অধ্যাপক যতীন সরকার : একুশে ফেব্রুয়ারিতে আমরা আমাদের ভাষার সঠিক ব্যবহার এবং যথাযথ সম্মান সম্পর্কে সচেতন হই। এই সচেতন হওয়ার মধ্য দিয়েই বুঝা যায়, একুশের তাৎপর্য আমরা ভুলিনি। আমরা একুশ কে মনে রেখেছি। আমরা যে অনেক অর্জন করেছি, তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা অর্জন করেছি বলেই, আমাদের অর্জনের যে সকল ঘাটতি আছে সেগুলো আমরা মনের মধ্যে রাখি। এবং এটাই স্বাভাবিক। আমাদের ঘাটতি যেগুলো আছে, সেগুলোকে অবশ্যই সামনে নিয়ে আসা উচিত।
অনেক কিছুই আমাদের ঘাটতি আছে। যেমন: কথা বলার ক্ষেত্রে আমরা শুদ্ধ বাংলা ভাষার পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা এবং বাংলার অশুদ্ধ উচ্চারণ অর্থাৎ আমরা একপ্রকার বিচ্ছিন্ন ভাবেই ব্যবহার করি। এগুলো সম্পর্কে আমরা একুশে ফেব্রুয়ারীতে যে সচেতন হই, এই সচেতনতার মুল্য একেবারেই কম নয়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, এটি আমাদের সংবিধানে পরিস্কার ভাবে লিখে দেওয়া আছে। তবুও স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রম করার পরেও আমরা সর্বত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলার ব্যবহার যথাযথভাবে করতে পারছি না। অফিসে আদালতে বিশেষ করে উচ্চ আদালতে দেখা যাচ্ছে বাংলা ভাষার যথাযথ ব্যবহার হয় না।
এ সম্পর্কেও সচেতনতা আমাদের দেখা দেয়নি একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যে কথা গুলো আসছে, সে কথা গুলো বৃথা যাবে না। আমাদের দেশে বর্তমানে ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি বড় দখল রয়েছে। এমন কি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বাংলার চেয়ে বিদেশি ভাষার প্রতি গুরুত্ব বেশি দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে আমাদের দেশে বড় একটি সংখ্যার শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ব্যবহারিক কাজে বাংলার চেয়ে ইংরেজি অর্থাৎ ভিনদেশি ভাষাগুলো সমান তালে বরং বেশিই ব্যবহার করছে। আমাদের এত বড় অর্জনের বাংলা ভাষা থাকতেও আমরা ভিনদেশি ভাষা নিত্যকাজে ব্যবহার করি।
এই যে ব্যাপার গুলো ঘটছে, আমাদের কর্তুত্বশীল যে সব শক্তিগুলো আছে, এই কর্তৃত্বশীল শক্তি বা গোষ্ঠিগুলো তাদের স্বার্থের জন্যই এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। কাজেই এই কর্তৃত্বশীল অবস্থার পরিবর্তন আমরা না করতে পারি, তাহলে এগুলো করতেই থাকবে। সুতরাং একুশ ফেব্রুয়ারি এলে স্বাধীনতার চেতনায় যদি আমরা উদ্বুদ্ধ হই, তাহলে এগুলো দূর করার ক্ষেত্রে নতুন করে আন্দোলনের সৃষ্টি হবে। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই, স্বাধনতা যথার্থভাবে জনগণের স্বাধীনতায় পরিণত হবে। জনগণ কর্তৃত্বশীল হবে এবং এ সকল অবাঞ্চিত ঘটনার অবসান ঘটবে।
পরিচিতি : শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ ও লেখক/মতামত গ্রহণ : মাহবুবুল ইসলাম/ সম্পাদনা: মোহাম্মদ আবদুল অদুদ