মনিরুল ইসলাম: বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছেন,
“যদি অনৈক্য কাটিয়ে উঠতে না পারি এবং সেই ফাঁক দিয়ে স্বৈরাচার ঢুকে পড়ে—তাহলে জাতি একদিন আমাদেরই দায়ী করবে। তাই দয়া করে স্বৈরাচার ফেরার পথ সুগম করবেন না।”
শনিবার বিকেলে মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংবিধান নয়, দায় যারা ব্যবহার করেছে
ডা. জাহিদ বলেন, “কেউ কেউ বলছেন—পি আর ছাড়া নির্বাচন হবে না, নইলে স্বৈরাচার আসবে। কিন্তু সংবিধানে কোথাও কি স্বৈরাচারের কথা লেখা আছে? দোষ সংবিধানের নয়, দোষ তাদের—যারা দিনের ভোট রাতে করেছে, বিনা ভোটে নির্বাচন করেছে। জনগণকে মালিক না ভেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসন কব্জা করে দেশ চালিয়েছে।”
তিনি যোগ করেন, “সংবিধান স্বৈরাচার হতে বলে না। কিন্তু যারা জনগণের ভোটাধিকারকে তোয়াক্কা করে না, তারাই কর্তৃত্ববাদী হয়। তাই পরিবর্তন আনতে হবে রাজনৈতিক মানসিকতায়, নিজেদের ‘আমিত্ব’ থেকে বের হতে হবে।”
পিআর প্রসঙ্গে
“পিআর পদ্ধতি পৃথিবীর সব গণতান্ত্রিক দেশে নেই। ব্রিটেনে নেই, ভারতে কেবল কয়েকটি প্রদেশে। তাই যারা পিআর চান, জনগণকে বোঝান, জনগণের রায় নিন। কিন্তু আলোচনার টেবিলে বসার পরিবর্তে রাজপথে সংঘাত তৈরি করা বা নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মানে অরাজকতা সৃষ্টি করা,” বলেন তিনি।
রেকর্ড ও দায়
ডা. জাহিদ প্রশ্ন রেখে বলেন, “যারা আজ পিআর নিয়ে কথা বলছেন, তাদের অনেকেই জীবনে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননি। তাহলে কিভাবে বলেন—জনগণ সংখ্যাগরিষ্ঠভাবে পিআর চায়? নির্বাচন বিলম্বিত করার মাধ্যমে কেবল স্বৈরাচারের ক্রীড়ানক হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।”
বিএনপি ও সংস্কার
তিনি বলেন, “বিএনপি সবসময় সংস্কারের পক্ষে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন, নারীর শিক্ষা, বিনা মূল্যে বই বিতরণ, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় গঠন—এসবই বিএনপির অবদান। বিএনপি সংস্কার মানে না—এ কথা যারা বলে, তারা নিজেদের আয়নায় মুখ দেখুক।”
ঐক্যের ডাক
ডা. জাহিদ আরও বলেন, “৫ আগস্ট ২০২৪-এ জাতীয় ঐক্যের নজির তৈরি হয়েছিল। আজ কেন হঠাৎ রাজপথে নামা? যদি ঐক্য ফিরিয়ে আনতে না পারি এবং তাতে স্বৈরাচার ফেরে, দায় আপনাদেরই বহন করতে হবে।”
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মৌলভীবাজার পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মমশাদ আহমদ। সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মো. আব্দুর রহিম রিপন।
প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দীকি, সাবেক এমপি এম নাসের রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচন হয়। দীর্ঘদিন পর ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ভোট গণনা চলমান রয়েছে।