ক্রিকেট শুধু একটি খেলা নয় এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ দৃশ্যকাব্য। যেখানে ব্যাট-বলের লড়াই মিশে যায় প্রকৃতির স্নিগ্ধতায়। পাহাড়ের কোলে, সমুদ্রের ধারে কিংবা সবুজের মখমলে ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে ইতিহাস আর আবেগের এক অপূর্ব মেলবন্ধন।
পৃথিবীর নানা প্রান্তে এমন দৃষ্টিনন্দন মাঠ আছে, যেগুলো ক্রিকেটের সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধনকে করে তুলেছে অনন্য। সবুজ পাহাড় আর চা-বাগানের নির্মল প্রকৃতির বুকে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশের গর্বে যুক্ত হলো এক উজ্জ্বল অধ্যায়।
ইংল্যান্ডভিত্তিক জনপ্রিয় ক্রিকেটমাধ্যম ‘ক্রিকেট থ্রি সিক্সটি ফাইভ’ বিশ্বের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও মনোরম সাতটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশের এই নান্দনিক স্টেডিয়ামটি।
চা-বাগানের ঢালু পাহাড় আর সবুজ বনভূমির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই মাঠটি যেন হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের গর্বের প্রতীক। সকালের কুয়াশা ভেজা মাঠ কিংবা সন্ধ্যার ম্লান হওয়া সূর্যের আলো সিলেটের এই স্টেডিয়াম যেন সবুজের সাথে উপভোগ করা সৃষ্টির অপরূপ সৌন্দর্য।
এমন অপার সৌন্দর্যে বসে শুধু খেলা দেখা নয়, এ যেন প্রকৃতির সাথে মনের আনন্দে গেয়ে ওঠা- এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।
সিলেটের মনোরম পরিবেশে ঘেরা এই স্টেডিয়ামটি দর্শকদের কাছে আলাদা টান সৃষ্টি করে। শহরের এয়ারপোর্ট রোডের পাশে পাহাড়ের ভ্যালিতে অবস্থিত এই মাঠ যেন সবুজে ঘেরা এক স্বপ্নলোক যেখানে প্রতিটি ম্যাচই মিশে যায় প্রকৃতির মায়ায়।
চারদিকে সবুজ পাহাড় আর চা-বাগানে উঁকি দেয়া সূর্যের আলো। সকাল কিংবা গোধূলির সোনালি দৃশ্য। এই মনোরম সৌন্দর্য সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে দিয়েছে এক অনন্য ও মুগ্ধকর রূপ।
২০০৭ সালে নির্মিত এই স্টেডিয়াম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ, টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ে ও আয়ারল্যান্ড ম্যাচের মাধ্যমে। এরপর থেকে এখানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সিরিজ, বিপিএলসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।
বাংলাদেশের জন্য এটি শুধু সৌন্দর্যের স্বীকৃতি নয়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের এক উজ্জ্বল পরিচয় হাজির করেছে এই স্টেডিয়াম। প্রকৃতির অপরূপ মেলবন্ধন আর ক্রিকেটের টানে সিলেটের সবুজ মাঠে যেন হয়ে উঠেছে পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের 'নকশী কাঁথার মাঠ'।
বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর সাত ক্রিকেট স্টেডিয়ামের তালিকায় আরো আছে, দক্ষিণ আফ্রিকার নিউল্যান্ডস ক্রিকেট স্টেডিয়াম, অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভাল, ভারতের ধর্মশালা এইচপিসিএ স্টেডিয়াম, পাকিস্তানের গওয়াদর ক্রিকেট স্টেডিয়াম, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্যারেন স্যামি ন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও ইংল্যান্ডের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড।
বিশ্বের নানান প্রান্তে এমন নান্দনিক স্টেডিয়াম যেন দর্শক ও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে জাগিয়ে তোলে আলাদা আনন্দ। পাশাপাশি তুলে ধরে সংশ্লিষ্ট দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অনন্য পাঠ। সূত্র: নয়া দিগন্ত