ডেস্ক রিপোর্ট : কুমিল্লার হোমনা পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এলাকাবাসীর। নির্বাচনের সময় দেয়া অনেক প্রতিশ্রুতি তিনি এখনও বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কেউ অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ করলে তাদের বেঁধে রেখে আমাকে খবর দেন। তাদের হাত-পা বেঁধে জেলহাজতে চালান করে দেব।
জানা যায়, তিতাস-মেঘনা নদীবেষ্টিত কুমিল্লার হোমনায় আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ও ভোটের অবস্থান অনেকটাই দুর্বল। আওয়ামী লীগ অঙ্গ সংগঠনগুলো এখানে চরম গ্রুপিং ও দ্বন্দ্বে জর্জরিত। এ উপজেলায় এমপি জাতীয় পার্টির আর উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি দলীয়। বর্তমান সরকারের আশীর্বাদে এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের টিকিটে মেয়র নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম। তিনি কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক। নির্বাচিত হওয়ার পর পৌরসভার নানা কার্যক্রম, টেন্ডার, জমি দখলসহ নানা অভিযোগে নিজ দলের নেতাকর্মীসহ এলাকায় নানা সমালোচনার মুখে রয়েছেন এ মেয়র। অভিযোগ রয়েছে, সরকার দলের এ মেয়র ২০১৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন নিয়ে একটি আলাদা বলয় তৈরি করেন। তার অনুসারীরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন পৌরসভার অধিকাংশ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ঠিকাদারিসহ টেন্ডার কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, মেয়র তার একক ক্ষমতাবলে বিনা টেন্ডারে কোটেশনের মাধ্যমে পছন্দের লোকদের সিএনজি স্ট্যান্ড ইজারা দিয়ে লাভবান হয়েছেন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে হোমনা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সামনের রাস্তাটি মেয়রের গাড়ির ড্রাইভার মিষ্টি মিয়ার এক আত্মীয়ের নামে কাজ নিয়ে মেয়র নিজেই তা করেছেন। এতে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় তিন মাসের মধ্যে তা ভেঙে যায়। এ নিয়ে কাউন্সিলর ও প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে বাকবিতণ্ডাও হয়েছে। উপজেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণে থাকা হেলিপ্যাড দখল করে তার পছন্দের ব্যক্তিদের দোকান বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগও করেন দলীয় ও স্থানীয় এলাকার লোকজন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র নজরুল বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে এসব কথা বলে তারা মিথ্যাবাদী। জমি দখল, টেন্ডারবাজি ও কোনো অনিয়মের সাথে আমি এবং আমার কোনো অনুসারী জড়িত নই। সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে এ পৌরসভার সব টেন্ডার কার্যক্রম সম্পাদন করা হয় দাবি করে তিনি আরও বলেন, ২০ বছর যাবত যারা এখানে ঠিকাদারি করে তারা আজও এখানে ঠিকাদারি করছেন। আমার কোনো লোকজন নতুন করে এখানে প্রবেশ করেনি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে হোমনায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। দল ও দলের বাইরের একাধিক স্বার্থান্বেষী মহল আমার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
উন্নয়ন প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে হোমনা সদরের বাসস্ট্যান্ড থেকে লটিয়া-গোয়ারিভাঙ্গার এলাকার মেঘনা নদীর পাড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ বিঘা অব্যবহৃত জমিতে বিসিক শিল্প নগরীর কাজ শিগগিরই শুরু হবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পৌরবাসীর সুপেয় পানি পানের ব্যবস্থার লক্ষ্যে ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তিতাস নদী থেকে পানি শোধন প্রকল্প স্থাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। শিগগিরই এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিআইপি) গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজনের সমন্বয়ে এ সিআইপি গঠন করা হয়। মাস্টার প্ল্যানের আওতায় রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ কালভার্টসহ পৌরসভার বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৬ কোটি টাকার ডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া পৌর এলাকায় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের বিষয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছি। শিল্প মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। এ অর্থ বরাদ্দ পেলে হোমনা পৌরসভার চিত্র আমি বদলে দিতে পারব।
তিনি বলেন, হোমনা পৌর সদরে ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ তলাবিশিষ্ট একটি পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণ করা হবে। এর ডিজাইন জমা দেয়া হয়েছে। শিগগিরই এ মার্কেটের কাজ শুরু হবে। পৌর এলাকায় দুই বছরে আমি চার কোটি টাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, একটি গরুর হাট স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগ, বনায়নের কাজ, গরিব দুস্থ অসহায়দের সাহায্য করেছি। এ ছাড়া সেনিটেশন শতভাগ নিশ্চিত করেছি। ক্লাইমেট চেঞ্জের আওতায় পৌর এলাকায় সোলার সিস্টেম লাইটিং স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। হোমনা ডিগ্রি কলেজে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ করার প্রকল্প হাতে নিয়েছি। পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যসহ জনসচেতনতা নিয়ে কাজ করছি। সচেতন নাগরিকদের নিয়ে হোল্ডিং কর আদায়ে কর নির্ধারণ কমিটি গঠন করেছি। গুরুত্বপূর্ণ শহর অবকাঠামোর আওতায় পাঁচ কোটি টাকার সড়ক ব্রিজ নির্মাণকাজ চলছে। বাল্যবিয়ে ও মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। বর্জ্য সংগ্রহের মাধ্যমে জৈবসার উৎপাদন করে কৃষকের মাঝে বিতরণ করেছি। বর্তমান সরকারের সহায়তায় শিগগিরই হোমনা পৌরসভা একটি মডেল পৌরসভায় উন্নীত হবে। যুগান্তর