তিনি বলেন, হতাশ হওয়ার মতো অবস্থায় বাংলা ভাষার চর্চা নেই। সারা বছর তো বটেই, ফেব্রুয়ারি এলে ভাষা নিয়ে আমাদের অহংকার আরও বেড়ে যায়। ভাষার মর্যাদা, ভাষার ব্যবহার ও অহংকার ধরে রাখার জন্য বুদ্ধিজীবীদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, উচ্চ শিক্ষায় বাংলার ব্যবহার একেবারে হচ্ছে না তা নয়, হচ্ছে। তবে যতটা আমরা আশা করছি, ততটা হয়তো হচ্ছে না। এখন শিক্ষকরা বাংলায় লেকচার দিতে বাধ্য হন। কারণ যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি পাস করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তাদের প্রায় সবারই বাংলা মাধ্যমে পড়ালেখা করা। তারা ইংরেজিতে এত পটু নয়।
শিক্ষকরা যদি ইংরেজি বক্তৃতা দেন তাহলে শিক্ষার্থীরা বুঝতে না পারলে হৈচৈ শুরু করে, বাংলায় বলার অনুরোধ করে শিক্ষককে। প্রশ্ন হচ্ছে, উচ্চ শিক্ষায় আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ বই আছে কি না। যেমন ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি কিংবা ইকোনমিক্স-এর বই বাংলায় আছে কি না। একেবারে আমরা অথৈ জলে আছি বলা যাবে না। এখন আমাদের যারা বেসরকারি প্রকাশক রয়েছেন তাদের উচিত হবে, উচ্চ শিক্ষার লেভেলে বই প্রকাশ করা। বাংলা একাডেমি একা কতদিক সামলাবে? তাদের তো অন্য কাজও রয়েছে। তবে কাজ চালানোর মতো ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও জিওলজির কিছু বই রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই শিক্ষাবিদ বলেন, সার্বিকভাবে দেশের সব জায়গায় বাংলা ভাষার চর্চা আমরা যতটা চাই ততটা হয়তো হয় না। দেশের সব এলাকায় এখনো বাংলা ভাষা সঠিকভাবে চর্চা হয় না। বিচারিক কাজগুলো এখনো মোটামুটিভাবে ইংরেজিতেই হয়। আমাদের অধিকাংশ বিচারপ্রার্থী বাংলা বোঝেন, ইংরেজি ততটা নয়। রায় প্রকাশ ইংরেজিতে হলে সাধারণ মানুষের বুঝতে অসুবিধা হয়। যেসব আইনজীবী মক্কেলের হয়ে আর্গুমেন্ট করেন তারা যেন বাংলায় সেটা করেন, তার মক্কেল যেন বুঝতে পারেন তার উকিল কি বলছেন তার পক্ষে।
তিনি বলেন, আমাদের মেডিকেল কলেজে যে শিক্ষাদান, সেখানে এখনো এনাটমি, ফিজিওলজি ইংরেজিতেই পড়ানো হয়। এসব জায়গায় যতটা সম্ভব বাংলায় পড়ানো উচিত। দেশের সব জায়গাতেই যেন আমরা বাংলায় বলতে, লিখতে, পড়তে পারি তার ব্যবস্থাও করতে হবে। তিনি আরও বলেন, বাংলা ভাষার সার্বজনীন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব সবসময়ই বেশি। এ বিষয়ে প্রথমে সরকারকে একটা নির্দেশ দিতে হবে যে, এখনো যেসব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পাঠদান করা হয়, সেখানে যেন অবিলম্বে বাংলা ভাষায় পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। কলেজে শিক্ষকরা যেসব বক্তৃতা দেন তা যেন বাংলা ভাষায় নোট তৈরি করে ছাত্রদের কাছে বিলি করেন।