স্পোর্টস ডেস্ক : ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারে শুক্রবার ২০২৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ৪৮টি দল ১২টি গ্রুপে ভাগ হয়ে লড়বে বিশ্বসেরার মঞ্চে।
প্রতিবার বিশ্বকাপের ড্রয়ের পর সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় ‘মৃত্যুকূপ।’ কিন্তু আসছে আসরে দল বেড়ে যাওয়ায় এবং টুর্নামেন্টের নিয়মে পরিবর্তন আসায় সত্যিকার অর্থে তেমন কঠিন লড়াইয়ে হয়তো পড়তে হবে না কোনো দলকে। -- বিডিনিউজ
তারপরও দুইবারের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, আর্লিং হলান্ডের নরওয়ে, আফ্রিকার শক্তিশালী দেশের একটি সেনেগাল একই গ্রুপে পড়ায় কিছুটা হলেও বাড়তি রোমাঞ্চ হাতছানি দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে আগামী মার্চের প্লে-অফ শেষে এই গ্রুপে যোগ হবে ফিফা প্লে-অফ ২ (ইরাক, বলিভিয়া ও সুরিনাম) এর বিজয়ী।
বিশ্বকাপের মঞ্চে ফরাসিদের পাশে সেনেগাল নামটি উচ্চারিত হলেই ফুটবলপ্রেমীদের মনের পর্দায় হয়তো ভেসে ওঠে ২০০২ বিশ্বকাপের স্মৃতি।
বিশ্বসেরার মুকুট পরে সেবার খেলতে এসে উদ্বোধনী ম্যাচেই ভরাডুবি হয় ফ্রান্সের। তাদেরকে হারিয়ে নকআউট পর্বের পথে যাত্রা শুরু করে সেনেগাল, আর গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় ফ্রান্স। সেবার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে সেনেগাল। গত আসরে শেষ ষোলোয় খেলে দেশটি।
সবশেষ ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স গতবারও ফাইনালে জায়গা করে নেয়, কিন্তু শিরোপা লড়াইয়ে হেরে যায় আর্জেন্টিনার বিপক্ষে। কিলিয়ান এমবাপে, উসমান দেম্বেলে, আন্তোনিও কঁতেদের নিয়ে দিদিয়ে দেশমের দলটি এখনও দারুণ শক্তিশালী, টুর্নামেন্টেও থাকবে ফেভারিটের মর্যাদায়।
তবে তাদের জন্য ভয়ানক প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারে নরওয়ে। এবারের বাছাইয়ে যারা অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতায় চমকে দিয়েছে। আট ম্যাচের সবগুলো জিতে, চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে পেছনে ফেলে উঠেছে বিশ্বকাপে। আর্লিং হলান্ড-আলেকসান্দার সরলথ-মার্টিন ওডেগোরদের নিয়ে গড়া দলটি পর্যদুস্ত করতে পারে যেকোনো শক্তিকে।
দুই পরাশক্তি ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষই পেয়েছে।
পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পড়েছে ‘সি’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ মরক্কো, স্কটল্যান্ড ও হাইতি।
নামের ভারে বা শক্তির বিচারে ব্রাজিল অনেকটা এগিয়ে থাকলেও, গত কয়েক বছরে মরক্কোর পারফরম্যান্স অসাধারণ। গত বিশ্বকাপেও তারা প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে উঠেছিল সেমি-ফাইনালে। ব্রাজিলের সঙ্গে সবশেষ মুখোমুখি লড়াইয়েও জয়ের হাসি হাসে তারা; ২০২৩ সালের প্রীতি ম্যাচে ২-১ গোলে।
গতবারের শিরোপা জয়ের পর থেকে আর্জেন্টিনা এখনও আছে একইরকম দারুণ ছন্দে। এবারের বাছাইয়ে তারা লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের সেরা হয়েছে। জাদুকর লিওনেল মেসির সঙ্গে অভিজ্ঞ লাউতারো মার্তিনেস, হুলিয়ান আলভারেস, আলেক্সসি মাক আলিস্তের, এমিলিয়ানো মার্তিনেসদের নিয়ে আবারও দলটি ট্রফির দাবিদার।
তাদের সঙ্গে ‘জে’ গ্রুপে আছে অস্ট্রিয়া, আলজেরিয়া ও জর্ডান। ইতিহাস-ঐতিহ্য কিংবা শক্তি বিচারে আর্জেন্টিনার থেকে যারা অনেক পিছিয়ে। তবে, লড়াইটা যখন বৈশ্বিক আসরে, তখন এসব ফেভারিট তত্ত্ব অনেক সময়ই খাটে না।
গত বিশ্বকাপেই সেই অভিজ্ঞতা হয় আর্জেন্টিনার; প্রথম ম্যাচেই তাদেরকে হারিয়ে দেয় সৌদি আরব।
দলগুলোর শক্তির বিচারে গ্রুপ ‘জি’-এর লড়াই হতে পারে দুর্দান্ত। এখানে পট-১ থেকে আছে বেলজিয়াম। তবে সোনালী যুগ পেছনে ফেলে এসেছে দীর্ঘদিন ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের সিংহাসনে থাকা দলটি।
তাদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার সামর্থ্য আছে এশিয়ার শক্তি ইরান ও আফিকান নেশন্স কাপের রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন মিশরের। এছাড়া তিন আসর পর আবার বিশ্বকাপের টিকেট পাওয়া নিউ জিল্যান্ডও দেখাতে পারে চমক।
আগামী ১১ জুন পর্দা উঠবে বিশ্বকাপের ২৩তম আসরের।
১২ গ্রুপের প্রথম দুটি করে দল উঠবে নকআউট পর্বে। এছাড়া গ্রুপগুলোর তৃতীয় হওয়া সেরা আটটি দলও উঠবে পরের ধাপে। এরপর সেরা ৩২ দল নিয়ে শুরু হবে নকআউট পর্ব। ফাইনাল মাঠে গড়াবে আগামী ১৯ জুলাই।