শিরোনাম
◈ ইফতার পার্টিতে আওয়ামী লীগের চরিত্রহনন করছে বিএনপি: কাদের ◈ বাংলাদেশে কারাবন্দী পোশাক শ্রমিকদের মুক্তির আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন লবি’র ◈ দক্ষিণ আফ্রিকায় সেতু থেকে তীর্থ যাত্রীবাহী বাস খাদে, নিহত ৪৫ ◈ ভারত থেকে ১৬৫০ টন পেঁয়াজ আসছে আজ! ◈ ২২ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন কাতারের আমির, ১০ চুক্তির সম্ভাবনা ◈ ইর্ন্টান চিকিৎসকদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র সঙ্গে কথা বলেছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী ◈ উন্নয়ন সহযোগীদের একক প্ল্যাটফর্মে আসা প্রয়োজন: পরিবেশমন্ত্রী ◈ ড. ইউনূসের পুরস্কার নিয়ে ভুলভ্রান্তি হতে পারে: আইনজীবী  ◈ ত্রিশালে বাসের ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসহ অটোরিকশার ৩ যাত্রী নিহত ◈ এসএসসি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন, বদলে যেতে পারে পরীক্ষার নামও

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:৪৮ সকাল
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৪:৪৮ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তখন ‘তারা’ রাজনীতিক নয়, রাজমিস্ত্রী হতেন, এটাই সত্য

দীপক চৌধুরী : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতা ছিল বলেই এদেশটি ’৭১-এ মুক্ত হয়েছিলো। আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে আজ পরিচিত। ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান সফল না হলে, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ না হলে, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে, আজকের রাজনীতির প্রেক্ষাপট এতটাই খারাপ হতো যে এদেশে রাজনীতিকদের অনেকেই ‘রাজমিস্ত্রী’ হতেন। রাজমিস্ত্রী পেশার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি। ক্ষমতার ক্ষীর-মাখন খেয়ে তারা প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপপধানমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীও হয়েছেন কেবল আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার দিকে তাকালে সন্ত্রাস আর দুর্নীতি ছাড়া কিছু দেখতে পাই না! বলতে চাইÑ বোধদয়, কৃতজ্ঞতা, স্বীকারোক্তি নেই বিবেকহীনদের। আমরা রাজমিস্ত্রী নয়, দেশ পরিচালনার জন্য স্বচ্ছ রাজনীতিক চাই। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞা, সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো এই স্বীকৃতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে।
এদেশের রাজনীতির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে যারা দেশ পরিচালনা করেছেন, সে সব রাজনীতিকদের একটা চরিত্র আমরা দেখতে পাই। বিএনপি তো বড় রাজনৈতিক দল। এর কথা দিয়েই শুরু করি। বিএনপির যেকোনো একজন নেতার কথাও বলতে পারি। ধরুন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদের কথা। তিনি মাঝে-মধ্যে বাস্তব কথাবার্তা বলে থাকেন। যেমন তিনি ইদানিং প্রায়ই বলে থাকেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে যাবে।’ খুবই চমৎকার শোনা যায়। কিন্তু বিএনপি নামের দলটির নির্বাচনে অংশ নেওয়া ছাড়া তো কিছু করার নেই। নির্বাচন প্রতিহত-প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়ে ৫ জানুয়ারি ইস্যুতে দিনগুলোকে বিভীষিকাময় করে তোলা হয়েছিল। ইতিহাস এর সাক্ষী। ‘দেশে গণতন্ত্র নেই’, দাবি করে দেশের দুই সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে মন্ত্রী ও উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসা ব্যারিস্টার মওদুদ দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গণতন্ত্র ফেরানোর কথা বলে আসছেন। ইতিহাস থেকে যে আমরা কিছুই শিক্ষা নিই না এটি তার প্রমাণ। ফলে কেউ কেউ এখনো ‘গণতন্ত্র’ শেখান। মানুষ পুড়িয়ে মারার নাম, সড়ক অচল করে দেওয়ার নাম, বৃক্ষ কেটে সাফের পর সড়ক অবরোধ করে দেওয়ার নাম কী গণতন্ত্র? মতিঝিল-দিলকুশার তা-বের নাম? তখন পরিবেশবাদীরা কোথায় ছিলেন, জানি না। তবে তারা চুপ ছিলেন। চিহ্নিত সেই শ্রেণির সংবিধান বিশেষজ্ঞরা কোথায় ছিলেন? নারী বাদীদের অনেকে চুপ ছিলেন তখন। নারীদের বাসে পুড়িয়ে মারা হয়েছিলো, হত্যা-সন্ত্রাসের শিকার তো হয়েছেনই, প্রায় পাঁচ হাজার নারী বিপদগ্রস্ত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। কারণ, সেইসব ভোটকেন্দ্র ভেঙ্গেচুরে, আগুন দিয়ে বিনাশ করা হয়েছিলো। এখন দেশে ১০৬ উপজেলা প্রশাসন চালান নারীরাই। ১০ জন সচিব, ৬ জন ডিসি ও ১৬ জন এডিসি নারী।
বিদেশিরাও সংবিধান বোঝে কিন্তু আমাদের রাজনীতিকদের কেউ কেউ সংবিধানের উল্টোটা বোঝানোর চেষ্টা করেন। সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশল না জানা না থাকলে তারা রাজনীতি করবেন কীভাবে? ’৯০ এর তিন জোটের রুপরেখার কথা তো মনে থাকার কথা। পরপর তিনটি নির্বাচন তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়ার কথা ছিলো। ৯০- এর পর পাঁচটি নির্বাচন হয়েছে। প্রশ্ন কী এখানেই, তাহলে? ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ‘আয়রন লেডি’ ইন্দিরা গান্ধীর কথাই যদি বলি? কে না জানে ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ। কিন্তু সেই দেশেও তৃতীয় কোনো ব্যক্তির কাছে ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচন হয় না। ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় ঘটে। ইন্দিরা ও সঞ্জয় দুজনই বিশাল ভোটে হেরে যান কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলি ও আমেথি আসনে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর ইন্দিরা গান্ধী মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকে সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। সেখানেও নির্বাচিত সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়েছিল। গণতন্ত্রের জন্য কান্না করবেন, আর অগণতন্ত্র কায়েম করবার ওস্তাদ হবেন সেই দিন আর নেই।
ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের বিদায়ী আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ডি ওয়াটকিনস সম্ভবত দুই নভেম্বর কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে আগামী নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে হবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, তাতে বাংলাদেশের জনগণের আকাক্সক্ষাই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনিও ৩০ লাখ শহীদের রক্তের কথা বলেছেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পূর্বশর্ত অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, যার কথা জাতিসংঘের বিদায়ী দূতও বলেছেন। গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় ও টেকসই করতে হলে প্রথমে আমাদের দরকার মানসিকতার পরিবর্তন, স্বচ্ছ রাজনীতির। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারলে, অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্ত হলে বিশ্ব আমাদের গুরুত্ব দেবে। বিদেশিরাও সমীহ করবে। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। বাইরের কেউ করে দেবে না। একটি নির্বাচন কেবল জয়-পরাজয় বা ভোটের হিসাব-নিকাশ মেলানো নয়। এর সঙ্গে যুক্ত আছে ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানে বর্ণিত সেই ধ্রুপদি শব্দগুচ্ছ ‘বাংলাদেশ হইবে একটি প্রজাতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্রের মালিক হইবে জনগণ।’
সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কথা কেবল মতলববাজরা ভালো বোঝে। মূল সংবিধান অর্থাৎ যে সংবিধান আমাদের আত্মপরিচয় প্রকাশ করেছে, যে সংবিধান বিশ্ববাসীকে বাঙালি চিনিয়েছে, সেই মূল সংবিধানের বাইরে গিয়ে. কেটেকুটে, ছিঁড়ে, টুকরো করে দীর্ঘকাল দেশের সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসকরা কিনা করেছে তা কী বলার অপেক্ষা রাখে?
সংবিধানের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে ২০১৫ খ্রীস্টাব্দের ডিসেম্বরের দিকে সম্ভবত বিবিসি বাংলার সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ একটি চমৎকার প্রাণখোলা সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনি দেশের পোড়খাওয়া রাজনীতিক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জেল খটেছেন। তার জীবনের নানা দিক নিয়ে রাষ্ট্রপতি কথা বলছিলেন। ইচ্ছে থাকলেও সংবিধানের বাধ্যবাধকতা ও তার সীমাবদ্ধতার কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতির যাতায়াতের সময় সড়কের দুই পাশের মানুষের প্রায় এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা, সড়কপথ বন্ধ করা, যাত্রীসাধারণের গতিরোধ করা, নির্ধারিত গন্তব্যে মানুষের যাত্রাপথের ভোগান্তি, এম্বুলেন্স রোগীর অসুবিধার কথা অকপটে স্বীকার করে একথাই বলেন, যে ‘এসব আমার অপছন্দ।’ বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক সংকট সমাধানের জন্য নানা সময় অনেকে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা আশা করেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারেন? ওই সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গল্পকার
সম্পাদনা: আশিক রহমান

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়