সজিব খান: আমাদের দেশ থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে ২ ও ৫ টাকার নোট পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। হোরোইন ও ইয়াবা সেবন করতে পাইপ বানানোর কাজে ব্যবহারের জন্য মাদকসেবীদের কাছে এই দুই নোটের চাহিদা ব্যপক। এ কারণে বেনাপোল সীমান্তের চোরাই পথ এবং আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে অবাধে পাচার হচ্ছে সরকারি এই দুই নোট।
সীমানা পেরিয়ে ভারতে গিয়ে পৌঁছালেই বাংলাদেশি ২ ও ৫ টাকার নতুন চকচকে নোটের দাম হয়ে যাচ্ছে যথাক্রমে ৫ ও ১০ রুপি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হেরোইন ও ইয়াবা আগুনের তাপে গরম করলে তরলে পরিণত হয়। এসময় ওই তরল পদার্থ থেকে যে ধোঁয়া বের হয়, তা ‘পান্নী’ বা বিশেষ ধরনের পাইপের মাধ্যমে সেবন করে থাকে মাদকাসক্তরা। আগে হেরোইন বা ইয়াবা সেবনের পাইপ তৈরিতে সিগারেটের প্যাকেটের ভেতরে থাকা রাঙতা কাগজ ব্যবহার হতো। কিন্তু কাগজের পাইপ অল্প তাপেই পুড়ে যায়।একবার নেশা করতে হলে তিন/চার বার পাইপ পাল্টাতে হয়। তাই কাগজের বদলেই এখন ব্যবহৃত হচ্ছে ২ টাকা ও ৫ টাকার নোট। এসব নোট দিয়ে পাইপ তৈরি করলে একবারেই নেশার কাজ শেষ হয় বলে দাবি মাদকসেবীদের। নতুন অবস্থায় এসব নোট সহজে পানিতে ভিজে যায় না এবং গরমে পুড়ে ছাইও হয় না। যার ফলে মাদকসেবীদের কাছে ২ টাকা ও ৫ টাকার নতুন নোট অত্যাধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
মাদকসেবীদের কাছে এভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠার কারণেই কিছু ভারতীয় অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে বৈধ ও চোরাই পথে বাংলাদেশে এসে ২ টাকা ও ৫ টাকার নতুন নোট সংগ্রহ করে পাচার করছে। প্রায়ই বিজিবি ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে আটক হচ্ছে পাচারকারীরা। ধরা পড়ছে ২ টাকা ও ৫ টাকার নতুন নোট।
বিজিবি জানিয়েছে, গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকা থেকে স্কুলব্যাগভর্তি ৪৫ হাজার টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশি পাঁচ টাকার নতুন নোট উদ্ধার করে বিজিবি। এর আগে ১০ নভেম্বর বেনাপোল চেকপোস্টে ইউসুফ আলী (৫০) নামের এক ভারতীয় নাগরিককে আটক করেন বিজিবি সদস্যরা। ওই সময় ইউসুফের ব্যাগ তল্লাশি করে বাংলাদেশি দুই টাকার নতুন নোট জব্দ করা হয়, যার মূল্য ছিল ৪১ হাজার ৬০০ টাকা। এর আগে গত বছরের ২৫ এপ্রিলে ৬০ হাজার টাকার পাঁচ টাকার নতুন নোটের একটি বড় চালান পাচারের সময় আটক করে বিজিবি।
এসব নতুন নোট ভারতে পাচারের জন্য বেনাপোল সীমান্তে একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছে। আর এরাই ঢাকা থেকে এসব নোট সংগ্রহ করে। পরে ভারতে পাচার করে। বেনাপোল সীমান্তকে নিরাপদ মনে করে এই পথেই নোটগুলো পাচার করা হয়।
বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের কাস্টমস তল্লাশি কেন্দ্রে ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন থাকলেও পাসপোর্ট যাত্রীর মাধ্যমে কীভাবে এই টাকা ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন, এনটিভি
আপনার মতামত লিখুন :