শিরোনাম
◈ ঢাকা উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক অবরোধ প্রত্যাহার, স্বাভাবিক হচ্ছে যান চলাচল ◈ টাকা ছাপাতে বছরে ব্যয় ২০ হাজার কোটি: ক্যাশলেস লেনদেনে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক ◈ কানাডায় ভারতীয় গ্যাং লরেন্স বিষ্ণোই চক্রের ভয়ংকর তৎপরতা:, সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার দাবি ◈ বিজ্ঞানীদের দাবি ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষের আয়ু হবে ১,০০০ বছর! ◈ লুট হওয়া অস্ত্রের তথ্য দিলে পুরস্কার দেবে সরকার: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ দ্রুত ‘ইলেকশন অ্যাপ’ উদ্বোধনের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার ◈ দেশে ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ, খসড়া তালিকায় নতুন যুক্ত ৪৫ লাখ ◈ জিরো রিটার্নধারীদের সতর্ক করলো এনবিআর, ভুল তথ্যে হবে শাস্তি ◈ যে ঘটনার কারণে রুশনারা আলী মন্ত্রিত্ব হারালেন! ◈ রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়ক অবরোধ, দুর্ভোগে উত্তরাঞ্চলের মানুষ

প্রকাশিত : ১০ আগস্ট, ২০২৫, ১১:১৫ দুপুর
আপডেট : ১০ আগস্ট, ২০২৫, ০৪:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : মহসিন কবির

সপ্তমবার ভাঙলো জাপা!

মহসিন কবির: জাতীয় পার্টি সপ্তমবারের মতো ভাঙলো। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রচণ্ড চাপের মুখে ছিলো দলটি। কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও চেয়ারম্যানের কার্যালয় একাধিক দফায় হামলার শিকার হয়েছে। একাধিক কর্মসূচি বন্ধ করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধীদের বাধায়। এরই মধ্যে দলের নেতৃত্বকে কেন্দ্র করে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব।

জাপায় এখন মুখোমুখি দুটি পক্ষ। একদিকে পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের নেতৃত্বে পার্টির তরুণ নেতৃত্ব, অন্যদিকে বিগত সময়ে বিভিন্ন সরকারের আমলে মন্ত্রী-এমপি হওয়া নেতাদের নেতৃত্বে একটি অংশ। জি এম কাদেরের অংশ চাইছে নতুন নেতৃত্বে নতুন জাপা। 

জিএম কাদের বিরোধীপক্ষের মহাসচিবসহ তিন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দল থেকে তিনি বহিষ্কার করেন এবং নতুন মহাসচিব নিয়োগ দেন। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বহিষ্কৃতদের নেতৃত্বে জাপার একটি অংশ। গতকাল মঙ্গলবারও তারা সংবাদ সম্মেলন করে জি এম কাদেরের এসব সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

এমন অবস্থায় দল আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলের কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, যখনই জাতীয় নির্বাচন সামনে আসে জাপায় অস্থিরতা দেখা দেয়, নতুন নেতৃত্বের দাবিও সামনে আসে। আর তখনই ভাঙনের মুখে পড়ে দলটি। এবারও সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সপ্তমবারের মতো ভাঙতে যাচ্ছে দলটি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেসিডিয়াম সদস্য গণমাধ্যমকে বলেছেন, দল আর কোনো সরকার বা গোষ্ঠীর দালালি চায় না। তরুণদের নেতৃত্বে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে চায় জাপা। কিন্তু সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কয়েকজন সিনিয়র নেতা। বিভিন্ন সময়ের মতো এবারও তারা একটি পক্ষকে সমর্থন দিয়ে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। তারা এমপি-মন্ত্রী হতে চায়। এ জন্য তারা এখন থেকেই দলকে চাপের মধ্যে ফেলেছে। নেতৃত্বে আসতে না পারলে প্রয়োজনে তারা নতুন দল গঠনেরও সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

এই প্রেসিডিয়াম সদস্য আরও বলেন, জি এম কাদের ২০১৮ সাল ও ’২৪ সালের নির্বাচনে দলের অংশগ্রহণকে মানতে পারছেন না। ওই দুই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য তার ওপর পরিবার ও দলের ভেতরের একটি অংশের চাপ ছিল। এবার তিনি সেই অংশকে বাদ দিয়ে সংগঠন করতে চাইছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ সেই অংশ। এই দলের মূলে যারা আছেন, তারা বিভিন্ন সময় মন্ত্রী ও এমপি হয়েছেন। এখন আবার তারাই মন্ত্রী হতে চান। এই নেতারা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তাদের লক্ষ্য ক্ষমতায় থাকা।

যেভাবে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত: জাতীয় পার্টির কাউন্সিল স্থগিত করাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়। ২৮ জুন পার্টির কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার পর হঠাৎ করেই হল বুকিং বাতিল করে চীন মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র কর্র্তৃপক্ষ। এ কারণে সম্মেলন স্থগিত করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, এতে শুরু হয় টানাপড়েন।

জিএম কাদের সম্মেলন স্থগিত করার একদিনের মাথায় ১৭ জুন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার যৌথ বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনা ছাড়াই আগামী দশম জাতীয় সম্মেলন স্থগিত করেছেন। এ সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অনভিপ্রেত। তারা ২৮ জুনেই পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের (কাকরাইল) সামনে কাউন্সিল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সুর নরম করে পার্টির প্রেসিডিয়ামের বৈঠক ডাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান : জাপার মহাসচিব পদ থেকে মুজিবুল হক চুন্নুকে সরিয়ে দেওয়া এবং চুন্নুসহ আরও তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন তিন বহিষ্কৃত নেতার একজন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

গতকাল রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই নেতা মন্তব্য করেন, তিনি ও চুন্নুসহ বহিষ্কৃত নেতারা এখনো স্বপদে বহাল রয়েছেন। মহাসচিব পদে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীর নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। যে প্রেসিডিয়াম সভার রেফারেন্স দিয়েছেন জিএম কাদের সেই বৈঠককেও অস্বীকার করেছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

এর আগে গত সোমবার তাকে এবং পার্টির মহাসচিবসহ তিন শীর্ষনেতাকে দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, যে সভার কথা বলে তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে, ওই প্রেসিডিয়াম সভায় কোরাম হয়নি। আর গঠনতন্ত্রের ২০/৩(খ) ধারায় বলা হয়েছে মহাসচিব চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে, প্রেসিডিয়ামের মিটিং আহ্বান করবেন। আলোচন্য সূচি নির্ধারণ করবেন মহাসচিব। পার্টির চেয়ারম্যান মিটিং ডাকার এখতিয়ার রাখেন না। সম্মেলন ঘোষণার পর পার্টির কোনো পদে পরিবর্তন পরিবর্ধন করতে পারবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে পার্টিকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং কাউন্সিলের মাধ্যমে সব সমস্যা সমাধানের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. মুজিবুল হক চুন্নু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলাসহ অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

সপ্তমবারের মতো ভাঙনের মুখে জাপা: প্রয়াত সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া জাতীয় পার্টিই সর্বোচ্চ ভাঙনের মুখে পড়া দেশের একমাত্র রাজনৈতিক দল। এবার নিয়ে সপ্তমবারের মতো ভাঙনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দলে। এর আগে ছয়বার ভেঙেছে জাপা।

জাপা নেতারা জানান, ক্ষমতায় থাকতেই ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি জাপা গঠন করেন এরশাদ। নব্বইয়ের গণআন্দোলনে এরশাদের পতনের পর হুদা-মতিনের নেতৃত্বে প্রথমবার ভাগ হয় জাপা। এরপর ১৯৯৭ সালে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ও শেখ শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দ্বিতীয় দফা এবং ১৯৯৮ সালে কাজী জাফর ও শাহ মোয়াজ্জেমের নেতৃত্বে তৃতীয় দফা ভাঙে দলটি। এরপর ২০০১ সালে নাজিউর রহমানের নেতৃত্বে চতুর্থ দফা এবং ২০১৩ সালের ২০ ডিসেম্বর বিশেষ কাউন্সিলের মাধ্যমে পঞ্চম দফা ভাঙন ঘটে। ষষ্ঠবারের মতো ভাঙন হয় এরশাদের মৃত্যুর পর।

২০১৯ সালের ১৪ জুলাই দলের প্রতিষ্ঠাতা এরশাদ মারা যান। তার মৃত্যুর পর চেয়ারম্যান পদ নিয়ে দ্বন্দ্বে ২০২৪ সালের ৯ মার্চ ষষ্ঠবারের মতো ভাঙে এরশাদের জাতীয় পার্টি। এরশাদের অসিয়তমতো তার ছোট ভাই জিএম কাদের চেয়ারম্যান হলে বেঁকে বসেন স্ত্রী রওশন এরশাদ। নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করে দলের কমিটি গঠন করেন, যার মহাসচিব করা হয় কাজী মামুনুর রশীদকে।

এবারও জিএম কাদের সম্মেলন ডাকতে গড়িমসি করলে সপ্তমবারের মতো দল ভাঙনের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন নেতারা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়