মুফতি আহমদ আবদুল্লাহ: সৎকাজ হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তারই আদেশ নিষেধ মান্য করে জীবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা। মহান আল্লাহ যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন সেসব কাজ করা এবং যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা বর্জন করাই হলো ‘আমলে সালিহা’ বা সৎকাজ। আল্লাহ তায়ালা ইমান অবলম্বন করতে, নামাজ কায়েম করতে, রমজান মাসে রোজা রাখতে, জাকাত আদায় এবং হজ পালন করার আদেশ করেছেন। তিনি মা-বাবার সঙ্গে সদাচারণ, প্রতিবেশীর হক আদায়, আত্মীয়তা বজায় রাখা, সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার, দান-খায়রাত করা, বিপদে ধৈর্যধারণ, নেয়ামতের শুকরিয়া করা ইত্যাদি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন।
যারা ইমান ও সৎকাজ নিয়ে পরকালে উপস্থিত হবে, তাদেরকে ক্ষমা করা হবে, তাদের মন্দ কাজগুলো মিটিয়ে দেয়া হবে। আর বিনিময়ে হিসেবে কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহা প্রতিদানের প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।’ এমনিভাবে অন্য আয়াতে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আমি অবশ্যই তাদের মন্দ কর্মগুলো মিটিয়ে দিবো এবং তাদের তাদের উৎকৃষ্টতর প্রতিদান দিবো। (সুরা আনকাবুত: ০৭)। আর সৎকাজের বিনিময়ে জান্নাতের প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকাজ করেছে আমি তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো। আর সেই জান্নাতের তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়। তারা চিরকাল তথায় অবস্থান করবে। আল্লাহ প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন, তা সত্য। তার থেকে অধিক সত্যবাদী কে?’ (সুরা নিসা: ১২২)। উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা এটাই প্রতিভাত হয় যে, পরকালে জান্নাতের প্রতিশ্রæতি দিয়ে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের দুনিয়াতে ইমান ও সৎকাজ সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করেছেন।
ইমানদার ব্যক্তি সৎকর্মমের বিনিময়ে কেবল পরকালেই পুরস্কৃত হবে তাই নয়, দুনিয়াতেও আনন্দময় পবিত্র জীবন লাভ করবে। আল্লাহ বলেন, যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ইমানদার পুরুষ হোক কিংবা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করবো। (সুরা নাহল: ৯৭)। উক্ত আয়াতে ‘পবিত্র জীবন’ বলতে আনন্দময় ‘পবিত্র জীবন’ বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ যে ইমানদার ব্যক্তি দুনিয়াতে যথাযথভাবে সৎকাজ করবে সে আনন্দময় পবিত্র জীবন লাভ করবে। এটা এরূপ নয় যে, সে কখনও অনাহার-উপবাস বা অসুখ-বিসুখের সম্মুখীন হবে না। বরং এর অর্থ হলো, মুমিন ব্যক্তি কোনো সময় আর্থিক অভাব-অনটন কিংবা কষ্টে পতিত হলেও দুটি বিষয় তাকে উদ্বিগ্ন হতে দেয় না। এক. অল্পে তুষ্টি ও অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের অভ্যাস যা দরিদ্রের মাঝেও কেটে যায়। দুই. তার এ বিশ্বাস থাকে যে, অভাব-অনটন ও অসুস্থতার বিনিময়ে পরকালে সুমহান চিরস্থায়ী নেয়ামত পাওয়া যাবে। কাফের ও পাপাচারী ব্যক্তিদের অবস্থা এর বিপরীত। সে অভাব-অনটন ও অসুস্থতার সম্মুখীন হলে তার জন্য সান্ত¡নার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে সে কাÐজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রায়শ আত্মহত্যা করে ফেলে। পক্ষান্তরে সে যদি স্বচ্ছল জীবনের অধিকারীও হয়, তবে লোভের অতিশয্য তাকে শান্তিতে থাকতে দেয় না। সে লাখপতি হয়ে গেলেও কোটিপতি হওয়ার চিন্তায় জীবনকে বিড়ম্বনাময় করে তোলে।
লেখক: শিক্ষক, বাইতুন নূর মাদরাসা ঢাকা।