শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের জন্য যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে চীনের কুনমিং শহর ◈ এবার জুয়া কাণ্ড নিয়ে যা বললেন অপু বিশ্বাস! ◈ জন্ম ভারতে, ক্রিকেট খেলেছেন পাকিস্তানের হয়ে, ক্রিকেট বিশ্বে এমন নজির বিরল ◈ সরকারি সফরে চীন গেলেন সেনাবাহিনী প্রধান ◈ রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর মতপার্থক্যের ম‌ধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে মীমাংসা কি সম্ভব? ◈ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উল্টে গেল প্রাইভেটকার, নিহত ৩ ◈ যে কারণে পা‌কিস্তা‌নের কিংবদন্তী ক্রিকেটার ওয়া‌সিম আক্রামের জেল হ‌তে পা‌রে! ◈ এশিয়া কাপ থেকে নাম তুলে নিলো পাকিস্তান, টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ধাক্কা ◈ বাংলা‌দেশ ক্রিকেট বো‌র্ডের আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন না মাহবুব আনাম ◈ ইইউ বাজারে ১৭.৯% রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, বাংলাদেশের আয় ১০.২৯ বিলিয়ন ইউরো

প্রকাশিত : ২১ আগস্ট, ২০২৫, ১০:৪৮ দুপুর
আপডেট : ২১ আগস্ট, ২০২৫, ০১:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

রাজ‌নৈ‌তিক দলগু‌লোর মতপার্থক্যের ম‌ধ্যে জুলাই সনদ নিয়ে মীমাংসা কি সম্ভব?

এল আর বাদল : বাংলাদেশে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের জুলাই সনদের মৌলিক কয়েকটি বিষয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের মীমাংসা এখনো হয়নি। এর বাস্তবায়ন প্রশ্নেও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থান বা প্রকাশ্যে নানা মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে।

অনেক প্রশ্ন, আপত্তি, মতপার্থক্য যাই থাকুক না কেন-রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট সংস্কারের ব্যাপারে বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর ওপর একটা চাপ তৈরি করেছে।

ফলে ক্ষমতায় যেতে চায় বা থাকতে চায় ক্ষমতার কাছাকাছি, এমন চিন্তার দলগুলো শেষপর্যন্ত জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে-সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। -- বি‌বি‌সি বাংলা

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়া না দেওয়ার প্রশ্নেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির মূল বিরোধ। বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল ও জোট অবস্থান নিয়েছিল আইনি ভিত্তি দেওয়ার বিরুদ্ধে।

এখন এই দলগুলোর নেতাদের অনেকে বলছেন, সনদ বাস্তবায়নের উপায় বের করতে তারা শক্ত অবস্থান থেকে কিছুটা ছাড় দিতে পারেন। বিষয়টাতে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের মতামত নিতে রেফারেন্স পাঠানো যায় কি না, এনিয়ে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলোর মধ্যে আলোচনা রয়েছে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাল্টাপাল্টি অবস্থান বা মতপার্থক্য থাকার পরও প্রভাবশালী দলগুলোসহ বেশির ভাগ দলই হয়তো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে, কিন্তু ভোটের পরে সেই সনদের কতটা গুরুত্ব থাকবে, নাকি 'কাগুজে বাঘ' হয়েই রয়ে যাবে-সেই প্রশ্ন রয়েছে।

এদিকে, জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে মতামত জানানোর সময়সীমা আজ শেষ হলেও জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল আরও দু'একদিন সময় চেয়েছে।

সেই প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আরও দুই দিন সময় বাড়িয়েছে। এখন ২২শে অগাস্টের মধ্যে দলগুলোকে তাদের মতামত লিখিতভাবে জানাতে হবে।

বিএনপি অবশ্য কয়েকটি বিষয়ে তাদের আপত্তি বা ভিন্নমতসহ লিখিত মতামত আজ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে।

আদালতের রেফারেন্সের প্রশ্ন কেন আসছে?

জুলাই সনদ নির্বাচিত সংসদ বাস্তবায়ন করবে নাকি নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দিয়ে এর বাস্তবায়ন করা হবে-এই প্রশ্নেই বিরোধ প্রভাবশালী দলগুলোর মধ্যে।

বিএনপি চায় এখন কোনো আইনি ভিত্তি না দিয়ে নির্বাচিত সংসদের জন্য রেখে দেওয়া। গণ-অভ্যুত্থানের বছর পূর্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়েছে, তাতেও বলা হয়েছে, নির্বাচিত সংসদ সংস্কারের সনদ বাস্তবায়ন করবে।

তবে জামায়াতে ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল এবং গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল এনসিপি নির্বাচনের আগেই আইনি ভিত্তি দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে একটা অনড় অবস্থান নিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভোট হলেই ক্ষমতার যাওয়ার সম্ভবনা দেখছে বিএনপি। সেকারণে দলটি ও এর মিত্র দলগুলো নির্বাচিত সংসদের ওপর সংস্কারের সনদ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

আর বিএনপির ওপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল হিসেবে জামায়াত ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দল পাল্টা অবস্থান নিয়েছে। ফলে প্রভাবশালী দলগুলোর এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে জুলাই সনদ বাস্তবয়নের প্রশ্নে চ্যালেঞ্জ দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

তারা বলছেন, জুলাই-অগাস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সংস্কার বা কোনো সনদ তৈরির বিষয় সেভাবে আসেনি। তখন একটাই লক্ষ্য দৃশ্যমান ছিল, তা হলো আওয়ামী লীগের শাসনের পতন।

এখনো অমীমাংসিত যেসব বিষয়

জুলাই সনদকে সংবিধানের উর্ধ্বে স্থান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এর চুড়ান্ত খসড়ায়। বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সে ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশ প্রাধান্য পাবে।

এ ব্যাপারে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির মতপার্থক্য। কারণ বিএনপি ও এর মিত্ররা আপত্তি তুলেছে।

দলটির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জুলাই হচ্ছে রাজনৈতিক সমঝোতা দলিল। কোনো সমঝোতা দলিলকে 'সুপ্রা কনস্টিটিউশনাল বা সংবিধানের উর্ধ্বে অবস্থান দেওয়া যায় না। সেটা করা হলে খারাপ নজির তৈরি হবে।

এছাড়া জুলাই সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, এই সনদের কোনো বিধান, প্রস্তাব বা সুপারিশের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত যেকোনো প্রশ্নের চূড়ান্ত মীমাংসার এখতিয়ার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকবে।

এই প্রস্তাব নিয়েও বিএনপির সঙ্গে অন্য দলগুলোর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে, কোনো সমঝোতা দলিলের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেওয়ার এই ভার সুপ্রিমকোর্টের ওপর দেওয়া যায় কি না?

কোনো নাগরিক যদি সনদের কোনো বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে চান, তাতে বাধা দেওয়া হলে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব করা হবে বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। তারা এ-ও বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থা থাকলে সেটা হবে কর্তৃত্ববাদী অবস্থান।

জামায়াত নেতা মি. তাহের মনে করেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া না হলে এর বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ থাকে। সেকারণেই তারা আইনি ভিত্তির ওপর জোর দিচ্ছেন

জুলাই সনদে সব দল কী সই করবে?

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলে আসছে, যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সেগুলো দিয়েই সনদ চূড়ান্ত করে তাতে দলগুলোর স্বাক্ষর নেওয়া হবে। কমিশন বলেছে, এপর্যন্ত সংস্কারের ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। তবে মূল বেশ কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

ঐকমত্য যে বিষয়গুলোতে হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে কোনো দলের স্বাক্ষরে আপত্তি থাকবে না। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাস্তবায়নের প্রশ্নে দলগুলোর মতপার্থক্য।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সনদ নিয়ে দলগুলোর ওপর পরিস্থিতির এক ধরনের চাপ রয়েছে। সেকারণে মতপার্থক্য থাকলেও তারা স্বাক্ষর করবে।

কিন্তু লেখক, বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসিকে বলেন, দলগুলো যদি মতপার্থক্য থাকার পরও স্বাক্ষর করে তাহলে নির্বাচনের পর তা গুরুত্ব হারাতে পারে। সেটা তখন একটি কাগুজে বাঘ হয়ে থাকতে পারে।

আবারও আলোচনা

চূড়ান্ত খসড়া দলগুলোর কাছে পাঠিয়ে ঐকমত্য কমিশন ২০ শে অগাস্টের মধ্যে মতামত জানানোর সময় দিয়েছিল। সেই সময়ের মধ্যে বিএনপি তাদের মতামত জমা দিয়েছে। তবে সব দল তাদের মতামত জমা দিতে পারেনি।

জামায়াতে ইসলামীর নেতারা জানিয়েছেন, খসড়ায় কিছু বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ আছে, সেজন্য তারা দু'এক দিন সময় চেয়েছেন। ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ২২ শে অগাস্টের মধ্যে সব দলের মতামত নেওয়া শেষ করবেন তারা।

এরপর আগামী সপ্তাহে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের মতামত ও সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে শেষ দফা আলোচনা করবেন। অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, অমীমাংসিত বিষয়গুলোতে সমঝোতার চেষ্টা তারা করবেন। কিন্তু তা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়