয়া ক্ষেপে যান। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, কুমিল্লায় এত সাংবাদিক থাকতে আপনি কেন ঢাকা থেকে অনুসন্ধানের জন্য এলেন? আর থানার ভেতরে এত পুলিশ কর্মকর্তা থাকতে সেখানে মাদক বিক্রি করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্ন প্রতিবেদকের দিকে ছুড়ে দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

এদিকে থানার ভেতরে মাদক বিক্রির কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা জেলার পুলিশ সুপার মো. শাহ আবিদ হোসেন। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, থানার ভেতরে মাদক বিক্রি অসম্ভব মনে হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

থানায় মাদক ব্যবসার এমন চিত্র নিয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিক্টিমোলজি অ্যান্ড রেসটোরেটিভ জাস্টিস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হকের সঙ্গে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। যারা এটি নিয়ন্ত্রণ করবেন সেই পুলিশেরই কেউ কেউ মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন। এখন তো সেটি প্রমাণও হচ্ছে। নতুন আইজিপি পুলিশ সদস্যদের মাদক ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার বিষয়ে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। কিন্তু এখন দেখার বিষয় হল, সেটি তিনি কতটা বাস্তবায়ন করতে পারেন।

গত রবিবার পুলিশ সদর দপ্তরে ত্রৈমাসিক অপরাধ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা মাদক বাণিজ্যে পুলিশের কোনো কোনো কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য তুলে ধরে সমালোচনা করেন। এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা আইজিপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, কতিপয় রেঞ্জ ডিআইজিরা ওসি পদায়নে ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা করে ঘুষ নেন। আবার কোনো কোনো পুলিশ সুপার এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল পদায়নে ঘুষ নেন। এ ঘুষের টাকা উঠাতে গিয়ে ওসি থেকে শুরু করে নিচের পদের সদস্যরা মাদক বাণিজ্যসহ নানা অবৈধ কর্মকা-ে যুক্ত হন। এতে মাদক বাণিজ্য বন্ধ করা যায় না।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মাদক বাণিজ্য বন্ধ করতে হলে ওসি থেকে নিম্নপদে কর্মরতদের পদায়নে ঘুষ লেনদেন বন্ধ করতে হবে। পরে সভায় নতুন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী মাদক ব্যবসায় পুলিশ সদস্যরা যুক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেন। সূত্র : দৈনিক আমাদরে সময়

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়