ডেস্ক রিপোর্ট: প্রায় তিন মাস ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পূর্ব-মেদিনীপুর সমুদ্র সৈকত দিঘায় আটকে রয়েছেন ১৪জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবী। তাদের সবার বাড়ি পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া থানা এলাকায়। নাগরিকত্ব নিশ্চিত না হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন তাদের ছাড়তে পারছে না। খাবার সংকটের সঙ্গে তীব্র শীতে আটক মৎস্যজীবীদের অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
গত বছর ৭ নভেম্বর ট্রলার খারাপ হওয়ায় বঙ্গোপসাগরে ২০ দিন ভাসতে ভাসতে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়ে বাংলাদেশি ‘চম্পা আখতার’ নামে একটি ট্রলার। গত ২৭ নভেম্বর পূর্ব-মেদিনীপুরের শংকুরপুরের মৎস্যজীবীরা ভারতীয় সীমা থেকে অসুস্থ ১৪জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করে পূর্ব-মেদিনীপুর জেলার দিঘা সমুদ্র বন্দরে নিয়ে যান। আপাতত স্থানীয় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের হেফাজতে রয়েছেন ওই মৎস্যজীবীরা।
আটক বাংলাদেশি ট্রলারের প্রধান মাঝি জাকির হোসেন জানান, তার দলে রয়েছেন রোমিক মিয়া, সিয়াম সর্দার, মহম্মদ বাবুল, মহম্মদ সেলিমসহ ১৪ জন। তিনি আরো জানান, ভারতীয় প্রশাসন রোজ যেটুকু সাহায্য দিচ্ছে তা দিয়ে কোনও রকম জীবনধারণ করে বেঁচে রয়েছেন। তীব্র শীতে গরম কাপড়ের সংকট রয়েছে। খুবই কষ্টে দিন কাটছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আটকে পড়া বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের নাগরিকত্ব প্রমাণের কাজটি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাস করবে। সেখানে আজ (১৩ জানুয়ারি) যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্যে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতার উপদূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বিএম জামাল হোসেন ছুটিতে রয়েছেন।
এদিকে, পূর্ব-মেদিনীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কিন্তু, এখনো পর্যন্ত সেখান থেকে কোনও সবুজ সংকেত এসে পৌঁছায়নি।
বিষয়টি নিয়ে দিঘা ফিশারম্যান ও ফিস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, বাংলাদেশি মৎস্যজীবীদের নষ্ট হওয়া ট্রলার মেরামতের কাজ শেষ। তবে আইনি অনুমোদন পেলেই সেই ট্রলারেই তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
আসামের কারাগারে বাংলাদেশিরা
অন্য এক খবরে জানা গিয়েছে, ভারতের উত্তরপূর্ব রাজ্য আসামের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ১৪জন বাংলাদেশি নাগরিকের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদেরকে নিজ দেশে পাঠানো হচ্ছে।
আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া কারাগারে ৫১জন, শিলচর কারাগারে ৩৪জন, তেজপুর কারাগারে ২৩জন এবং কোকরাঝড়ে তিনজন বাংলাদেশি নাগরিক অনুপ্রবেশের অপরাধে সাজা ভোগ করেছেন। চারটি কারাগারে সব মিলিয়ে ১১১জন বাংলাদেশি বন্দির অনেকেরই সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, নাগরিকত্ব প্রমাণের অভাবে এখনোও জেল খাটছেন তারা। এই তালিকার ১৪জনের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার কাজ শেষ করেছে রাজ্যটির রাজধানী গৌহাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ উপদূতাবাস।
সংশ্লিষ্ট উপদূতাবাসের সহকারী উপরাষ্ট্রদূত কাজী মুন্তাসের মোর্শেদ জানিয়েছেন, আপাতত ১৪জনের নাগরিকত্বের প্রমাণ আমরা ভারতীয় প্রশাসনকে দিতে পেরেছি। বাকিদের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জানুয়ারি মাসের শেষের দিকেই ১৪জন বাংলাদেশি নাগরিক দেশে ফিরতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন ওই কর্মকর্তা।