শিরোনাম
◈ ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ ◈ নির্বাচনের জন্য ঘেরাও করা লাগলে, এটা হবে দুর্ভাগ্যজনক: সালাহউদ্দিন আহমদ  ◈ গাইবান্ধায় দুই হ্যাকারের বাড়িতে অভিযানে যা পেলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (ভিডিও) ◈ সরকারের ভেতরে-বাইরে অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে: তারেক রহমান ◈ রাজধানীর যেসব এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করল ডিএমপি ◈ বাজারভিত্তিক হার চালুর ৩ দিনের মাথায় ডলারের দাম বাড়ল ◈ ঢাকাসহ ১১ জেলায় রাত ২টার মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে ◈ বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক আমদানি বন্ধ করলো ভারত ◈ ভারত-পাকিস্তান সংকটে ইউনূসের সতর্ক কূটনীতি ◈ নাশকতা ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে বরখাস্ত সৈনিক নাইমুল গ্রেফতার

প্রকাশিত : ১৭ মে, ২০২৫, ০৬:২৭ বিকাল
আপডেট : ১৮ মে, ২০২৫, ১২:০২ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের পর এনসিপি সামনে কী করতে চায়?

এল আর বাদল : সোমবার সন্ধ্যা। ঢাকায় এনসিপি কার্যালয়ের নিচে নেতা-কর্মীদের ভীড়। এর একটু আগেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সরকারের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন দলটির কর্মীরা।

একপর্যায়ে শীর্ষ নেতারা এলে ঘণ্টাখানেক ধরে চলে তাদের বক্তৃতা পর্ব। এরপর শুরু হয় মিষ্টিমুখ। নেতারা একে অপরকে মিষ্টি খাইয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত উদযাপন করেন। উপস্থিত কর্মীদের মধ্যেও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

এনসিপির নেতারা মনে করেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে এনসিপি নেতৃত্ব দিয়েছে। সরকারও দাবি মানতে 'বাধ্য হয়েছে'। এটা দল হিসেবে এনসিপির একটা অর্জন।বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে একটা চাঙা ভাব স্পষ্ট। ফ‌লে বিষয়টি নিয়ে দলের ভেতরে একটা চাঙা ভাব স্পষ্ট। -- সূত্র, বি‌বি‌সি বাংলা

মূলত এনসিপি নেতা হাসনাত যখন প্রথম আন্দোলনের সূচনা করেন, তখন থেকেই দল থেকে তাকে পূর্ণ সমর্থন দেয়া হয়। দলের শীর্ষ নেতারা সরাসরি গিয়ে আন্দোলনে অংশ নেন। পাশাপাশি জামায়াত-হেফাজতসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন যোগ দেয় আন্দোলনে।

তবে আন্দোলনে কয়েকটি পক্ষ থাকলেও এমন আলোচনা আছে যে, এর মাধ্যমে একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি নিজের সক্ষমতা ও প্রভাব দেখাতে চেয়েছে।

ফলে এই প্রশ্নও উঠছে যে, এই আন্দোলনের পথ ধরে এনসিপি সামনে কী করতে চায়? এছাড়া আন্দোলনে অংশ না নেয়া বিএনপিকে কোনও বার্তা দেয়া হলো কি-না সেটাও গুরুত্বপূর্ণ।

-- এনসিপির রাজনীতি কি শক্তিশালী হচ্ছে?--

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি -এনসিপি যাত্রা শুরু করে গত আটাশে ফেব্রুয়ারি। সেদিন ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে বেশ ঘটা করে আত্মপ্রকাশ ঘটে দলটির।

কিন্তু এরপর দল হিসেবে এনসিপি সেভাবে কোনও চমক দেখাতে পারেনি। সাংগঠনিক শক্তি, দক্ষতা, নেতৃত্বের ঐক্য, রাজনৈতিক কৌশল এমনকি কাজে-কর্মে দলটি কতটা পরিপক্কতা দেখাতে পারছে তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।

দল গঠনের আগেই নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দেখা গিয়েছিলো। দল গঠনের পরও শুরুতেই দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নেতাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ্যে চলে আসে।

দলটির কোনও কোনও নেতার গাড়িবহর নিয়ে বিশাল মিছিলের পর নেতাদের খরচ করা অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় অনেককেই। এই সময়ে দলটি তাদের নিজস্ব রাজনীতি নিয়ে জনগণের সামনে সেভাবে হাজির হতে পারেনি। ফলে দলের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

বিশেষ করে গেলো কয়েকমাসে নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে বিএনপি-জামায়াতের যে নিজস্ব রাজনীতি, তার বাইরে এনসিপির বক্তব্য কখনই রাজনীতির মূল আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি। গণপরিষদ নির্বাচন কিংবা নতুন সংবিধানের বক্তব্যও অনেকটা চাপা পড়ে যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন, সেই আন্দোলনের দাবি আদায় এবং আন্দোলনে বিভিন্ন দলকে পক্ষে আনতে পারা স্বস্তি দিচ্ছে এনসিপি নেতাদের।

-- ভবিষ্যতে কোন দাবি নিয়ে সামনে আসছে এনসিপি?--

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি অনেকেই করেছে। এনসিপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পক্ষ অতীতে এই দাবি সামনে এনেছে। তবে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ অনেকটা হঠাৎ করেই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বসে পড়ে আন্দোলন শুরু করেন সপ্তাহখানেক আগে।

পরে অন্য কয়েকটি দল ও সংগঠন আন্দোলনে যোগ দিলে সরকারের উপর চাপ তৈরি হয়। আল্টিমেটামের মুখে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত আসে সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে এরপর কী? রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপি কোন দাবি সামনে নিয়ে আসতে যাচ্ছে?

এমন প্রশ্নে দলীয় সুনির্দিষ্ট কোনও কর্মসূচি অবশ্য আপাতত নেই দলটিতে। তবে তাদের একটা দৃষ্টি আছে জুলাই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের দিকে। সরকার কী করে সেটা দেখতে চায় দলটি।

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "জুলাই ঘোষণাপত্র গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এই সময়ের মধ্যেই হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা দেখলাম, এখনও সেটা হয়নি। এটাকে আমরা সরকারের তরফ থেকে ঢিমে-তালে চলার চেষ্টা হিসেবে দেখি। অভ্যুত্থানের এতোদিন পরও অভ্যুত্থানকে অস্বীকৃত অবস্থায় রাখার কোনও মানে নেই।"

'সরকার এটার জন্য এখন ত্রিশ কার্যদিবস সময় নিয়েছে। এই সময়সীমার মধ্যেই যেন এটা আদায় করা সম্ভব হয়, সেজন্য আমাদের মাঠের কর্মসূচি থাকবে। তবে আমাদের আহ্বান থাকবে এই সময়সীমা অতিক্রম করার মতো অবস্থায় যেন সরকার না যায়। এর জন্যও আমরা কাজ করবো," বলেন আখতার হোসেন।

এর বাইরে গণপরিষদ নির্বাচন, সংস্কার, সংবিধান পুনর্লিখনের দাবি নিয়েও এনসিপি কাজ করতে থাকবে বলে জানান এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।

-- সামনে কতটা চ্যালেঞ্জ রয়েছে?--

এনসিপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দাবি নিয়ে মাঠে থাকার কথা বলছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, অন্য দলগুলোর সমর্থন ছাড়া এনসিপির একার পক্ষে মাঠে প্রভাব দেখানো কঠিন। আবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে এনসিপি যে এক ধরনের ঐক্য তৈরি করেছিলো, আন্দোলন শেষ হতে না হতেই সেখানেই নতুন করে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে বিশেষ করে জামায়াত ইস্যুতে।

ফলে এনিসিপি যদি পরবর্তীকালেও একইভাবে মাঠে নেমে চাপ প্রয়োগ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে তাহলে সেটা সব পক্ষের সমর্থন নাও পেতে পারে এমন মূল্যায়ন আছে রাজনীতিতে।

চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. সাব্বির আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, গণপিরষদ কিংবা সংবিধানের মতো বিষয়গুলোতে ঐক্য তৈরি করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, ঐক্য তৈরি করা যতটা সহজ, অন্য ইস্যুগুলোতে ততটা সহজ নয়। কারণ প্রতিটা বিষয়ে প্রতিটা রাজনৈতিক দলের স্বার্থ আছে। আপনি সংবিধান নিয়ে কথা বলবেন, এখানে বিএনপির রাজনীতির একটা বড় অংশ হচ্ছে সংবিধান নিয়ে। গণপরিষদ নিয়েও দলগুলোর ভিন্ন অবস্থান আছে।

মি. আহমেদের মতে, যেসব বিষয়ে মতভেদ আছে, সেগুলো নিয়ে চাপ প্রয়োগের মতো আন্দোলনে গেলে রাজনীতি সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে।

এসব বিষয়ে আলোচনার দরকার হবে। যদি আলোচনা ছাড়া এসব বিষয় নিয়ে কেউ আন্দোলনের পথে যায়, তাহলে এতে করে আমার মনে হয় রাজনীতিটা সাংঘর্ষিক হয়ে উঠতে পারে। আমার মনে হয়, ছাত্রদের দলও এটা জানে, বোঝে। সুতরাং সেভাবেই তারা নীতি ঠিক করবে, বলেন ড. সাব্বির আহমেদ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়