ডেস্ক রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘আমাকে অনেক বাধা অতিক্রম করে কাজ করতে হয়। এটা আমার স্বভাবজাত হয়ে গিয়েছে। বাধা না আসলেও যেন কাজ করার মধ্যে আনন্দ নেই।’
শুক্রবার সকালে শহরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকার আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে ক্রান্তি খেলাঘর আসরের ৩০বছর পূর্তি উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পরে তিনি ক্রান্তি খেলাঘর আসরের ৩০ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান ও সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
মেয়র আইভী বলেন, ‘২০০৩ সালে পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আমি খেলাঘরের সঙ্গে আছি। শুধু খেলাঘর নয়, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে আমি নিজে ডেকে ডেকে পরিচিত হয়েছি। এক আত্মিক বন্ধন আজ ১৫ বছর ধরে হয়েছে। আপনারা সবাই আমার আত্মার আতীয়। আমি এ সম্পর্ক আজীবন-আমৃত্যু রাখতে চাই। আমি আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়ে যখন যা বলেছেন আপনাদের মন মতো করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি সব সময় আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে যতটুকু করা সম্ভব- করে দিয়েছি। আমি আপনাদের সঙ্গে এখনও আছি ভবিষ্যতেও থাকব।’
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে খেলাঘর আসরের সঙ্গীতের লেখক ও বিশিষ্ট ছড়াকার আখতার হোসেন মেয়র আইভীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ছোটদের বিকাশের জন্য একটি মঞ্চ করে দেবেন। যেখানে শুধু বাচ্চাদের অনুষ্ঠান করা হবে। এ বাচ্চাদের জন্য মিলনায়তন করবেন সেটা আপনার বাবা আলী আহম্মদ চুনকার নামে করেন সেই দ্বায়িতটা অর্পন করে গেলাম।’
ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আখতার হোসেনকে স্যার সম্বোধন করে মেয়র আইভী বলেন, ‘বাচ্চাদের জন্য আমার অগনিত চিন্তা আছে। শহর অনেক অগোছালো ছিল। অনেক পুরানো একটা শহর। ঐতিহ্যবাহী একটা শহর যেখানে অনেক কিছুই ছিল আবার অনেক কিছু মলিন হয়ে গেছে। এখন চেষ্টা করছি সে কাজগুলো করে দেয়ার জন্য। খেলার মাঠ থেকে শুরু করে অনেক কিছু বেদখল হয়ে গিয়েছিল। ১৮ থেকে ১৯ বছর এখানে প্রশাসক ছিল সেই মতো কাজ হয়নি। রাস্তাঘাটের অবস্থাও ছিল খারাপ। আমার বিগত ১২ থেকে ১৩ বছর রাস্তা ও ড্রেনের কাজই করতে হয়েছে। মানুষকে স্বাচ্ছন্দ দিয়ে এবার আমরা সিটি করপোরেশন খুব বেশি মনযোগ দিয়েছি খেলার মাঠ, বাচ্চাদের জন্য পার্ক করা, পুকুরগুলো সংরক্ষণ করা, খালগুলো রাখা। ইতোমধ্যে এ চুনকা পাঠাগার করার জন্য সাতটা বছর আমাকে মামলার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। যার জন্য আমি পাশের এ বিল্ডিং (বিনোদন সুপার মার্কেট) ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছি। পাশে ছিল বিএনপির অফিস সেটাও আমরা মামলার কারণে পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। যার জন্য আমাদের পাঠাগারও ছোট হয়েছে এর গ্যালারিও ছোট হয়েছে। এখানেও বাচ্চাদের জন্য অডিটোরিয়াম করে রেখেছি। বাচ্চাদের জন্য আলাদা পাঠাগার আছে এবং বাচ্চারা যেন বসে সুন্দর করে নিজেদের আকাশ বৃষ্টি দেখতে পারে সেই ব্যবস্থাটাও এখানে রাখা হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পাঠাগার থেকে হেঁটে গেলে চারুকলা আছে তার পাশে বিশাল একটা জায়গা প্রায় ১০ একরের মধ্যে ৬ একরের মধ্যে একটা ঝিল আছে ওইটা আমরা সৌন্দর্য্য বর্ধন করে দিচ্ছি এবং উন্মুক্ত মঞ্চ করে দিয়েছি। বাচ্চাদের জন্য আলাদা জায়গা আছে, খেলার মাঠ আছে। আমি চেষ্টা করব ওদের জন্য আরেকটা আলাদা মঞ্চ করা যায় কিনা। যেখানে ওরাই সারাদিন অনুষ্ঠান করব। যেহেতু এটা শহরের মধ্যে।’
শিশুদের উদ্দেশ্যে মেয়র আইভী বলেন, ‘তোমরা আমার পাশে থাকবা এবং আমার জন্য দোয়া করবা। আমিও তোমাদের জন্য কাজ করার চেষ্টা করব।’
নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে মেয়র আইভী বলেন, ‘কাল অনেকেই আমাকে দেখেছেন এখানে দাঁড়িয়ে আমি কিছুটা রাগান্বিত মনোভাবেই ছিলাম। যখন ভাঙচুর করতে আসি তখন মন মানসিকতাও ওই রকমই থাকে। অতএব আমি ওই রকমই। আমার ভুল হয়ে গেছে- আমাকে ৫ বছর আগেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল। তাহলে সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য, নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য এ আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগারটা একটা মাইলফলক হয়ে থাকত। সেটা আমার সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। আমি ৫বছর দেরি করেছি।’
নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র আইভী আরো বলেন, ‘যারা শহরের বসবাস করেন, কে কোন দল করেন সিটি করপোরেশনে বসে সেটা আমার দেখা ব্যাপার নয়। আমি আপনাদের সেবা করতে চাই। সেই সুযোগটা চাই। সেটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনে হোক, খেলাধুলাতেই হোক, রাজনীতিতে হোক, সামাজিকতাই হোক আপনাদের পাশে থাকতে চাই।’
ক্রান্তি খেলাঘর আসরে সভাপতি নাঈমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা খেলাঘর আসরের সভাপতি রথিন চক্রবর্তী, সিটি করপোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজল প্রমুখ।
পরে বেলা সাড়ে ১১টায় চুনকা পাঠাগারের সামনে থেকে ‘মানুষ গড়ার ৩ দশক’ লেখা ৩০ বছর পূর্তি উৎসব ও সম্মেলন উপলক্ষে র্যালি বের হয়। র্যালির মেয়র আইভীসহ অতিথিরা অংশগ্রহণ করেন। পরে র্যালিটি শহরের মণ্ডলপাড়া ঘুরে পুনরায় চুনকা পাঠাগারের সামনে এসে শেষ হয়।
(ঢাকাটাইমস