ড. অনুপম সেন : আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের ভাষণ পেয়েছি। স্বাধীনতার ভাষণও পেয়েছি যেমন, শুভাষ চন্দ্র বসু ভাষণ দিয়েছিলেন । কিন্তু এমন কোন ভাষণ পাইনি, যেখানে দশ লক্ষ মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে একজন নেতা তার জাতি ,তার জনগণের জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। শুধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন তাই নয় ,তার ভাষণ পুরোটা যদি আমরা দেখি, সেখানে তিনি শেষ বাক্যে যে বাক্যটি বলেছেন সেটা একটি মহাকাব্যের গুরুত্ব বহন করে। যেখানে তিনি বলেন, “ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম ’’। মহাকাব্যের ঘটনা আমি এজন্য বলছি যে, মহাকাব্য সাধারণত একটি জাতি, পুরো জাতির উথান-পতন সমষ্টিকে নিয়ে একটি মহাকাব্য। ৭ মার্চের ভাষণ যে তিনি দিয়েছেন , এটা কিন্তু হঠাৎ করে তিনি দেননি। এটা বাঙ্গালির ২৩ বছরের সাধনা, ২৩ বছরে যে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। অনেক সংগ্রাম, অনেক অধিকারের জন্য আন্দোলন। সমস্ত বিষয়গুলোই যেন সেই বক্তৃতায় তিনি নিয়ে এসেছেন। প্রথমে বলেছেন যে, কিভাবে বাঙ্গালি সবসময় বঞ্চিত হয়েছেন। তারপরে তিনি বলেছেন যে, আমরা তোমাদের কথা শুনতে রাজি আছি, যদি তোমরা যৌক্তিক কথা বল । তিনি জানতেন যে, তারা শুনবে না। তাই তিনি বাঙ্গালির উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হও। তিনি আরও বলেন যে, তারা যদি আসে তাহলে আমরা তাদেরকে ভাতে মারব, পানিতে মারব অর্থাৎ পুরো ভাষণটাই যেন একটা কবিতার মত। সেখানে তিনি মাঝে মাঝে স্থানিয় ভাষা ব্যবহার করেছেন যেমন , দাবাইয়া রাখতে পারবা না। এই স্থানীয় শব্দের ব্যবহারও অসাধারণ ব্যবহার । কারণ, এই ভাষার ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গেও মানুষের মনে দাগ কাটে, আঘাত করে । কোন মানুষ যখন অসাধারণ বক্তৃতা দেয়, তখন তার মাঝে অসাধারণত্ব চলে আসে। এই অসাধারণত্বের মাঝে আমরা ৭ই মার্চের ভাষণ কে দেখি। বিশ্বের ইতিহাসে আমি এমন কোন স্বাধীনতার বক্তৃতা পাইনি, যেটি এই বক্তৃতার চাইতে সুন্দর, সমকক্ষ । এই বক্তৃতায় তিনি শুধু স্বাধীনতার কথাই বলেননি , বাঙ্গালি যে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করছে , সর্বসুখের ভাষার জন্য মুুক্তি, আমাদের সংস্কৃতির জন্য মুক্তি, আমাদের অর্থনীতির জন্য মুক্তি, আমাদের রাজনৈতিক মুক্তি অর্থাৎ সমস্ত মুক্তিই যেন পূর্ণতা পায়।
পরিচিতি : উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য , আ.লীগ
মতামতগ্রহন : মোহাম্মদ মহসিন
সম্পাদনা : মোহাম্মদ আবদুল অদুদ