শিরোনাম
◈ এপ্রিল মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযোগী নয়: মির্জা ফখরুল (ভিডিও) ◈ কোরবানির মৌসুমে ঢাকামুখী দুই হাজার দিনাজপুরের কসাই, জনপ্রতি লক্ষাধিক টাকার আয় লক্ষ্যমাত্রা ◈ ন্যায়বিচার ও ভোটের সমতল মাঠ চায় জাতি: জামায়াত আমির ◈ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ শেষে দেশের মঙ্গল কামনায় দোয়া চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস ◈ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনায় বায়তুল মোকাররমে বিশেষ মোনাজাত ◈ ঈদের আগের দিন সড়কে প্রাণ গেল ২০ জনের ◈ প্রধান উপদেষ্টাকে নরেন্দ্র মোদির ঈদ শুভেচ্ছা ◈ আজ দেশে উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা: প্রস্তুত ঈদগাহ ও মসজিদ, নিরাপত্তা জোরদার ◈ ঈদের দিন যেমন থাকবে আবহাওয়া ◈ ২০২৬ সালের এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন: ড. ইউনূসের ঘোষণা ও ইইউর প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত : ০৬ জুন, ২০২৫, ১০:০৩ দুপুর
আপডেট : ০৭ জুন, ২০২৫, ০৩:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

নারীকে লাথি মারা বহিষ্কৃত জামায়াত নেতাকে ফুলেল শুভেচ্ছা কী বার্তা দেয়

এল আর বাদল : সম্প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের এক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে এক নারীকে লাথি মারার ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তির পরে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোকে ঘিরে নানা আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বামধারার রাজনৈতিক সংগঠনগুলো এবং নাগরিক সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস ও মুক্তির প্রতিবাদে গত ২৮শে মে বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এলাকায় গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের ডাকা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে সময় হামলা চালায় শাহবাগবিরোধী ঐক্য।

এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। এদিন এক নারীসহ দুজনকে লাথি মারার ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, হামলার পর প্রেসক্লাবের পাশে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতা–কর্মীরা। সেখানে এক পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে।

ওই ব্যক্তি পুলিশের চোখ এড়িয়ে নেতা–কর্মীদের পেছনে যান। সেখানে দাঁড়িয়ে হঠাৎ একজনকে লাথি মারেন তিনি। এরপর ঘুরে আবার আরেক নারীকে লাথি মারেন।

পরে জানা যায়, লাথি মারা ওই যুবকের নাম আকাশ চৌধুরী। যিনি ছাত্রশিবিরের চট্টগ্রাম মহানগরের ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা। এর আগে তার বিরুদ্ধে নগরের মুরাদপুরে সুন্নিদের কর্মসূচিতে হামলারও অভিযোগ ছিল। এরপর সমালোচনার মুখে আকাশ চৌধুরীকে কর্মী পদ থেকে 'বহিষ্কার'করে জামায়াতে ইসলামী। তার একদিনের মাথায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত ৩০শে মে মহানগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহর সই করা বিবৃতিতে আকাশ চৌধুরীকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। জামায়াতের বিবৃতিতে বলা হয়, আকাশ চৌধুরী নামের সংগঠনের একজন কর্মী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া সেখানে উপস্থিত হয়ে যে কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছে, তা চরমভাবে নিন্দনীয়।

'আমরা কোনোভাবেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেওয়ার পক্ষপাতী নই। তাই কেন্দ্রীয় দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এবং উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ বিবেচনায় নিয়ে আকাশ চৌধুরীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলো' বিবৃতিতে জামায়াত।

পরে পহেলা জুন চট্টগ্রাম নগরীর লালদীঘি এলাকা থেকে আকাশ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে কোতয়ালি থানা পুলিশ। এরপর আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

তবে ৪ঠা জুন আকাশ চৌধুরীকে জামিন দেয় আদালত। বুধবার চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম আবু বক্কর সিদ্দিক শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী পিপি মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, "আকাশ চৌধুরীর পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। তবে ১৫ই জুন থেকে প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দেওয়ার শর্তে তার জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে"।

জামিনে মুক্তির পর আকাশ চৌধুরীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ছবি ও ভিডিও আবারো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন এবং তার পাশে ছবি তুলছেন।

এই ঘটনা নতুন করে বিতর্কের জন্ম দেয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, একজন নারীকে প্রকাশ্যে আঘাত করার অভিযোগে অভিযুক্ত একজনকে এভাবে বরণ করা কী বার্তা দেয়?

গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে শুরু করে বাম রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে ঘটনাটিকে "সহিংসতার স্বীকৃতি" বলে আখ্যায়িত করেছে।

পুরো ঘটনাকে গ্রেফতারের নাটক বলে অভিহিত করেছেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এবং ভুক্তভোগী ওই নারী। তিনি বলেন, "বিষয়টা যেহেতু ভাইরাল হয়ে গিয়েছে তাই প্রশাসন চাপে পড়ে একটা অ্যাকশন নিয়েছে। কিন্তু মামলাটি মিথ্যাভাবে সাজানো হয়েছে।"

এক্ষেত্রে প্রশাসনের অবস্থান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি, "আমরা যে প্রশাসন দলগত অবস্থান থেকে সরে এসে যে একটা নিরপেক্ষ জায়গায় অবস্থান করবে, সেটা আর হয়নি"। এরপর অভিযুক্তকে ফুল দিয়ে বরণ করার মাধ্যমে অপরাধকে উৎসাহিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে গত মার্চ মাসের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক নারীকে তার পোশাক নিয়ে হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে একইভাবে ফুল দিয়ে বরণ করা হয়েছিলো। রাজু ভাস্কর্যের সামনে ওই ছাত্রীকে 'পর্দা করেনি' বলে থামিয়ে কুরুচিপূর্ণ কথা বলার অভিযোগে ভুক্তভোগী নারী শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ সংক্রান্ত ছবি ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা দেখা দেয়। মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও পরে দ্রুতই ছাড়া পেয়ে যান। পরে 'তৌহিদী জনতা'র ব্যানারে একদল ব্যক্তি তাকে মাথায় পাগড়ি ও গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বরণ করেন।

এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেবল বিচ্ছিন্ন কোনো সামাজিক বিচ্যুতি নয়, বরং সমাজে নারীর অবস্থান, আইনের প্রয়োগ, এবং মূল্যবোধের গভীর সংকটের প্রতিফলন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এবারও সহিংস আচরণের জন্য দায়ী একজনকে ফুলেল সংবর্ধনা দেয়ার বিষয়টি অপরাধীকে পুরস্কৃত করার সামিল বলে এবং এটি ভিকটিম-ব্লেমিং সংস্কৃতিকে উৎসাহিত করছে বলে মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।

এদিকে আকাশ চৌধুরীকে ফুলেল সংবর্ধনা দেয়ার মাধ্যমে নারীর সম্পর্কে একটি দলের অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা।

তিনি বলেন, "জামিন পাওয়ার অধিকার সবার আছে। কিন্তু কাকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে, কাকে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে না-তার মাধ্যমে একটি দলের নারীর সম্পর্কে অবস্থান পরিষ্কার হয়। জামায়াত তাকে বহিষ্কার করেছে ঠিকই তবে তাদেরই নেতাকর্মীরা তাকে আবার ফুলেল সংবর্ধনা জানিয়েছে। এখন এটা যদি অপরাধকে সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা থেকে করে থাকে সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়।

তিনি আরো বলেন, "এভাবে ভিক্টিমকে বুলি করা আর অপরাধীকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা ভয়াবহ বার্তা দেয় এবং সেই বার্তাটি হলো নারী নিপীড়ন স্বাভাবিকের চেয়েও বড় বীরত্ব"।

রাজনৈতিক দলগুলো যখন কৌশলে অপরাধকে স্বাভাবিকীকরণ করে তখন সাধারন মানুষকে, নারী অধিকার কর্মীদেরই এর প্রতিবাদ করতে হবে এবং এর বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে বলে তিনি জানান। এ ধরণের সহিংসতার সুষ্ঠু বিচার না হলে ভবিষ্যতে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এই ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে এই ফুলেল সংবর্ধনার সাথে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, "আকাশ চৌধুরীর সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তাকে কারা সংবর্ধনা জানিয়েছে আমাদের জানা নেই। হয়তো ব্যক্তিগত বন্ধুবান্ধব হতে পারে। এগুলো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এখানে আমাদের কেউ নেই। আমরা সাংগঠনিকভাবে তাকে নিন্দা জানিয়েছি। ব্যক্তিগতভাবে কেউ ভুলত্রুটি করে থাকলে দায়িত্ব সেই ব্যক্তির।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়