মনিরুল ইসলাম: ডিজিটাল প্লাটফর্মে (ভার্চুয়াল জগৎ) শিশুদের ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বিকল্প বিনোদনের সুযোগ না থাকায় শিশু কিশোররা মেবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা সাইবার বুলিং-এর শিকার হচ্ছে। যা তাদের স্বাভাবিক মেধা বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই জনগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবারসহ সকলকে সচেতন হতে হবে।
আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘স্পিক আপ ; ইউ-সিএসও’ প্রকল্পের সূচনা অনুষ্ঠানের এ সব কথা বলেন তারা। ইউরোপীয়ান ইউনিয়ানের আর্থিক সহয়তায় উন্নয়ন সংস্থা ‘টেরে ডেস হোমস্ নেদারল্যান্ডস’ (টিডিএইচ-এনএল), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স (বিটিএস) ও ইনসিডিন বাংলাদেশ আয়োজিত ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন টিডিএইচ-এনএল বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার নজরুল ইসলাম।
আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ টেলি কমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. সাইফুল হাসান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ মিশনের টীম লিডার এনরিকো লরেনজো, ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী, বিটিএস’র জাহিদ হোসেন, আইন ও শালিস কেন্দ্রের তাহমিনা বেগম প্রমূখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিনিয়ত শিশু-কিশোররা ডিজিটাল প্লাটফর্মের উপর নির্ভার হয়ে পড়ছে। কারণ আমরা তাদেরকে বিকল্প দিতে পারছি না। ডিজিটাল প্লাটফর্মের শিশু-কিশোরদের অবাধ বিচরণের কারণে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার অভাবে নানা ধরণের হয়রানি বাড়ছে। এই অবস্থায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে মতামত প্রদানের স্বাধীনতা এবং শিশুদের অনলাইন হয়রানি ও নির্যাতনের ঝুঁকি হ্রাসে যুব সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। সুশীল সমাজের সংগঠনের সাথে কর্ম-সর্ম্পক নির্মাণের মাধ্যমে স্থানীয় সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে নজরুল ইসলাম বলেন, শিশু ও যুবদের ডিজিটাল নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। যাতে তাদের অনলাইনে অংশগ্রহণ ও সক্ষমতাবৃদ্ধি পায়। তথ্য উপস্থাপন ও আইনগত সংস্কারকে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে জবাবদিহিতা ও অনলাইন নিরাপত্তা কাঠামো উন্নত হয়। এক্ষেত্রে সরকার, বেসরকারি খাত, গণমাধ্যম ও কমিউনিটির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বৃদ্ধির মাধ্যমে একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শিশু ও যুব, নাগরিক সংগঠন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সরকারি কর্মকর্তা, গণমাধ্যমকর্মী, অভিভাবক, কমিউনিটিসহ বিভিন্ন গোষ্ঠির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানের মূল বক্তব্যে বলা হয়, ‘স্পিক আপ ; ইউ-সিএসও’ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ১২ থেকে ২৪ বছর বয়সী শিশু ও যুবদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নীত করা, বিশেষতঃ ডিজিটাল পরিসরে। প্রকল্পে অনলাইনে যৌন শোষণ ও নির্যাতন, সাইবার বুলিং, ভুল তথ্য প্রচার ও হয়রানির মতো ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলার পাশাপাশি লিঙ্গ সমতা ও অন্তর্ভুক্তির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির মূল লক্ষ্য হলো, নাগরিক সংগঠনগুলোর ক্ষমতায়ন করা, যাতে তারা অনলাইনে তরুণদের অধিকারের সমর্থক ও রক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারে।
তাদের কারিগরি ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে, নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে শিশু ও যুবদের নেতৃত্বে একটি অধিকারভিত্তিক আলোচনার পরিবেশ গড়ে তুলতে পারে। যেখানে প্রান্তিক, প্রতিবন্ধী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন শিশু ও যুবদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেয়ে ও তরুণীরা অনলাইনে নির্যাতনের শিকার হওয়ায় এই প্রকল্পে লিঙ্গ-সংবেদনশীল, ট্রমা-সচেতন ও শিশু-বান্ধব পদ্ধতির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।