পূর্ব লন্ডনের বো এলাকায় অবস্থিত রুশনারা আলীর ওই বাড়িতে মাসিক ৩ হাজার ৩০০ পাউন্ড ভাড়ায় চারজন ভাড়াটিয়া থাকতেন। তাদের নির্ধারিত মেয়াদি চুক্তি শেষ হওয়ার পর গত নভেম্বরে চার মাসের নোটিশ দিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলা হয়। পরে বাড়িটি ভাড়ার জন্য ৪ হাজার পাউন্ড মাসিক ভাড়ায় আবার তালিকাভুক্ত করা হয়। এ নিয়ে গৃহহীনদের দেখভালের দায়িত্ব থাকা ‘মিনিস্টার’ রুশনারা আলীর ব্যাপক সমালোচনা হয়।
নিজের মালিকানাধীন একটি টাউনহাউস থেকে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করে ভাড়া একলাফে ৭০০ পাউন্ড বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় ব্যাপক সমালোচ-নার মুখে পড়েছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ এমপি রুশনারা আলী। ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে এ আচরণের কারণে তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। তার বিরুদ্ধে ‘গেটেড কমিউনিটির’ নিয়ম ভঙ্গ করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত বছর লেবার পার্টি সরকার গঠনের পর গৃহায়ন, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি আন্ডার সেক্রেটারি হন রুশনারা আলী। যুক্তরাজ্য সরকারের এই পদকে ‘হোমলেসনেস মিনিস্টার’ বা গৃহহীনবিষয়ক মিনিস্টার বলা হয়। এটাই ছিল তার যুক্তরাজ্য সরকারে প্রথম কোনো দায়িত্ব লাভ।
ভাড়া বৃদ্ধির এই অনুশীলনকে যুক্তরাজ্যের লেবার সরকার নিষিদ্ধ করতে চাইছে। এ বিষয়ে আলীর প্রতিবেশীরা উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের কাছে ই-মেইল পাঠায়। দ্য টাইমস আলীর সম্পত্তি এবং প্রতিবেশীদের উদ্বেগ সম্পর্কিত সেই ই-মেইলটি দেখেছে, যেখানে আগেই এ বিষয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। নথিপত্রে দেখা গেছে যে, বো কোয়ার্টারের বাসিন্দারা একাধিক বাড়িওয়ালাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য চাপ দিয়েছিলেন। যদি তিনজন ভাড়াটিয়া একটি পরিবারের মতো থেকে টয়লেট, বাথরুম বা রান্নাঘরের সুবিধা ভাগ করে নেয়, তাহলে তাকে একাধিক দখলকৃত সম্পত্তি হিসাবে গণ্য করা হয়। আলীর সামপ্রতিক ভাড়াটিয়ারা ছিলেন বিশ থেকে ত্রিশ বয়সী চার তরুণ পেশাদার।
টাইমস-এর হাতে যে ই-মেইলগুলো এসেছে তাতে দেখা গেছে যে, বো কোয়ার্টারের এস্টেট ম্যানেজার বাসিন্দাদের বলেছিলেন যে, এইচএমও সম্পত্তি পরিচালনা করবে তাকে আদালতে বিষয়টি জানাতে হবে। আলীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জোর দিয়ে বলেছিল যে, বাড়িটিকে এইচএমও হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়- কারণ এটি একটি একক বাসস্থান ছিল এবং ভাড়াটিয়ারা একটি যৌথ ভাড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তবে সরকারের ওয়েবসাইট অনুসারে, এই কারণগুলোর কোনোটিই এই সম্পত্তিকে এইচএমও হিসাবে বিবেচনা করা থেকে বিরত রাখে না। সম্পত্তির নথিতে আরও বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র একটি পরিবার বা ভাড়াটিয়া সেখানে থাকতে পারবেন। আলী ২০১৬ সাল থেকে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কাছে এই সম্পত্তিটি এইচএমও হিসেবে নিবন্ধিত করেছেন। এমপি’র ঘনিষ্ঠরা বলেছেন যে, এটি কাউন্সিলের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের জন্য করা হয়েছে, এমনকি যদি সম্পত্তিটি এইচএমও’র প্রয়োজনীয়তা পূরণ না করে তাও। এটা বোঝা যাচ্ছে যে, ম্যানেজিং এজেন্টরা ভাড়াটিয়া নেয়ার জন্য মালিককে পরামর্শ দিয়েছে যে, এটি তার লিজের নিয়ম লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে না।
আলীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই অভিযোগগুলো সঠিক নয়। রুশনারার ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে তার চুক্তিটি লিজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ম্যানেজিং এজেন্ট রেন্ডল এবং রিটনার বলেছে, ব্লন্ডিন স্ট্রিটের লিজহোল্ড টাউনহাউসগুলো এস্টেটের রক্ষণাবেক্ষণে অবদান রাখে এবং লিজের শর্তাবলী মেনে চলে। যার মধ্যে একাধিক দখলকৃত বাড়ি হিসেবে সাব- লেটিং নিষিদ্ধ করা অন্তর্ভুক্ত। আমরা এমন দাবি সম্পর্কে অবগত যে, এক বা একাধিক সম্পত্তি এইচএমও হিসেবে সাবলেট করা হচ্ছে। আমরা এই পরিস্থিতি সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং আমরা সর্বদা সংশ্লিষ্ট বাসিন্দাদের আমাদের সঙ্গে যেকোনো প্রমাণ শেয়ার করতে উৎসাহিত করি যাতে আমরা আরও তদন্ত করতে পারি এবং আমাদের ক্লায়েন্টের নির্দেশ অনুসারে কাজ করতে পারি।’
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় আলীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘রুশনারা তার দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং সমস্ত প্রাসঙ্গিক আইনি প্রয়োজনীয়তা মেনে কাজ করবেন।’ দ্য আই ‘সংবাদপত্রটি প্রথম এই খবর প্রকাশ করে, তারা জানিয়েছে যে, আলীর সাবেক ভাড়াটিয়ারা এখন নতুন বাড়ি খুঁজে পেয়েছেন। এদের মধ্যে একজন সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘আমি মনে করি না রুশনারা আলী আমাদের সম্পর্কে আদৌ ভাবেন... আমার মনে হয় তিনি কেবল টাকার কথা ভাবেন এবং এটিকে একটি ব্যবসা হিসেবে দেখেন।’