ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ : পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছন, তারা যখন পিতার নির্দেশমতো প্রবেশ করে তখন আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে তা তাদের রক্ষা করতে পারেনি। কিন্তু ইয়াকুবের প্রয়োজন ছিল এর ব্যতিক্রম। তার মনে একটি বাসনা ছিল, যা তিনি (আল্লাহ) পূর্ণ করেছেন। সে অবশ্যই জ্ঞানী ছিল। কারণ আমি তাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা অবগত নয়। (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৬৮)
আলোচ্য আয়াতে বলা হচ্ছে, ইয়াকুব (আ.) আল্লাহর ওপর নির্ভর করেই সন্তানদের মিসরে পাঠিয়েছিলেন। পুত্ররা তাঁর নির্দেশের কতখানি আজ্ঞাবহ, তা দেখার জন্যই ওই উপদেশ দিয়েছিলেন।
পুত্ররা উপদেশ মেনেই মিসরে গিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর বিধান ছিল বিনিয়ামিনকে কৌশলে মিসরে রেখে দেওয়া হবে। তাই ইয়াকুব (আ.)-এর উপদেশ বিনিয়ামিনকে রক্ষার জন্য সহায়ক হয়নি। তবে তাঁর এ আশা পূর্ণ হয়েছে যে পথে তাঁর সন্তানরা কারো মাধ্যমে আক্রান্ত হবে না।
নবী হিসেবে ইয়াকুব (আ.)-এর উপদেশ ছিল আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান থেকে উৎসারিত। এভাবে যুগে যুগে প্রেরিত আল্লাহর নবীদের বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়েছে। এমন অনেক বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, যা সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষ অবগত নয়। আর অনেক বিষয় এমনও আছে, যা সম্পর্কে নবী-রাসুলরাও অবগত নন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলে দাও, আল্লাহ ছাড়া আকাশম-লী ও পৃথিবীতে কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না। তারা জানে না, তারা কখন পুনরুত্থিত হবে।’ (সুরা : নামল, আয়াত : ৬৫)
অদৃশ্যের সব বস্তুর চাবি আল্লাহর হাতে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অদৃশ্যের চাবিকাঠি তাঁরই কাছে আছে। তিনি ছাড়া আর কেউই তা জানে না। স্থল ও জলভাগের সব কিছুই তিনি অবগত রয়েছেন। তাঁর অবগতি ছাড়া বৃক্ষ থেকে একটি পাতাও ঝরে না এবং ভূপৃষ্ঠের অন্ধকারের মধ্যে একটি দানাও পড়ে না, এভাবে সরস ও নীরসÑসব কিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ রয়েছে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৯)
অনেক সফল মানুষ নিজের সাফল্যের জন্য নিজেকে ধন্য মনে করে। তারা চিন্তা করে না, এই সাফল্য দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলা। তিনিই মূল কারিগর। আল্লাহ তাআলাই সব বিষয়ে বান্দাকে কলাকৌশল শিখিয়ে দিয়ে থাকেন। এসব কৌশল বান্দার সাফল্যের পেছনে দৃশ্যমান কারণ হয়ে দেখা দিলেও মূল নিয়ন্ত্রণ যেহেতু আল্লাহর কাছে। তাই সর্বাবস্থায় তাঁরই গুণমুগ্ধ থাকা উচিত। এর ব্যতিক্রম হলে যেকোনো সময় তিনি নিজ অনুগ্রহে প্রদত্ত নিয়ামতকে ছিনিয়ে নিতে পারেন।
সাফল্য বা ব্যর্থতা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আলোচ্য ঐতিহাসিক ঘটনায় ইয়াকুব (আ.) নিজ সন্তানদের বদনজর থেকে রক্ষা পেতে যে কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তাতে যদিও তারা বদনজরের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা পেয়েছিল; কিন্তু আল্লাহর লীলাখেলায় তারা ভিন্ন ধরনের সংকটের মুখোমুখি হয়েছে।