সালেহ্ বিপ্লব: ইউটিউবে ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ শীর্ষক টকশো-তে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন জামায়াতের ইসলামীর নায়েবে আমীর এবং সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
তিনি জানান নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তার দল। তিনি মনে করেন, ২০০৭ সালে নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে তৈরি জটিলতা সামলাতে বিএনপির আরো স্পষ্ট ভূমিকা রাখা দরকার ছিলো। এমনকি তার দল জামায়াতে ইসলামীও আরো ভূমিকা পালন করতে পারতো।
ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান এবং অনুষ্ঠানের সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দিনের প্রশ্ন ছিল, ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, মুক্তিযোদ্ধারা দেশের শত্রু এবং দুষ্কৃতিকারী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বলা হয়েছে ভারতে দালাল। এমন অবস্থানের জন্য জামায়াতে ইসলামীর আনুষ্ঠানিকভাবে, পরিস্কার ভাষায় জাতির কাছে দুঃখ প্রকাশ উচিত কি না?
জবাবে মোহাম্মদ তাহের বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের যেসমস্ত বক্তব্য আপনি উচ্চারণ করছেন, আমি মনে করি এগুলো খুবই অনুচিত উচ্চারণ। এই উচ্চারণকে কোনোভাবেই বৈধতা দেওয়ার, মেনে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি নিজেও এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানাই। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭১ সালে জামায়াতের বক্তব্য অনুচিত এবং এধরনের বক্তব্যের বৈধতা দেওয়া সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, আমরা যারা নিউ জেনারেশনে আছি, উই আর অব বাংলাদেশ, উই আর ফর বাংলাদেশ। আজকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যদি কোনো আক্রমণ হয় তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকেন, দিস ইজ ছাত্র শিবির, জামায়াতে ইসলামী এবং দিস ইজ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের যারা বিনা অস্ত্রে তাদেরকে মোকাবিলা করার জন্য সবার সম্মুখে এসে দাঁড়াবে।
প্রশ্ন ছিল, আপনি মনে করেন কি না, জামায়াতের অবস্থান অফিসিয়াল হওয়া উচিত, আনুষ্ঠানিকভাবে এটি করা উচিত?
জবাবে তিনি বলেন, আপনার কথা মেনে নিয়েই আমি বলতে চাই, যারা এসকল বক্তব্য দিয়েছে তারা আর পৃথিবীতেই নেই। বর্তমান জামায়াতে ইসলামীর বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং বাংলাদেশের গৌরবের বাইরে আর কোনো কিছুই চিন্তা করার নেই।
আওয়ামী লীগের সাথে কোনো রাজনৈতিক আঁতাত করছেন কি না জানতে চাইলে, ডা. তাহের জানান, এমন আঁতাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তার মতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় সে বিষয়টি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেই প্রমাণিত হয়েছে।
প্রশ্ন করা হয়, নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে আপনার ১০ জুন সমাবেশ করেছেন। নিবন্ধন পেলে আপনারা শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে নির্বাচন করবেন কি না?
উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের সমাবেশটি ছিলো বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দি বিরোধী নেতাদের মুক্তি, দ্রব্যমূল্য কমানো এবং আমাদের নিবন্ধনসহ বিভিন্ন দাবিতে। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন আর দলের নিবন্ধন- দুটি ভিন্ন বিষয়। তবে আমাদের যে অবস্থান, তাতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবো না।
প্রশ্ন ছিলো, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর নিরপেক্ষ সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী? শেখ হাসিনার সরকারও কি নিরপেক্ষ সরকার হতে পারে?
উত্তরে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নিরপেক্ষ হতে পারে না। কারণ এই সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেননি।
নিবন্ধনের দাবিতে আপনারা কি একই সঙ্গে রাজপথ ও সুপ্রিম কোর্টে লড়াই করবেন? এই প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, আমরা তাই করবো। দুঃখজনক বিষয়টা হচ্ছে, বাংলাদেশে বিচার বিভাগেও দলীয়করণ হয়ে গেছে। যদি সুবিচার করা হতো, তাহলে আদালতে আমাদের নিবন্ধন টিকে যেতো। এটা হলো আইনী প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, আমাদের নিবন্ধনের বিষয়টা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। আদালতে যেহেতু বিষয়টা পেন্ডিং আছে, তাই সিদ্ধান্ত না হওয়ার পর্যন্ত তারা নিবন্ধন বাতিল না করলেও পারতো। আমরা আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে পলিটিক্যাল ডিসিশনের জন্য আবেদন জানাচ্ছি। সরকার চাইলে সে সিদ্ধান্তটা নিতে পারে। আমরা আমাদের নিবন্ধন ফেরত পেতে পারি।