শিরোনাম
◈ ইসরায়েলি হামলায় ৪৩৭ ফুটবলারসহ ৭৮৫ ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদের মৃত্যু ◈ পশ্চিম তীরে দখলদার ইসরায়েলিদের সাথে তাদেরই সেনা জড়ালো সংঘর্ষে! (ভিডিও) ◈ আমদানি-রপ্তানিতে এনবিআরের নতুন নিয়ম: বাধ্যতামূলক অনলাইন সিএলপি দাখিল ◈ জুলাই স্মরণে শহীদ মিনারে ছাত্রদলের মোমবাতি প্রজ্বলন (ভিডিও) ◈ জুলাই বিদ্রোহ: কোটা সংস্কার থেকে গণঅভ্যুত্থান ◈ ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে যা বললেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল ◈ ৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ, ক্যাডার পদে মনোনয়ন পেলেন ১৬৯০ জন ◈ ১৮ জুলাই নতুন দিবস ঘোষণা ◈ ডিসি-এসপি কমিটি ও ইভিএম বাদ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনে নতুন নীতিমালা জারি করলো ইসি ◈ বাংলাদেশে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স: কীভাবে পাবেন, কী কী শর্ত মানতে হবে?

প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:৩৫ দুপুর
আপডেট : ২৯ জানুয়ারী, ২০১৮, ১০:৩৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অভিভাবকের কান্ড! : একাল-সেকাল

ওয়াসিম ফারুক : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দীর্ঘ নয় বছর যাবৎ বেশ আলোচিত ও সমালোচিত । স¤প্রতি ছাত্রলীগকে সমালোচিত হতে হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় আর এই ঘটনার জন্য ছাত্রলীগ যতটুকু সমালোচনার মুখোমখি হয়েছে, তার বেশি সমালোচিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। বেশ ক’দিন ধরেই সাত কলেজের অধিভুক্তি বাতিল, ডাকসু নির্বাচন, আন্দোলনকারী ছাত্রীদের যৌন হয়রানির জের ধরে প্রক্টরকে আটকে রাখা, ফলে অজ্ঞাত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মামলা করা, অতঃপর তদন্ত ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি ইত্যাদি নিয়ে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে । আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা একপর্যায়ে ভিসিকে ঘেরাও করে। আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের কবল থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য ভিসি সাহায্য নেন বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ।

ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের উদ্ধারকারী দল লাঠি শোঠা, রড, হকিস্টিক নিয়ে নেমে পরে ভিসি মহোদয়কে উদ্ধারকার্যে । আর ছাত্রলীগের ভিসি উদ্ধার কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলায় আহত হতে হয় বাম সংগঠনের নেতা কর্মী ও সাধারণ ছাত্রছাত্রী সহ প্রায় চল্লিশ জনকে। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ছিল, ছাত্রলীগের নারী কর্মী সহ অন্যান্য কর্মীরা আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রীদের উপর শারীরিক হামলা ও বস্ত্রহরণের ঘটনা ঘটিয়েছে, তা সত্যি গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো।

কালের বিবর্তনে আমরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতের কথা কিন্তু ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ আবারও আমাদের নতুন করে মনে করিয়ে দিল সেই ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতের কথা । ২০০২ সালের ২৩ জুলাই মধ্যরাতে ছাত্রদলের ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনী কর্তৃক বর্বরোচিত হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন শামসুন নাহার হলের সাধারণ ছাত্রীরা। ছাত্রীরা সেদিন শুধু নির্যাতনের শিকারই হননি, অনেককেই রাতের আঁধারে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় থানায় এবং আটকে রাখা হয় থানা হাজতে। আমি নিশ্চিত যে, ২৩ জুলাই রাতের সেই ভয়াবহতম স্মৃতি শামসুন নাহার হলে বসবাসকারী প্রতিটি ছাত্রীকে আজও তাড়া করে ফেরে। ২৩ জানুয়ারি উপাচার্যের কার্যালয়ের ভেতরে ছাত্রলীগের রড দিয়ে প্রহারের ঘটনাও কখনো-ই ভুলতে পারবেন না নির্যাতিতরা।

২৩ জানুয়ারি যখন আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক আখতারুজ্জামানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল তখন স্বাভাবিক ভাবেই ভিসির দায়িত্ব ছিল আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলোচনায় বসা। যেহেতু ভিসি মহোদয় এটা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং নিজের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন, তার নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা নেওয়া দরকার ছিল। অথচ তিনি সেটা না করে সাহায্য নিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের, যেমনটি করে ছিলেন ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী শাহবাগে বাসচাপায় নিহত হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। ওই সময় প্রথমে পুলিশ শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটায়। পুলিশি নির্যাতনের মুখে শিক্ষার্থীরা চারুকলায় আশ্রয় নিলে সেখানেও আক্রমণ করে পুলিশ, ভাঙচুর চালায় চারুকলায়। এই নির্যাতন ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের পদত্যাগের দাবি জানায়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে রোকেয়া হলের প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য এসএমএ ফায়েজ নিজেদের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারে ছাত্রদলের সহযোগিতা চাইলে ছাত্রদলের ক্যাডাররা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আহত হন অনেক শিক্ষার্থী।

দিন বদলেছে, সরকার বদলেছে, ভিসিও বদলেছেন; কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের লাঠিয়াল বাহিনীর ওপর নির্ভরতা বদল হয়নি। আজ ২০১৮ সালেও ছাত্রছাত্রীদের দাবিদাওয়ার সন্তোষজনক উত্তর না দিয়ে সরকারী দলের ছাত্রসংগঠনের নিরাপত্তাবলয়ে আশ্রয় খোঁজেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ২০০২ সালে শামসুন নাহার হলের বৈধ ছাত্রীরাই নাকি ছিলেন হলের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। আর আজ নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টিতে আখ্যা পেয়েছেন সহিংস ও বহিরাগত হিসেবে। ২০০২ সালে বা ২০০৫ সালে তৎকালীন ছাত্রদল যেমন হায়নার হামলে পরেছিল আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ২০১৮ তে এর কোন পরিবর্তন হয়নি । ২৩ জানুয়ারির ঘটনার পর ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্যগুলো প্রায় একই।

যে ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদের ন্যায়সঙ্গত দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবকের কাছে উপস্থিত হয়েছিলেন, রাজনৈতিক কারণেই হউক আর ক্ষমতার লোভেই হউক তাদের সেই অভিভাবক তাদের কথা শুনতে বা মানতে পুরোপরি ব্যর্থ হয়ে নিজেকে রক্ষার নাম করে সৃষ্টি করেন এক অরাজক পরস্থিতি । আন্দোলনরত ছাত্র- ছাত্রীদের মার খেয়ে পরিচয় পেতে হয় বহিরাগত সন্ত্রাসী হিসেবে । আমরা ও চাইনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি সুপ্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হউক । তবে ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ের আন্দোলন ও কোন গোষ্ঠির দ্বারা আক্রান্ত হবে এটা ও কাম্যনয় । ছাত্রসংগঠন গুলি ছাত্রদের পক্ষে ছাত্রদের ন্যায় সঙ্গতদাবির পক্ষে কাজ করবে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠির লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করবে এটা ও কারো কাম্য নয় ।

লেখক: কলামিষ্ট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়