শিরোনাম
◈ ‘নাম লেখালেই নম্বর’ যুগ শেষ : জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনকোর্সে নম্বর পেতে বাধ্যতামূলক ৬০% উপস্থিতি ◈ ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে পর্যায়ক্রমে কারখানা ছুটি দেয়াসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ◈ জুনে রিজার্ভ দাঁড়াবে ৩০ বিলিয়ন ডলার : গভর্নর ◈ বাংলাদেশ - পাকিস্তান সি‌রি‌জের নতুন সূচি প্রকাশ ◈ এবার টাঙ্গাইলে শেখ হাসিনার নামে করা মামলা ৪৮ ঘণ্টার মাথায় প্রত্যাহার, কারণ যা জানাগেল ◈ ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাবাহিনী প্রধান ◈ দেশের বাজারে আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম ◈ দুই মামলায় ব্যারিস্টার সুমনকে কেন জামিন নয়, হাইকোর্টের রুল ◈ নুরের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলার অভিযোগ ডিএনসিসির, জবাব দিল গণঅধিকার পরিষদ ◈ চাকরিতে শৃঙ্খলা ফিরাতে নতুন অধ্যাদেশ, কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক

প্রকাশিত : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৭ সকাল
আপডেট : ০৬ নভেম্বর, ২০১৭, ০৬:২৭ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

জজ মিয়ার স্রষ্টারা এখনও আছেন

প্রভাষ আমিন : বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কক্সবাজার সফর নিয়ে রাজনীতি শেষ হয়নি। বরং যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা চলবে অনেকদিন। আওয়ামী লগের প্রথম অভিযোগ, ‘বেগম জিয়া সড়কপথে গেলেন কেন? আকাশপথে গেলেই তো আর ঝামেলা হতো না। খালেদা জিয়া ইস্যু সৃষ্টি করার জন্যই সড়কপথে গেছেন এবং ইস্যু সৃষ্টি হয়েছে।‘
.
আওয়ামী লীগ আরো অভিযোগ করেছে, ‘বেগম খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে নয়, তাদের নিয়ে রাজনীতি করতে গেছেন।‘ খুবই সত্য অভিযোগ। বেগম খালেদা জিয়া একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। তিনি তো সবকিছু থেকেই রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করবেন। এটাই স্বাভাবিক। যতক্ষণ না তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে বা তিনি বেআইনী কিছু করছেন; ততক্ষণ আমার কোনো আপত্তি নেই।
যখন বেগম খালেদা জিয়ার ডাকা অবরোধের সময় দেশজুড়ে পেট্রোল সন্ত্রাস হয়েছে; আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। কিন্তু কক্সবাজার আকাশপথে যাবেন না নৌপথে যাবেন না সড়কপথে যাবেন; সেটা তার ইচ্ছা। আকাশপথে গেলে বেগম খালেদা জিয়ার আরাম হতো, সরকারেরও সুবিধা হতো। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া তো সরকারের সুবিধা ভেবে রাজনীতি করবেন না।
তিনি রাজনীতি করতে নেমেছেন, আরাম করতে নয়। বরং বেগম জিয়ার ঢাকা-কক্সবাজার আসা-যাওয়ায় গোটা চট্টগ্রাম বিভাগের বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দারুণ জাগরণ সৃষ্টি করেছে। বেগম জিয়া হত্যা-সন্ত্রাস-পেট্রোল বোমার রাজনীতি অতীত করে জনগণের কাছে গেছেন; এটা তো ইতিবাচক। সরকারের দায়িত্ব ছিল বেগম জিয়ার যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন করা। সেটা করতে সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। যাওয়া এবং আসার পথে ফেনীতে বেগম জিয়ার গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে।
যাওয়ার পথে হামলায় বেগম জিয়ার বহরে থাকা বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহতও হয়েছে। ফেরার পথে বেগম জিয়ার বহর ফেনী ছেড়ে আসার পর রাস্তার পাশে থাকা দুটি বাস পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়ে গেছে।
এই হামলা নিয়ে যথারীতি বিএনপি-আওয়ামী লীগ পরস্পরকে দায়ী করেছে। আমাদের রাজনীতিতে এই পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি অনেক পুরোনো। এ ঘটনা নিয়ে
অনেক অডিও-ভিডিও ফাঁস হয়েছে। কোনোটা মানুষ বিশ্বাস করেছে, কোনোটা করেনি। যাওয়ার পথে হামলার ঘটনায় হামলাকারীদের কারো কারো ছবি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে, পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।
যাওয়ার পথে হামলার পর আমি পরিবর্তনডটকম’এ ‘ধরিয়া প্রমাণ করতে হবে মারেন নাই’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছিলাম। তাতে দাবি জানিয়েছিলাম, হামলাকারী
যেই হোক, পুলিশ যেন তাদের ধরে। পুলিশ তো রাজনৈতিক পারস্পরিক দোষারোপ শুনবে না। তাদের কাজ হলো, যারা হামলা করেছে, দল নির্বিশেষে তাদের ধরা।
পুলিশের প্রথম দায়িত্ব ছিল বেগম জিয়ার যাত্রাপথ নিরাপদ রাখা। সে দায়িত্ব পালনে তারা চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাদের দ্বিতীয় ছিল, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা। সে কাজটি মোটেই কঠির ছিল না। অন্তত যাদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে, তাদের ধরা তো ডালভাত ছিল।
কিন্তু পুলিশ সেই সহজ কাজটি করতেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশের ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ হয়েছে বেগম জিয়া ফেরার সময়। যেহেতু দুদিন আগে বেগম জিয়া যাওয়ার সময় ফেনীতে হামলা হয়েছে, তাই ফেরার সময় এখানে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেই নিরাপত্তার মধ্যেও পেট্রোেল বোমায় পুড়েছে বাস।
যদি কোনো হামলা ঠেকাতেই না পারে, তবে আর পুলিশের সেখানে ভিড় বাড়িয়ে লাভ কি হলো? একদম মান্ধাতা আমলের বাংলা সিনেমার ফর্মুলা। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর শেষ দৃশ্যে পুলিশ এসে বলবে, কেউ আইন হাতে তুলে নেবেন না। কিন্তু পুলিশও যে বদলে গেছে, তারা যে অনেক স্মার্ট হয়ে গেছে, তার প্রমাণ সুপারহিট ‘ঢাকা অ্যাটাক’।
কিন্তু ফেনীর পুলিশ মনে হয় এথনও ঢাকা অ্যাটাক দেখেনি। দেখলে সেই পুরোনো ফর্মুলায় যেতো না। আরো স্মার্টলি হ্যান্ডল করতো। পুলিশ বরং সেই পুরানো স্ক্রিপ্টই ফলো করলো। বরং দেখেশুনে মনে হচ্ছে, তারা ফেরার সময়কার হামলার জন্য অপেক্ষা করছিল।
একই দিনে পুলিশ বাদী হয়ে দুই ঘটনায় মামলা করেছে। অনেক ‘তদন্ত’ করে পুলিশ দুই ঘটনার পেছনে বিএনপির সাবেক দুই সাংসদ ভিপি জয়নাল ও রেহানা আক্তার রানুর অন্তর্দ্বন্দ্বকে দায়ী করা হয়েছে। যাওয়ার পথে হামলার জন্য পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ২৫/৩০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
আর ফেরার সময় বাসে পেট্রোল বোমা হামলার জন্য বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ৬৫ জনতে আসামী করে মামলা করা হয়েছে। এর আগে বিএনপিরচট্টগ্রাম মহানগরের নেতা শাহাদাত হোসেনের সাথে ফেনীর এক স্থানীয় বিএনপি কর্মীর টেলিফোন সংলাপ ফাঁস হয়েছিল। কিন্তু সেই টেলিফান নাটক হালে পানি পায়নি। বরং টেলিফান সংলাপও যে ফটোশপ করা সম্ভব, তা প্রমাণিত হয়েছে।
বরং আওয়ামী লীগের অভিযোগের সাথে পুলিশের তদন্ত মিলে গেছে। পুলিশের দৃষ্টিতে হামলার জন্য যেহেতু বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব দায়ী, আসামী যেহেতু তারাই; তাই এখন চলবে ব্যাপক ধরপাকড়। ইতিমধ্যে ১৯ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। ফেনীর পুলিশের নিশ্চয়ই ঈদ লেগেছে। দুই মামলায় প্রায় ১০০ আসামী। তাদের অনেকেই আবার অজ্ঞাতনামা। জমজমাট গ্রেপ্তার বাণিজ্য চলবে সেখানে।
কেন বললাম, পুলিশ দ্বিতীয় হামলার জন্য অপেক্ষা করছিল? কারণ বেগম জিয়ার ফেরার পথে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার জন্য দৃশ্যত বিএনপিই দায়ী। বিএনপির সাবেক দুই সাংসদের অন্তর্দ্বন্দ্বই হোক আর ছাত্রদলের পদবঞ্চিত কর্মীদের ক্ষোভের আগুনই হোক, ফেরার পথে পেট্রোল বোমাটা বিএনপি সম্পৃক্ত কেউ না কেউই ছুঁড়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনার সময় সেখানে বিএনপির অন্তত এক হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
কারণ সেখানে এক হাজার প্যাকেট খাবার বিলানো হয়েছে। পুরো বিষয়টিই পরিকল্পিত। কারণ হামলার পরপরই বিএনপি প্রতিবাদে লাঠি মিছিল করেছে। হয়তো যাওয়ার পথে হামলার কারণে বিএনপি যে মাইলেজ পেয়েছিল, তাকে আরেকটি বাড়াতে গিয়েই হয়তো দ্বিতীয় হামলার পরিকল্পনা। তবে অতি লোভে তাঁতি নষ্ট হয়েছে। তবে ফেনীর লোকজন বলছে, প্রথম হামলাটি জায়েজ করতেই দ্বিতীয় হামলার ফাঁদ পাতা হয়েছে।
আর সেই পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে বিএনপি। কারণ নিজামউদ্দিন হাজারীর সাম্রাজ্যে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইশারা ছাড়া এ ধরনের হামলা করার সাহস কারো নেই। এক স্থানীয় সাংবাদিক বললেন, নিজামউদ্দিন হাজারী হলেন, বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত।
তিনি সবকিছু করেন- মারবো এখানে, লাশ পড়বে শ্মশানে স্টাইলে। বিএনপি ফাঁদে পা দেয়ার পরই তৎপর হয়েছে পুলিশ। এখন দ্বিতীয়টির সাথে প্রথমটি মিলিয়ে, বিএনপিকে দৌড়ের ওপর রাখতে পারবে। আবার গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে আরামসে টাকাও কামানো যাবে।
দ্বিতীয় হামলার দায় না হয় বিএনপির ঘাড়ে চাপানো যাবে। কিন্তু বেগম জিয়া যাওয়ার পথে যে হামলা, সেটি বিএনপির ঘাড়ে চাপানোর সুযোগ কোথায়? বিভিন্ন গণমাধ্যমের ছবি, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ- সব মিলিয়ে প্রথম হামলার জন্য দায়ীরা চিহ্নিত। ফেনী সদরের শর্শদী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওসমান গনি রিয়েলের লাঠি হাতে ছবি সবার মোবাইলে আছে। পুলিশ চাইলে হামলার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে বাকিদেরও চিহ্নিত করতে পারবে।
কিন্তু সেই কষ্টটুকু তারা করেনি। ভিপি জয়নাল আর রানুর দ্বদ্বের ওপর দায় চাপিয়ে উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। পুলিশের এই দারুণ আবিষ্কার দেখে মনে হয়, জজ মিয়া নাটকের নাট্যকারের প্রেতাত্মারা এখনও পুলিশে রয়ে গেছে। এবং এরা কখনোই সরকারের শুভাকাঙ্খী নয়।
প্রভাষ আমিন: সাংবাদিক, কলাম লেখক; বার্তা প্রধান, এটিএন নিউজ।
probhash2000@gmail.com । পরিবর্তন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়